সংবাদ প্রতিদিন-এর জন্য বিশেষ আইপিএল কলম লিখছেন কেকেআর অধিনায়ক৷ দু’টো কারণে গৌতম গম্ভীর-এর মনে হয়েছে সানরাইজার্স হায়দরাবাদ নামটা ওজনদার৷ এক, ওরা গতবারের চ্যাম্পিয়ন৷ দুই, আগেরবার ওদের কাছে হেরে কেকেআরের স্বপ্ন শেষ হয়েছিল৷
২০১১-তে একবার হিথরো এয়ারপোর্টে ব্রায়ান লারার সঙ্গে দেখা হয়েছিল৷ ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে সিরিজ খেলতে গিয়েছিলাম৷ হিথরোয় ল্যান্ড করে চোখের সামনে লারা৷ ভেবলে গিয়েছিলাম এমন নয়৷ তবে প্রকৃতিগতভাবে আমি মিতভাষী৷ যেচে আলাপ আমার দ্বারা ঠিক হয় না৷ আবার মনে মনে ভাবছিলাম, এমন সুযোগ জীবনে বারবার আসবে না৷ এগিয়ে গেলাম৷ হাত মিলিয়ে কুশল বিনিময় হল৷ আমি সুযোগের সদ্ব্যবহারে দেরি করলাম না৷ স্টান্স, হাই ব্যাকলিফ্ট, স্পিন সামলানো-সহ একাধিক ব্যাপারে একের পর এক প্রশ্ন পেড়ে ফেললাম৷ ডান হাতিদের ক্ষেত্রে কী হয় বলতে পারব না, তবে দু’জন বাঁ-হাতি মুখোমুখি হওয়া মানে ব্যাপারটা দু’খানা হাই এক্সটেনশন তারের পরস্পরকে ছোঁয়ার মতো৷ যেমন ধরুন, বস্টনের ফুটপাথে দুই ভারতীয়র আলাপ হল৷ আড্ডা দেওয়ার জন্য তাঁরা এত কিছু কমন পাবে যে সকাল থেকে রাত হয়ে যেতে পারে৷ যাই হোক, লারা টুকটাক পরামর্শ দিল৷ সব কিছু আমার মনে নেই৷ তবে শেষের একটা কথা এখনও ভুলতে পারিনি৷ লারা বলেছিল, “গৌতম, একটা কথা সব সময় মনে রাখবে৷ ক্রিকেটে ভাল দিনের থেকে খারাপ দিনের সংখ্যা বেশি৷ আর এই দর্শন কখনও পাল্টাবে না৷”
[তিন তালাকে মহিলাদের না বলার অধিকার নিয়ে সরব সুপ্রিম কোর্ট]
গত শনিবার মুম্বইয়ের বিরুদ্ধে ম্যাচ শেষে ইডেনের জায়ান্ট স্ক্রিনে আমি লারার হাসিমুখ দেখেছি৷ স্টেডিয়ামের পাবলিক অ্যানাউন্সমেন্ট সিস্টেমে লারার গলার আওয়াজও শুনতে পেলাম৷ ভবিতব্য তো অনেক আগেই ব্রায়ান লারার রূপে এসে আমাকে পাঠ পড়িয়ে গিয়েছিল৷ লারা যেন সেদিন ভীষণ জোরে হাসতে হাসতে ছ’বছর আগের কথাগুলো আরও একবার আওড়াচিছল৷ গোটা গ্যালারিজুড়ে শব্দগুলোর প্রতিধবনি৷ কেউ শুনতে পায়নি৷ আমি পেয়েছি৷ ‘গৌতম, ক্রিকেটে ভাল দিনের থেকে খারাপ দিন বেশি…..৷’
মঙ্গলবার চিন্নাস্বামীতে প্র্যাকটিসের পর দলের ব্যাটসম্যানদের সঙ্গে মিটিং করলাম৷ শেষ পর্যন্ত উইকেটে টিকে থাকার উপকারিতা আরও একবার ওদের বোঝাতে হল৷ বলতে হল, ক্রিকেটে অতিথি অভিনেতা বলে কিছু হয় না৷ পুরো স্ক্রিপ্ট নিজেদের নামে লিখতে হলে দলের প্রত্যেককে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করতে হবে৷ ওরা বুঝলে ভাল৷
