Advertisement
Advertisement

বাইচুং তৃণমূল ছাড়তেই টুইট রিজিজুর, নয়া রাজনৈতিক সমীকরণের জল্পনা

বাইচুংয়ের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানালেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী।

Kiren Rijiju lauds Bahichung Bhutia after his resignation from TMC 
Published by: Sangbad Pratidin Digital
  • Posted:February 26, 2018 12:36 pm
  • Updated:February 26, 2018 12:47 pm  

সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: আনুষ্ঠানিকভাবে তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে সবরকম সম্পর্ক ছিন্ন করলেন প্রাক্তন ফুটবলার বাইচুং ভুটিয়া। সোমবার টুইট করে তিনি এই সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করেন একদা ময়দানে পাহাড়ি বিছে নামে খ্যাত এই ফুটবলার। বাইচুং তৃণমূল ছাড়ছেন, এই খবরে খুশির হাওয়া বিজেপিতে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের রাষ্ট্রমন্ত্রী কিরেণ রিজিজু নিজের উচ্ছ্বাস চেপে রাখতে পারেননি। বাইচুং টুইট করার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই তিনি আর একটি টুইট করে এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। রিজিজুর টুইটটি আবার ‘লাইক’ করেছেন আর এক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও রাজ্যসভার সাংসদ বিজয় গোয়েল।

[আনুষ্ঠানিকভাবে তৃণমূল ছাড়লেন বাইচুং ভুটিয়া]

রিজিজু লিখেছেন, ‘ফুটবল আইকন ও প্রাক্তন জাতীয় দলের অধিনায়ক বাইচুংয়ের পদত্যাগ করার সিদ্ধান্ত স্বাভাবিক। তিনি আমাকে জানিয়েছিলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে তিনি সম্মান করলেও দলে এই মুহূর্তে মানিয়ে নিতে পারছেন না।’ রিজিজু এও জানিয়েছেন, তাঁর কাছে এসে বাইচুং ফুটবল ও সিকিমের সার্বিক উন্নয়নের চিন্তাভাবনা প্রকাশ করেন। ‘বাইচুংয়ের ভবিষ্যতের জন্য রইল আমার শুভ কামনা।’, টুইট রিজিজুর। বাইচুংয়ের পদত্যাগ ও বিজেপির উচ্ছ্বাস কিন্তু রাজনৈতিক মহলে এক নয়া সমীকরণের ইঙ্গিত দিয়েছে। শোনা যাচ্ছে, বাংলা ছেড়ে সিকিমের শাসক দল সিকিম ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট(এসডিএফ)-এ যোগ দিতে পারেন তিনি। এমনকী, দলের সুপ্রিমো ও সিকিমের মুখ্যমন্ত্রী পবন চামলিংয়ের সঙ্গে তাঁর কথাবার্তা একরকম চূড়ান্তই হয়ে গিয়েছে। সিকিম থেকে এনডিএ জোটের শরিক এডিএফের প্রার্থী হিসাবে আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে লড়তে পারেন বাইচুং। বা সিকিম থেকে রাজ্যসভায় প্রার্থী হতে পারেন। তবে রাজ্যসভার ভোট ২৩ মার্চ। যে ৫৮টি আসনে ভোট হবে সেখানে সিকিমের কোনও আসন নেই। সেক্ষেত্রে পরে খালি হলে অবশ্য আলাদা কথা।

