হোসে রামিরেজ ব্যারেটো: কলকাতা ডার্বি।
শব্দবন্ধটা এখনও আমার শিরায়-শিরায় অন্যরকম উত্তেজনার ঝড় তোলে। আমি সাম্বার দেশের লোক। ছোট থেকেই সবুজ মাঠে ফুটবল ক্লাবের এই বিশেষ দ্বন্দ্ব দেখছি। ফ্লামেঙ্গো-ফ্লুমিনেন্সে, স্যান্টোস-সাও পাওলোর ডার্বির কথা ব্রাজিলের গণ্ডি ছাড়িয়ে গোটা ফুটবল বিশ্বেই ছড়িয়ে পড়েছে। ফলে ডার্বি আমার কাছে নতুন কিছু নয়।
কিন্তু কলকাতা ডার্বি (Derby) একেবারেই আলাদা। প্রায় আড়াই দশক আগে প্রথমবার এই শহরে এসেছিলাম। তখন থেকেই দেখছি। বড় ম্যাচ নিয়ে সমর্থকদের উন্মাদনায় এখনও পর্যন্ত খুব একটা বদল হয়নি। এবারও ব্যতিক্রম নয়। আমি তো কলকাতা থেকে এতদূরে বসেও সেই উত্তাপ টের পাচ্ছি। সোশ্যাল মিডিয়ার পোস্ট থেকে আমার ইনবক্স- উপচে পড়ছে সমর্থকদের পোস্টে। এরমধ্যে মোহনবাগান সমর্থকরা যেন শনিবারের ম্যাচ নিয়ে একটু বেশিই উত্তেজিত। হওয়াটাই স্বাভাবিক।
শেষ আট সাক্ষাতেই ইস্টবেঙ্গলকে (East Bengal) টেক্কা দিয়েছে মোহনবাগান (Mohun Bagan)। তার উপর এবার দলটাও দারুণভাবে তৈরি করেছে মোহনবাগান ম্যানেজমেন্ট। কোচ থেকে ফুটবলার– সবটাই ঝকঝকে। মোহনবাগানের প্রাক্তনী হিসাবে নয়, একজন ফুটবলার হিসাবে এই কথাটা বলছি। দেশের সেরা তারকাদের অধিকাংশই এখন মোহনবাগানে। বিদেশিরাও সব হাইপ্রোফাইল। িবশেষত, জেসন কামিংস কেমন খেলে সেদিকে সবার নজর থাকবে। আসলে এএফসি কাপের জন্য তৈরি হচ্ছে দলটা। সেখানে ইস্টবেঙ্গল নতুন করে দলটা তৈরি করছে। ডুারান্ড কাপে বাংলাদেশ আর্মির বিরুদ্ধে যে দলটা খেলল, তারমধ্যে মাত্র দু’জন গতবারের স্কোয়াডের– মহেশ সিং আর লালচুংনুঙ্গা। বাকিরা ভারতীয় ফুটবলে চেনা মুখ হলেও আগে একসঙ্গে খেলেনি। ফলে ওরা সবে একটা দল হয়ে উঠছে। সেখানে মোহনবাগান প্রায় গতবারের স্কোয়াড নিয়েই নামছে, হয়তো একটা-দুটো পরিবর্তন হবে। ফুটবলে স্কোয়াড ধরে রাখার সুবিধা সবসময় পাওয়া যায়। শনিবাসরীয় ডার্বিতেও ব্যতিক্রম হবে না বলে আমি মনে করছি।
আরও একটা বিষয় মোহনবাগানের অ্যাডভান্টেজ। সেটা হল, ওরা নিজেদের মাঠে অনুশীলন করছে। সেখানে সমর্থকরা রোজ গিয়ে ভিড় করছে। গ্যালারি থেকে ফুটবলারদের উৎসাহ দিচ্ছে। অনুশীলন শেষে সেলফি তুলছে প্রিয় ফুটবলারের সঙ্গে। যে কোনও দলে এর ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। সমর্থকদের সঙ্গে ফুটবলারদের অন্যরকম একটা যোগাযোগ তৈরি হয় এর ফলে। ফুটবলাররা একটা বাড়তি মোটিভেশন পায়। যে সমর্থকরা রোজ গ্যালারিতে গলা ফাটাচ্ছে, সেলফির আবদার করছে- তাদের জন্য ম্যাচ জিতে মাঠ ছাড়ার একটা ভাবনা সব ফুটবলারের মনেই আসে। আমাদেরও আসত। এখনও আসে। ডার্বিতেও মোহনবাগান সমর্থকরা তেমন একটা ভাবনা নিয়েই নামবে। সেখানে ইস্টবেঙ্গল কখনও যুবভারতীতে, কখনও নিউটাউনে অনুশীলন করছে শুনেছি। সেখানে খুব বেশি সমর্থকের ভিড়ও হচ্ছে না। তবে ওরা নতুনভাবে দল গড়েছে, নতুন কোচ এনেছে।
কার্লেস কুয়াদ্রাত ভাল কোচ। যদিও মোহনবাগানের সঙ্গে পাল্লা দেওয়া তাঁর একার পক্ষে সহজ হবে না। তাই এই ম্যাচে ইস্টবেঙ্গলকে গোল না খাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করাতে হবে আগে। যে ভাবেই হোক কামিংসদের আক্রমণ ঠেকাতে হবে ওদের। তার সঙ্গে সুযোগ তৈরি করে একটা গোল তুলে নিতে হবে।
এমনিতে ডার্বি যতটা না ফুটবল দক্ষতার লড়াই, তার থেকেও বেশি মানসিক যুদ্ধ। আমরাও বহুবার আন্ডারডগ হিসাবে নেমে ম্যাচ জিতে মাঠ ছেড়েছি। তবে শনিবার তেমন কিছু হওয়ার সম্ভবনা দেখছি না। বরং আমার মতে মোহনবাগান ম্যাচটা জিতবে, ৩-০ গোলের ব্যবধানে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.