আমরা সবাই ক্রিস গেইলের ব্যাটিং ভালবাসি৷ কি, ভালবাসি না? আমি কিন্তু ব্যক্তিগত ভাবে এই ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ক্রিকেটারের গোটা প্যাকেজটাকেই ভালবাসি৷ মার্কেটিংয়ের লোকজন, ব্রডকাস্টারের কাছে গেইল মানেই সবসময় একটা আনন্দের ব্যাপার এবং অবশ্যই আমাদের মতো ছোটখাটো মানুষজন আর ওর ভক্তদের কাছেও৷ যাদের কেউই গেইলকে টি-২০ ফরম্যাটে প্রথম ১০ হাজার রান করতে দেখে অবাক হয়নি৷ রাত একটার পর ওকে হয়তো আমি পাবে সঙ্গ দিতে পারব না৷ কিন্তু রাত দু’টোয় আমিই প্রথম টিভির সুইচ অন করব যদি সেই সময় গেইলের কোনও ম্যাচ লাইভ দেখায়৷ ও হল টি-২০ গ্রহের সেই ব্যাপারটা৷ যাকে কেন্দ্র করে এই গ্রহটা ঘোরে৷ বিশুদ্ধ এন্টারটেনার৷
বেশির ভাগ কোচ আমাকে টি-২০-তে রান তোলার ফর্মুলা শেখাতে গিয়ে বলেছেন, ৪-৩-২-১-এর কথা৷ যার মানে, রান করার প্রথম রাস্তা হল বাউন্ডারি মারার চেষ্টা করো৷ দ্বিতীয় উপায়, তিন রানের খোঁজ করা৷ তৃতীয় পথ, দু’রান করা৷ আর শেষ উপায় হল, কমপক্ষে সিঙ্গল নাও, যাতে বলটা ‘ডট’ না যায়৷ সেখানে গেইলের ফর্মুলা হল শুধু ছক্কা মারার কথা ভাব। এই জামাইকানের গেমপ্ল্যানের সত্যটা লুকিয়ে রয়েছে ওর সহজ-সরল ভাবনার মধ্যেই৷ ও শুরু করে কিন্তু ‘ভি’-এর মধ্যে শট খেলে৷ আর বেশিরভাগ স্ট্রোক হল হ্যান্ড-আই-এর বিশুদ্ধ বিবাহবন্ধন৷ এরপরই আসে গেইলের ব্যাটিংয়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইউএসপি- বিধবংসী শক্তি৷ওর মেনুতে ড্রাইভ, হুক, সূক্ষ্ম স্টিয়ার-টিয়ার নেই৷ ৩৬০ ডিগ্রি লোক না হয়েও গেইল হল গেইল৷ আমি প্রায়ই বলে থাকি রাহুল ভাই (রাহুল দ্রাবিড়) আমার ক্রিকেটজীবনে দেখা সবচেয়ে সমৃদ্ধ ক্রিকেটার৷ আর গেইল আমার জানা সম্ভবত একমাত্র ব্যাটসম্যান, যে কিনা নিজের শক্তির উপর সবচেয়ে নির্ভর করে৷
আমার নিজের ঘরে আরেকজন যে নিজেকে নতুন চেহারায় হাজির করেছে তার নাম ইউসুফ পাঠান৷ ২০০৭ সালের টি-২০ বিশ্বকাপে ওর আবির্ভাব ঘটেছিল বিগ হিটার হিসেবে৷ ভারতে এধরনের নামধাম রাতারাতি ঘটে যায়৷ আর কখনও সখনও ক্রিকেটাররা সেই নামযশের ভৃত্য হয়ে পড়ে৷ আমি দেখে গর্বিত যে, ইউসুফ ওর সেই বিগ হিটার মোড থেকে বেরিয়ে এসে বেশি বুদ্ধি করে স্ট্রোকপ্লে-তে মন দিয়েছে৷ ২০১৫ আইপিএলে ওর ব্যাটিং গড় ছিল ৪৪.৫৭ এবং পরেরবার ৭২.২৷ দিল্লির বিরুদ্ধে শেষ ম্যাচে ওর দায়িত্বপূর্ণ ব্যাটিং আমাদের ২১-3-এর চাপ থেকে বের করে এনেছিল৷ ইউসুফ প্রায়ই বলে থাকে, ওর পরিবর্তনের পিছনে আমাদের প্রাক্তন বোলিং কোচ ওয়াসিম আক্রমের ভূমিকা আছে৷
শুক্রবার আমরা ইডেনে গুজরাট লায়ন্সের বিরুদ্ধে খেলব৷ টুর্নামেন্ট এখন সেই জায়গায়, যখন ইউসুফ ওর ব্যাটিংয়ের মানকে পরের লেভেলে তুলে নিয়ে যেতে পারে৷ এ নিয়ে ওর সঙ্গে কথাও বলেছি৷ আর পাঠান হেসে উত্তর দিয়েছে, “দেখ লেঙ্গে ইয়ার৷” হ্যাঁ, আমরা ব্যাটিং অর্ডারের উপরের দিকে কিছু কম্বিনেশন নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছি৷ জানি না, এ ব্যাপারে আমি কিছুটা জুয়া খেলছি কি না৷ দেখা যাক, আমার দুই ‘লার্নেড’ সতীর্থ জাক কালিস ও সাইমন কাটিচ কী বলে! একেক সময় মনে হয়, আমার ভেতর যেন গেইল-এফেক্ট চলছে৷
(দীনেশ চোপড়া মিডিয়া)
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.