Advertisement

২০১১-য় পেশাদার ফুটবল থেকে অবসর নেন ‘সিকিমিজ স্নাইপার’ বলে পরিচিত বাইচুং। সিদ্ধান্ত নেন রাজনীতির ময়দানে নামবেন। সেই মতোই যোগ দেন তৃণমূল কংগ্রেসে। ২০১৩-তে আনুষ্ঠানিকভাবে তৃণমূলে যোগ দিয়ে বাইচুং বলেন, আরও বেশি ক্রীড়াবিদদের রাজনীতিতে যোগ দেওয়া দরকার। ২০১৪-তে দার্জিলিং থেকে লোকসভা নির্বাচনে তাঁকে প্রার্থী করেন দলের সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু বিজেপির প্রার্থী এসএস আহলুওয়ালিয়ার কাছে ১,৯৬,৭৯৫ ভোটে পরাজিত হন। ২০০৮-তে ‘পদ্মশ্রী’ সম্মানে ভূষিত হন বাইচুং। ২০১৪-তে পান বঙ্গভূষণ। ফুটবল কেরিয়ারের মধ্যগগনে খেলেছেন মোহনবাগান ও ইস্টবেঙ্গলের মতো দলে। কিন্তু তাঁর রাজনৈতিক কেরিয়ার কখনই ফুটবলের মতো মসৃণ হয়নি। ২০১৬-তে ফের একবার তাঁর উপর আস্থা রাখেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শিলিগুড়ি থেকে তৃণমূলের টিকিটে দাঁড়ান বাম প্রার্থী অশোক ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে। সেবার ১৪, ০৭২ ভোটে হেরে দায়ী করেন দলের অন্তর্দ্বন্দ্বকে। রীতিমতো সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে শিলিগুড়ির বিভিন্ন ওয়ার্ডে প্রাপ্ত ফলাফল বিশ্লেষন করে বাইচুং দেখান, মেয়র অশোক ভট্টাচার্য যে ওয়ার্ড থেকে নির্বাচিত, সেই ৬ নম্বর ওয়ার্ডেও ৩৩ ভোটে লিড নিয়েছে তৃণমূল। দাবি করেন, মোট ৩০টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত শিলিগুড়ি বিধানসভার ২০টি ওয়ার্ডে বিগত পুর নির্বাচনের তুলনায় ভোট বেড়েছে তৃণমূলের। কিন্তু ১০টি ওয়ার্ডে ভোট কমেছে শাসক দলের। আর এই ১০টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৭টি তৃণমূলেরই দখলে। দলীয় কাউন্সিলরদের ওয়ার্ডে ভোট এতটা কেন কমল, তা নিয়ে সেবার প্রশ্ন তুলে দেন বাইচুং। সরাসরি দলের স্থানীয় নেতৃত্বের একাংশের দিকে আঙুল তুলেছেন তিনি।

[‘রাজ্যপাল ও সরকারের বিবাদের কারণেই পড়ছে রাজ্যের শিক্ষার মান’]

তবে বাইচুংয়ের রাজনৈতিক কেরিয়ারের সম্ভবত শেষ পেরেক গোর্খাল্যান্ড আন্দোলনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরোধিতা করা। পাহাড়ে আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়ে বাইচুং বলেছিলেন, ‘ব্যক্তিগতভাবে আমি চাই পৃথক গোর্খাল্যান্ড হোক।’ দার্জিলিং ও কালিম্পং কোনওদিনই পশ্চিমবঙ্গের অংশ ছিল না। জিটিএর মতোই আন্দোলনের ফলে এক না এক সময় রাজ্য সরকার পৃথক গোর্খাল্যান্ড রাজ্যের দাবিকে মেনে নেবে বলেও আশাপ্রকাশ করেন তিনি।’ বাইচুং জানান, দীর্ঘ তিন দশক পাহাড়ের মানুষের এই দাবির সঙ্গে রাজ্য সরকারের অনেক আমলা, শাসক দলের অনেক শীর্ষ নেতারও মত রয়েছে। কিন্তু, তৃণমূলের ভয়ে কেউ মুখ খুলতে পারছেন না। আর এরপরই দলের শীর্ষ নেতৃত্বের বিরাগভাজন হন বাইচুং। দলীয় অনুষ্ঠানেও তাঁকে সেভাবে দেখা যাচ্ছিল না। সূত্রের খবর, সিকিমের শাসক দল সিকিম ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট(এসডিএফ) সুপ্রিমো, মুখ্যমন্ত্রী পবন চামলিংয়ের সঙ্গে তাঁর কথাবার্তা একরকম চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছে। সিকিম থেকে এনডিএ জোটের শরিক এসডিএফের প্রার্থী হিসাবে আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে লড়তে পারেন বাইচুং। ভুললে চলবে না, এসডিএফ কিন্তু বিজেপির জোটসঙ্গী। সেক্ষেত্রে, এসডিএফ-এ যোগ না দিয়ে বাইচুং সরাসরি বিজেপিতেও যোগ দিতে পারেন! এমন জল্পনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। বস্তুত, বিজেপির শীর্ষ নেতারা আজ যেভাবে প্রকাশ্যে উচ্ছ্বাস চেপে রাখেননি, তাই দেখে কিন্তু একথা মনে হতে বাধ্য। অন্তত এমনটাই বলছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ।

[জঙ্গিদের গুলিতে শহিদ দুই পুলিশকর্মী, নিয়ন্ত্রণরেখায় যুদ্ধের আতঙ্ক]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement