জর্ডন: ২ (শাফি, হাদাদ)
ভারত: ১ (নিশুকুমার)
সঞ্জয় সেন: মাঠে নেমে খেলা তো বটেই। এরকম কোনও ফুটবল ম্যাচ দেখাটাও বেদনাদায়ক। কীরকম প্রতিকূল পরিস্থিতি ভাবুন একবার! প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ৩২ ঘণ্টা আটকে থেকে আমাদের ছেলেরা আম্মানে পৌঁছায়। বিদেশের মাঠে একটাও প্র্যাকটিস সেশন পায়নি দল। মাঠের পেস-বাউন্স জানতে পারেনি।
ম্যাচের দিন সকালে জর্ডনে পৌঁছনো ক্লান্ত সাত ভারতীয় ফুটবলারদের মধ্যে একমাত্র সুনীল পাসি ছিল বেঞ্চে। টিভিতে দেখলাম অনেক দর্শকের গায়েই মোটা জ্যাকেট। মাঠে দু’জন ফুটবলারকে দেখছিলাম গ্লাভস পরে খেলতে। মানে ম্যাচের সময় যথেষ্ট ঠান্ডা ছিল। বৃষ্টি আর না পড়লেও মাঠটা মনে হয় পুরো শুকনো ছিল না। ভারতীয় ডিফেন্ডাররা কয়েকবার মাঠে স্লিপ করে পড়েও গেল।
তারপরে প্রথমার্ধের মাঝামাঝি ওরকম অদ্ভুত গোল হজম করা! কমেন্ট্রিতে শুনলাম জর্ডন গোলকিপার আমের শাফির দেশের জার্সিতে ১২৮ নম্বর ম্যাচে এটাই প্রথম গোল। হবেই তো। গুরপ্রিত সিং ম্যাচের আট মিনিটেই অমন সুন্দরভাবে পেনাল্টি কিক বাঁচানোর পরেও সেকেন্ডের ভগ্নাংশের ফোকাসের অভাবে একটা অদ্ভুত গোল খেয়ে বসল। পেনাল্টি বাঁচিয়ে যেমন দলের মনোবল বাড়িয়ে ছিল, তেমনই বাজে গোল খেয়ে সতীর্থদের মনোবলে চিড়ও ধরিয়ে দেয় এদিনের ভারত অধিনায়ক। গুরপ্রিতই উঁচু ফ্রিকিক নিয়ে বল পাঠিয়েছিল জর্ডন কিপারের কাছে। যে বলে পালটা উঁচু শট নেয় গোলকিপার শাফি। বলটা সোজা ভারতের গোলের সামনে একটা ড্রপ খেয়ে অত লম্বা গুরপ্রিতেরও মাথা টপকে জালে জড়িয়ে যায়। অহেতুক এতটাই গোললাইন থেকে সেসময় এগিয়ে ছিল গুরপ্রিত।
Catch the highlights of India’s clash against Jordan today in which debutant @nishukumar22 found the back of the net.#BackTheBlue #JORIND #AsianDream pic.twitter.com/TXQjpfqHPD
— Indian Football Team (@IndianFootball) November 17, 2018
এদিনের ম্যাচে ছিলেন না সুনীল ছেত্রী-সন্দেশ জিংঘান। তাতেও সামনে কেবল অনেকটা ফলস নাইন স্টাইলে অনিরুদ্ধ থাপাকে রেখে আলট্রা ডিফেন্স ফুটবল খেলছিল দল। ডিফেন্সে সালাম-আনাস জুটি এই প্রথম খেলল। শেষ আটচল্লিশ ঘণ্টায় আচমকা উদ্ভুত পরিস্থিতিতে তা ছাড়া হয়তো আর অন্য উপায়ও ছিল না কোচ স্টিফেন কনস্ট্যানটাইনের। তবে এর মধ্যেও তাঁর দল গড়া নিয়ে প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে। সুমিত পাসিকে কোচ সেই নামালেনই যখন, তখন কেন শুরুতে নয়? অনিরুদ্ধর তুলনায় যে ছেলেটা জেনুইন স্ট্রাইকার। লেফটহাফে আবার খেলল জেরির মতো একজন উইং ব্যাক। অথচ জেনুইন লেফট হাফ আশিক কুরিয়ান বসে থাকল!
তারপরেও আমি নিজে একজন কোচ হিসেবে জানতাম, হাফটাইমে ভারতীয় কোচের পেপটক একটা কিছু থাকবেই। আর সেটা দ্বিতীয়ার্ধে প্রীতম-প্রণয়-বিনীতদের মধ্যে একটা মরিয়া ভাব আনলেও আনতে পারে। তেমনটাই হল। হাদাদ জর্ডনকে এগিয়ে দিলেও বিনীত রাইও একটা সহজ সুযোগ পায়। শুভাশিস বসু আবার একটা গোললাইন ক্লিয়ার করল। এবং শেষমেশ নিশুকুমারের সেই ১-২ করা। জাতীয় দলের জার্সিতে প্রথমবার নেমে নিজের মাত্র দ্বিতীয় টাচেই আন্তর্জাতিক গোল করল নিশু। এমন প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যে এরকম বেদনাদায়ক ম্যাচেও ভারতীয় ফুটবলের জন্য আলোর সন্ধান দিল নিশু!
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.