গৌতম ভট্টাচার্য: লিয়েন্ডার আদ্রিয়ান পেজ কি রাজনীতিতে যোগ দিয়ে আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন? মুম্বইয়ে লিয়েন্ডার ঘনিষ্ঠ এক সূত্র জানাচ্ছে, কংগ্রেস তাঁকে রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে। প্রস্তাবেই শুধু সীমাবদ্ধ নেই। রাহুল গান্ধীর সঙ্গে নয়াদিল্লিতে বৈঠকও হয়েছে তাঁর। এবার শুধু চূড়ান্ত মনস্থির করা বাকি।
লিয়েন্ডারকে যাঁরা চেনেন, তাঁদের জানা রাজনীতির চৌহদ্দিতে কখনও নেই তিনি। মানুষ হিসেবে একেবারে অরাজনৈতিক। তাঁদের পরিবারের সাতকুলেও কেউ কখনও রাজনীতিতে নেই। নিজে খেলা না পড়লে ক্কচিৎ নয়াদিল্লি গিয়েছেন। নেতাদের কাছে তো নয়ই। সিসিএফসি-র সবুজ মাঠ। মুম্বইয়ের ঘাসের কোর্ট বা সিডনি-লস অ্যাঞ্জেলেসের ঝাঁ চকচকে আড্ডাখানাতেই তিনি অনেক বেশি স্বচ্ছন্দ। ভারতে তাঁর এখনকার বাসস্থান মুম্বইয়ে ফোন করে জানা যাচ্ছে পেজ পরিবার এবং ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের কেউ কেউ এখনও নিরস্ত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। বলছেন, তোমার দ্বারা রাজনীতি হবে না। ওটা খুব কঠিন জায়গা। কেন স্বেচ্ছায় ঢুকতে যাবে? কেউ কেউ এমনও বুঝিয়েছেন, তুমি লিয়েন্ডার পেজ এত বছর ধরে গোটা ভারতের ব্র্যান্ড। টেনিস কোর্টে তেরঙ্গা ঝান্ডা আর তুমি সমার্থক। যুব প্লেয়াররা তোমায় আইকন হিসেবে দেখে। এমন ইন্সপিরেশনাল আইকন যে গোটা দেশের ঝান্ডা নিয়ে লড়াই করে। একটা নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলে যোগ দেওয়া মানে তো জনমানসে সেই ভাবমূর্তিটা কয়েক খাবলা হয়ে যাওয়া। সেই ঝুঁকি নেওয়া ঠিক হবে?
[জঙ্গি হামলা ভুলে পোশাক দেখাতে ব্যস্ত সানিয়া, নেটদুনিয়ায় বিতর্কের ঝড়]
লিয়েন্ডারকে বারবার চেষ্টা করেও ফোনে ধরা গেল না। অধরা মুম্বইয়ে থাকা ডক্টর ভেস পেজও। পেজ পরিবারের ঘনিষ্ঠরা অবশ্য সন্দিগ্ধ লিয়েন্ডার এ মুহূর্তে এত অভিমানী যে এত সব সতর্কবার্তাও মানবেন কি না সন্দেহ। প্রথমত কংগ্রেস তাঁকে যথেষ্ট সমাদর দিয়ে প্রস্তাব দিচ্ছে। স্বয়ং কংগ্রেসের সর্বাধিনায়ক তাঁকে ডেকে কথা বলেছেন। দুই, হালফিল তাঁর মনে হচ্ছে এত অ্যাচিভমেন্টের পরেও কোথাও গিয়ে যাবতীয় টেনিস-দক্ষতা সমেত তিনি অসহায়। আঠাশ বছর দেশের হয়ে খেলেছেন। শচীনের চেয়েও চার বছর বেশি। অলিম্পিক ইতিহাসে একমাত্র ভারতীয় যিনি টেনিস থেকে পদক এনেছেন। সর্বাধিক মিক্সড ডাবলস গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয়ের রেকর্ড আছে। ডেভিস কাপে ভারতের হয়ে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ জিতেছেন। ডেভিস ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি ডাবলস ম্যাচ জয়ের বিশ্বরেকর্ডের মালিক। সার্কিটে ডাবলসে জুড়ি হিসেবে এবং এককভাবে বিশ্বের এক নম্বর ছিলেন। বন্ধুরা মনে করেন ভারতীয় ক্রিকেটে তেণ্ডুলকরের মতোই লিয়েন্ডারের অবদান। টেনিসের শচীন বলা উচিত তাঁকে। অথচ তার অর্ধেক স্বীকৃতিও পাননি।
পঁয়তাল্লিশ বছরে পৌঁছেও নিজের ওপর বিশ্বাস হারাননি লিয়েন্ডার। এখনও র্যাকেট হাতে বিশ্বজোড়া ঘুরে বেড়ান। শুক্রবারই যেমন মুম্বই ছেড়ে বেরিয়ে গেলেন। কিন্তু ঘনিষ্ঠদের মনে হচ্ছে ইদানীং অসহায় বোধ করছেন। সবচেয়ে বড় ধাক্কা খেয়েছেন সাউথ ক্লাবে নিজের ধাত্রীভূমিতে ইতালির বিরুদ্ধে নির্বাচিত না হয়ে। মুম্বই থেকে এক লি-ঘনিষ্ঠ বললেন, এমন অপমানজনক দিন এত কন্ট্রিবিউশনের পর আসতে পারে লিয়েন্ডার দুঃস্বপ্নেও ভাবতে পারেননি। লিয়েন্ডার নিজে সত্যি কী ভাবছেন জানার উপায় নেই। ফোন না ধরা এবং কালেভদ্রে ওয়াটসঅ্যাপের জবাব দেওয়ার জন্য তিনি প্রসিদ্ধ। তাই তাৎপর্যপূর্ণ প্রশ্নের জবাব পাওয়া গেল না যে অসহায়তায় পড়ে রাজনীতিকে কি তিনি নতুন শক্তির আবাহন হিসেবে দেখছেন? নইলে রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার প্রস্তাব তো তাঁর সাধারণভাবে বিবেচনা করারই কথা নয়।
[সানিয়ার বদলে সাইনা বা সিন্ধুকে করা হোক তেলেঙ্গানার মুখ, দাবি বিজেপি বিধায়কের]
শেষ পর্যন্ত কী হবে ভবিষ্যৎ বলবে। পেয়ালা এবং ঠোঁটের মধ্যে এখনও দূরত্ব। পরিবার-বন্ধুবান্ধবের কথায় তিনি নিরস্ত হবেন? যাঁরা এখনও বুঝিয়ে যাচ্ছেন এমন স্পর্শকাতর সময়ে কোনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক হবে না। চারদিকে পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ। সেটা একটু ঠান্ডা হয়ে আসুক। তার পর না হয় ঠান্ডা মাথায় সিদ্ধান্ত নেবেন। এ কথা শুনবেন লিয়েন্ডার? শুনলে সিদ্ধান্ত নেওয়াটা পেছবে। আর যদি না শোনেন, তা হলে বোঝা যাবে রাজনীতির কোর্টে মানসিকভাবে নেমেই পড়েছেন। সার্ভ হয়ে গিয়েছে। শুধু ভলির অপেক্ষা। আর কে গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারে সেটা দক্ষিণ কলকাতার লোকসভা কেন্দ্র হবে না?
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.