ইংল্যান্ড ৩৫০/ ৭
রুট ৭৮, জেসন ৭৩, স্টোকস ৬২
ভারত ৩৫৬/৭
কোহলি ১২২, কেদার যাদব ১২০
সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক:
ধোনি যুগের পরিসমাপ্তি। কোহলি সাম্রাজ্যের পত্তন। ভারতীয় ক্রিকেটের এই অভূতপূর্ব সন্ধিক্ষণে প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ড। নেতা কোহলির অভিষেকের এর থেকে ভাল মঞ্চ যেন আর হতে পারে না। ভবিষ্যতের ইতিহাস সাক্ষী দেবে, কোন অগ্নিপরীক্ষায় জিতে শুরু হল একদিনের ক্রিকেটে কোহলির অধিনায়কত্বের ইনিংস।
ভারতীয় ক্রিকেটে দিনটা ছিল বেশ আবেগঘন। যে ধোনি দেশকে প্রায় সব সম্মান এনে দিয়েছেন, তিনি মাঠে থাকলেও আজ আর অধিনায়ক নন। স্বেচ্ছায় সে ভার তিনি অর্পণ করেছেন বিরাট কোহলির কাঁধে। আগামী বিশ্বকাপের জন্য দলকে তৈরি করতে হলে এখনই সময়। সেই নিরিখে শেষবেলাতেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন ক্যাপ্টেন কুল। তবু অধিনায়ক ধোনি যেন ভারতীয় ক্রিকেটপ্রেমীদের অভ্যাসে পরিণত হয়ে গিয়েছিলেন। নেতৃত্বের সে অভ্যাস ছড়িয়েছিল ধোনির শোণিতপ্রবাহেও। এদিন তার ঝলকও দেখা গেল। এক মুহূর্তের জন্য বোধহয় ভুলেই গিয়েছিলেন তিনি আর ক্যাপ্টেন নন। অধিনায়ক বিরাটের কল নেওয়ার আগেই ডিআরএস কল নিয়ে ফেলেন। তবে তিনি নেতৃত্ব থেকে দূরে সরে যাওয়ার পরও দল কেমন খেলে, তা এদিন চাক্ষুষ করলেন মহেন্দ্র সিং ধোনি।
পূর্ণাঙ্গ নেতা হয়ে ওঠার অভিষেক মঞ্চেই বিরাটকে অগ্নিপরীক্ষায় ফেলে দেন ইংল্যান্ড ব্যাটসম্যানরা। বলা ভাল ভারতীয় বোলারদের দুর্বলতাকে পুরোপুরি কাজে লাগিয়েছেন তাঁরা। রুট, জেসন, স্টোকসের দাপুটে ব্যাটিংয়ের উপর ভর করে ভারতের দিকে ৩৫১ রানের লক্ষ্যমাত্রা ছুড়ে দেয় ইংল্যান্ড। জবাবে ব্যাট করতে নেমে কোনওভাবেই গোছানো মনে হয়নি ভারতীয় দলকে। লোকেশ রাহুল, শিখর ধাওয়ানরা যখন ফিরে গেলেন তখন মনে হচ্ছিল কামব্যাকে পরিত্রাতা হয়ে উঠবেন যুবরাজ। কিন্তু এদিন যেন অতীত যুবরাজের দু একটা ঝলক দেখা গেল মাত্র। আগুনের ছোঁয়ায় অবশ্য ইংল্যান্ডের হাত পুড়ল না। তাঁকে ফিরিয়ে দেন স্টোকস। নেতৃত্ব ছেড়ে দেওয়ার পর একেবারে খোলা মেজাজে খেলতে পারবেন ধোনি, এমনটাই অনুমান ছিল ক্রিকেট বিশেষজ্ঞদের। শান দেবেন নিজের পারফরম্যান্সে, সকলেই এরকম ভাবছিলেন। এদিন হাত খুলে খেলা শুরুও করেছিলেন। কিন্তু ব্যর্থ হলেন। ফিরলেন মোটে ৬ রান করে। ভাগ্যিস এদিনও ফর্মে ছিলেন কোহলি। নেতা না থেকেও তিনি যে দায়িত্ব নিতেন, নেতা হয়েও সে দায়িত্ব পালন করলেন। সঙ্গে সঙ্গতে পাওয়া গেল কেদার যাদবকে। মূলত এদিন ভারতীয় দল যে
তাসের ঘরের মতো উড়ে যায়নি তা কেদার-কোহলি যুগলবন্দির খাতিরেই। একেবারে দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া মুহূর্তেই সাহসী হয়ে ঘুরে দাঁড়ান তাঁরা। ম্যাচ গড়ায় যেন রহস্য কাহিনীর সাসপেন্সের দিকে। কেন যে ক্রিকেটকে অনিশ্চয়তার খেলা বলা হয়, আজ বারেবারে তা প্রমাণ করছিলেন নেতা কোহলি ও কেদার যাদব। ঘরের মাঠে এদিন যথাযোগ্য আধিপত্য নিয়েই ইংরেজ বোলারদের শাসন করতে থাকেন কেদার। আজ যেন তাঁকে দেখেই ম্যাচ জেতার বিশ্বাস ফিরে পান কোহলি। ধোনি, যুবরাজ যে কাজে ব্যর্থ হলেন তাই করে দেখাতে থাকেন কেদার। যোগ্য সঙ্গত পেয়ে জ্বলে ওঠেন কোহলিও। ৯৩ বলে ছক্কা মেরে সেঞ্চুরিতে পৌঁছন ভারত অধিনায়ক। ৬৫ বলে সেঞ্চুরি হাঁকান কেদারও। একদিনের ক্রিকেটে এটি তাঁর দ্বিতীয় সেঞ্চুরি। কিন্তু এরপরই ছন্দপতন। ১২২ রান করে স্টোকসের ফলে ক্যাচ দিয়ে প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন কোহলি। ম্যাচ জেতানোর পুরো দায়িত্বই গিয়ে পড়ে কেদারের কাঁধে। পায়ে টান ধরলেও লড়াই চালাচ্ছিলেন। কিন্তু শেষমেশ ফিরতে হল ১২০ রানে। তবে সেই ভিতের উপর দাঁড়িয়েই ভারতকে জয়ের সরণিতে পৌঁছে দেন হার্দিক পান্ডে ও অশ্বিন।
(নেতৃত্ব যেন ছেড়েও ছাড়তে পারলেন না ধোনি…কী করলেন?)
সদ্য নেতৃত্ব ছাড়া ধোনি আজ অন্তত একটু হলেও স্বস্তি পাবেন। লড়াইয়ের যে মানসিকতা তিনি চারিয়ে দিয়েছিলেন সতীর্থদের মধ্যে , তা পৌঁছে গিয়েছে নেতা কোহলির টিমেও। স্বস্তিতে থাকলেন কোহলিও। সামনে আরও অনেক চড়াই উতরাই যে পেরতে হবে তা তাঁর থেকে ভাল আর কে জানেন! অধিনায়ক জীবনে হয়তো আরও সাফল্য পাবেন। কিন্তু পুণের এই সন্ধেটি যে তাঁর ব্যক্তিগত খাতায় সোনার অক্ষরে লিখে রাখবেন, সে কথা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.