সানরাইজার্স নামটা ওজনদার বলে মনে হচ্ছে দু’টো কারণে৷ ওরা গতবারের আইপিএল চ্যাম্পিয়ন৷ তা ছাড়া গতবার এই দলটার কাছে হেরে আমাদের স্বপ্ন শেষ হয়েছিল৷ হায়দরাবাদ তাই আমাদের কাছে এবার চ্যালেঞ্জের মতো৷ ডেভিড ওয়ার্নার একাই শো শেষ করে দিতে পারে৷ সঙ্গে শিখর ধাওয়ান, রশিদ খান, ভুবনেশ্বর কুমারদের নিয়েও ভাবতে বসতে হচেছ৷ ওহ্, আবার যুবরাজ সিং আছে তো৷ তবে পরিকল্পনার অনেকটা জুড়ে রেখেছি আফগান মহম্মদ নবিকে৷ অফ-স্পিনে ওর দারুণ নিয়ন্ত্রণ দেখে ওকে নিয়ে আলাদা করে ভাবতে বাধ্য হচ্ছি৷
চিন্নাস্বামীর উইকেটের উপর নাথান কুল্টার নাইলকে দলে ফেরানো নির্ভর করছে৷ তবে আমি ইশাঙ্ক জাগ্গিকে খেলানোর জন্য মরিয়া৷ ঘরোয়া মরশুমে ছেলেটা এত ভাল পারফর্ম করল৷ এর পর ওকে অন্তত একটা ম্যাচেও সুযোগ দিতে না পারাটা দুর্ভাগ্যজনক৷ এই কঠিন সিদ্ধান্তগুলোর জন্য মাঝে মাঝে অধিনায়কের চেয়ারটাকে আমার প্রচণ্ড ভারী বলে মনে হয়৷ এর মধ্যে আরও একটা ব্যাপার নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে৷ নারিনকে ওপেনে আনাটা ঠিক হচ্ছে? নাকি শুরুতে আমার যাওয়া উচিত! ব্যক্তিগতভাবে ওপেনার নারিনের ভূমিকায় আমি খুশি৷ একটামাত্র ব্যর্থতার জন্য নিজের সিদ্ধান্ত বদলানোর প্রশ্নই নেই৷ আমার মতে, নারিন জুয়াড়ি নয়৷ ও বুদ্ধিমান আক্রমণাত্মক ব্যাটসম্যান৷
এক বন্ধুর সঙ্গে মঙ্গলবার বিকেলে একটি অনাথ আশ্রমে গেলাম৷ আমাদের যাওয়ার ব্যাপারটা পূর্ব পরিকল্পিত ছিল না৷ জায়গাটা আমাদের হোটেল থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে৷ এমন জায়গাগুলোতে এলে আমি বা আপনি সব সময় নিজেদের দুঃখ, কষ্টগুলো ভুলে যাই, তাই না? মনে হয়, এমন কী কষ্টে আছি আমরা? পনেরো মিনিটের জন্য সেখানে থাকার কথা ছিল আমাদের৷ রয়ে গেলাম প্রায় দু’ঘণ্টা৷ বাচ্চাগুলোর সঙ্গে ক্রিকেট, ব্যাডমিন্টন খেললাম৷ টিভি দেখলাম৷ তার পর বিকেলের স্ন্যাক্স আর দুধ এল৷ ওটাতেও না বলতে পারলাম না৷
দিনের শেষে লারা আবার আমার চোখের সামনে হাসিমুখে ভেসে এল৷ এবার কিন্তু আমি মুচকি হেসে বললাম, লারা, জীবনে কিন্তু খারাপ দিনের থেকে ভাল দিন বেশি৷ লারার মুখখানা মুহূর্তে ভ্যানিশ হয়ে গেল৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.