আজ নিজেদের ডেরায় প্রথম ম্যাচ কেকেআরের৷ পাঞ্জাবের ধারাবাহিকতা, সুপারম্যান ঋদ্ধিমান, লিনের অনুপস্থিতি, এসব কোনওটাই ভাবাচ্ছে না ক্যাপ্টেন গৌতম গম্ভীর-কে৷ নাইট অধিনায়কের ভাবনা, শিশির অযাচিত প্রভাব ফেলবে টসে৷ আর টস নিয়ন্ত্রণ করবে বুধবারের ম্যাচ৷
হাতে কেউ সাদা পাতা আর একখানা পেনসিল ধরিয়ে দিলে আমার মাথায় একটাই ছবি ঘুরপাক খায়৷ সূর্য উঠছে দু’টি পাহাড়ের মাঝ দিয়ে৷ পাতার বাঁদিকে একটি গাছ, ডানপাশে একটি ছোট্ট কুঁড়ে ঘর৷ ও হ্যাঁ, মাঝখান দিয়ে একটা নদী বয়ে যায়৷ অনেক চেষ্টা করে এর থেকে বেশি কিছু কখনও আঁকতে পারিনি৷
এর পরও যদি বলি, স্কুলে পড়াকালীন আমি কখনও আঁকার ক্লাস মিস করিনি, বিশ্বাস করবেন? আসলে আঁকার প্রতি আমার ভালবাসা ততটা ছিল না৷ আসলে আমাদের স্কুলের আঁকার ম্যাডাম ছিলেন রূপকথার পরীর মতো সুন্দরী৷ আমরা ওঁকে মিস মধু বলে ডাকতাম৷ ওঁর মুখের সঙ্গে অভিনেত্রী মৌসুমি চট্টোপাধ্যায়ের অনেকটা মিল ছিল৷ পুরোটা না হলেও হাসিটা তো বটেই৷ এবার বুঝতে পারলেন তো, কেন আঁকার ক্লাস আমি মিস করতাম না! মিস মধু আবার আমাকে খুব স্নেহ করতেন৷ আর্ট ক্লাসে উনি কখনও আমাকে আটকে রাখেননি৷ সব সময় ক্রিকেট খেলতে যাওয়ার জন্য ছুটি দিতেন৷ তাই মিস মধু ধীরে ধীরে আমার ফেভারিট হয়ে উঠেছিলেন৷
জানি না মিস মধু এখন কোথায় রয়েছেন৷ শেষবার খোঁজ নিয়ে জেনেছিলাম, উনি নৈনিতালে শিফট করেছেন৷ তবে ওঁর সঙ্গে এখন যোগাযোগের কোনও রাস্তা নেই৷ অবশ্য সেটা খাতায়-কলমে৷ মঙ্গলবার আমি মনে মনে ওঁকে প্রচণ্ড মিস করেছি৷ কেকেআরের টিম অ্যাক্টিভিটির দৌলতে এদিন আমাদের আর্ট ক্লাস হল৷ পুরনো স্কুল, আর্ট ক্লাস বাঙ্ক, মিস মধুর স্নেহ, চোখের সামনে আবছা করে ভেসে উঠল৷
আটটা দলে ভাগ হয়ে আটটা টেবিলে বসে পড়লাম আমরা৷ বিশালাকার একটা ছবি৷ সেটার টুকরো করে আটটা ভাগ করা হবে৷ এবার আমাদের সেই আটটা টুকরো এঁকে ছবিটাকে চেহারা দিতে হব৷ এটাই টাস্ক ছিল৷ মুখে হাসি আর হাতে তুলি নিয়ে আমরা আটটা টেবিলে ভাগ হয়ে গেলাম৷ দু’টো রং দেওয়া হয়েছিল৷ লাল আর নীল৷ কখনও কখনও দু’টোকে মিশিয়ে আমাদের কেকেআরের সিগনেচার রং বেগুনি বানিয়ে নিতে হল৷ টাস্ক শেষ করলাম সবাই মিলে৷ আটটা টুকরো মিলে বিরাটাকার সেই ছবিটা নতুন চেহারা পেল৷ টিমগেম সফল৷
আইপিএলের মতো চ্যালেঞ্জিং টুর্নামেন্টের মাঝে এই ধরনের অ্যাক্টিভিটির প্রয়োজন রয়েছে৷ শুধুমাত্র টিম বন্ডিং তৈরির জন্য নয়৷ ম্যাচের টেনশনের আগে এগুলো দলের সবাইকে চাঙ্গা করে রাখে৷ তা ছাড়া নিজের দলের অনেকের সম্পর্কে ধারণা হয়৷ এই যেমন, আঁকার টাস্ক চলাকালীন নাথান কুল্টার নিলকে হাসতে দেখলাম৷ মাঝে মাঝে মজাদার চুটকি বলছিল৷ ওকে এমন কখনও দেখিনি৷ কেকেআরে ও কিন্তু সব থেকে চুপচাপ৷ আবার এটাও দেখলাম, দলের নতুন সদস্য ঋষি ধাওয়ান পারফেক্ট অলরাউন্ডার৷ তুলি হাতেও ও প্রচণ্ড অ্যাক্টিভ৷ তবে ওঁর বাগদত্তা দীপালির পারফরম্যান্স দেখেও আমি অবাক৷
ইডেন থেকে সন্ধ্যাবেলা হোটেলে এসে ‘সংবাদ প্রতিদিন’-এর জন্য এই কলম লিখতে বসলাম৷ আপনারা সবাই হয়তো লক্ষ্য করেছেন, ইডেনের উইকেট আগের থেকে অনেক বদলেছে৷ উইকেটে এখন প্রচুর ঘাস৷ পেসাররা তাতে সুবিধা পাবে৷ তবে উইকেটের ঘাস নিয়ে ভাবছি না৷ ভাবছি, শিশির ফ্যাক্টর নিয়ে৷ এই একটা ব্যাপার টসের উপর অযাচিত প্রভাব ফেলে যায়৷ প্রকৃতির বিরুদ্ধে লড়াই করার ক্ষমতা আমাদের নেই৷ তাই শিশিরের বিরুদ্ধে কী করে লড়ব৷ আগে ব্যাট করলে ভাল হবে নাকি বল৷ এসব চিন্তায় একটু চাপে আছি আর কী!
ক্রিস লিনের স্টেটাস জানার জন্য আপনারা অপেক্ষা করছেন, জানি৷ আমাদের ফিজিও অ্যানড্রু লিপাস ওকে সুস্থ করে তুলতে দিন-রাত এক করছে৷ তার পরও আপনাদের নিশ্চিতভাবে বলতে পারছি না, লিনকে কবে পাব৷ ওকে মাঠের বাইরে দেখতে ভাল লাগে না৷ চোট সত্ত্বেও ও কিন্তু দলের প্রতিটা অ্যাক্টিভিটিতে অংশ নেয়৷ মঙ্গলবার আঁকার ক্লাসেও যেমন ছিল৷ এমন একজন টিম ম্যানকে কার বাইরে দেখতে ইচ্ছা করে বলুন? তবে ব্যাটসম্যান লিনকে একশোয় নব্বই দিলেও আঁকার ক্লাসে ওকে দশের বেশি দেওয়া যাবে না৷ আমার থেকেও খারাপ আঁকে৷ আসলে ওর জীবনে কোনও এক মিস মধুর ক্লাস ছিল না তো!
(দীনেশ চোপড়া মিডিয়া)
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.