আইপিএলে একমাত্র সংবাদ প্রতিদিনের জন্য লিখছেন গৌতম গম্ভীর৷ কেকেআর অধিনায়ক জানালেন, আসন্ন হায়দরাবাদ ম্যাচে বেশ কয়েকটা কড়া সিদ্ধান্ত নিতে চলেছেন তিনি৷
মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের বিরুদ্ধে আমার টিম যা খেলল তারপর সত্যিই জানি না কী বলা উচিত৷ আপনাদের কাছে শুধু ক্ষমাই চাইতে পারি আমি৷ ক্রিকেটজীবনের চড়াই-উতরাই আমাকে অনেক জ্বালা ধরানো হারের মুখে ফেলেছে৷ কিন্তু শনিবারের ইডেন গার্ডেন্সের হারটা সবচেয়ে জঘন্য৷ আমরা দু’বারের আইপিএল চ্যাম্পিয়ন টিম৷ আমাদের টিমে বেশ কয়েকজন দুর্দান্ত ভারতীয় ব্যাটসম্যান রয়েছে৷ তার উপর আমরা নিজেদের ঘরের মাঠে খেলছিলাম৷ ম্যাচে আমরা কর্তৃত্বও ছিল আমাদের৷ কিন্তু তার পরেও হেরে শেষ করতে হল৷ আমদের দরকার ছিল ক্রিকেটীয় চেতনার৷ প্রয়োজন ছিল নিজেদের শান্ত রাখা৷ আর সব কিছুর উপরে দরকার ছিল বেগুনি জার্সির গর্বটাকে অনুভব করা৷ দুঃখের হল, সে সবের একটাও দেখতে পাওয়া যায়নি৷
টিমমেটদের একের পর এক আত্মহত্যা করতে দেখে বিধ্বস্ত লাগছিল৷ বল পিছু এক রানের একটু বেশি প্রয়োজন ছিল আমাদের৷ সব কিছু আমাদের দিকেই ছিল৷ রাতের দিকে ইডেনে এমনিতেই শিশির পড়ে৷ পিচেও কোনও আতঙ্ক ছিল না৷ স্টেডিয়াম জুড়ে যে চিৎকারটা উঠছিল, সেটাও কেকেআরের জন্য৷ এর পর তো আমাদের কাছে ম্যাচটা কেকওয়াক হওয়া উচিত ছিল৷ উচিত ছিল, প্রথম দুইয়ে শেষ করে ইডেন ছাড়া৷ তার বদলে আমরা কী করলাম? না, বারবার বড় শটের দিকে গিয়ে ম্যাচটা হেরে বসলাম। কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে ভয় পাই না আমি৷ কিন্তু আমাদের কোনও কোনও ব্যাটসম্যান যে রকম গা ছাড়া মনোভাব দেখিয়েছে, তা মেনে নেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়৷
আর এই গা ছাড়া মনোভাব কখন আসল? না, সাপোর্ট স্টাফকে দিয়ে দু’বার মেসেজ পাঠানোর পর৷ বলার পর যে, তাড়াহুড়োর কোনও প্রয়োজন নেই৷ এমনকী প্রথম স্ট্র্যাটেজিক ব্রেকের সময় কালিস এবং কাটিচ ব্যাটসম্যানদের বোঝায় যে, আকাশে শট মারারই দরকার নেই৷ ম্যাচ শুরুর আগেও টিম মিটিংয়ে বলা হয়েছিল যে, আমরা এই ম্যাচটা একজন কম ব্যাটসম্যান নিয়ে খেলছি৷ তাই প্রথম ছ’জনকে অধিকাংশ দায়িত্বটা নিতে হবে৷ যার মানে হল, রান তাড়া করার সময় অন্তত একজন ব্যাটসম্যান ষোলো-সতেরো ওভার পর্যন্ত থাকবে৷ কিন্তু দেখুন আমরা কী করলাম? ম্যাচ শেষের পর আমাদের ড্রেসিংরুম এক কথায় নিস্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল৷ কেউ কেউ তো কেঁদেও ফেলল৷ ওদের দুঃখটা আমি বুঝি৷ কিন্তু এই পরিস্থিতির জন্য আমাদের নিজেদেরই দায় নিতে হবে৷ দোষ নিজেদেরই দিতে হবে৷
শাহরুখ ভাইয়ের সঙ্গে দেখা হল ম্যাচের পর৷ দেখলাম, উনি সাধারণত যে রকম চনমনে থাকেন, সে রকমই৷ খারাপ কিছু বললেন না৷ যা ভেতরে ভেতরে আমাকে আরও রক্তাক্ত করে দিচ্ছিল৷ মনুষ্য স্বভাবই হল, সবার সামনে ভুল কিছু করলে আপনি চাইবেন বকাঝকা খেতে৷ তার পর পুরো ব্যাপারটাকে ঝেড়ে ফেলে এগিয়ে যেতে৷ কিন্তু শাহরুখ ভাই একটাও নেগেটিভ কথা বললেন না৷ যার মানে, উনি ভেতরে ভেতরে গুমরোচ্ছিলেন৷ রবিবার সম্ভবত এই আইপিএলের সবচেয়ে লম্বা দিন গেল৷ আইপিএলের দশ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে দুপুরে পার্টি রেখেছিল কেকেআর৷ যেখানে সমর্থক থেকে মালিক, প্লেয়ার, স্পনসর, সবাই ছিলেন৷ কিন্তু ব্যাঙ্কোয়েট হলে হাসি, নাচ-গানের মধ্যে বসেও আমি কিছুতেই যেন শনিবারের ম্যাচটা থেকে বেরোতে পারছিলাম না৷
বুধবার বেঙ্গালুরুতে সানরাইজার্স হায়দরাবাদ ম্যাচে আমাকে কিছু কড়া সিদ্ধান্ত নিতে দেখবেন৷ সিদ্ধান্তগুলো টিম কম্পোজিশন নিয়ে৷ পরিষ্কার বলে দিচ্ছি, আমি কোনও নাম দেখব না৷ জেতার খিদে, টিমের প্রতি গর্ব আর লড়ার ইচ্ছেই এ বার ঠিক করবে কে আসল নাইট আর কে নয়।
(দীনেশ চোপড়া মিডিয়া)
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.