দুলাল দে: পেনাল্টি শটটা নিতে যাওয়ার আগে লিওনেল মেসি কি গ্যালারিতে দেখতে পেয়েছিলেন দিয়েগো মারাদোনার মুখ? নীল রঙয়ের টি-শার্ট। চোখে সানগ্লাস। গ্যালারিতে ঢুকতেই মাঠের বড় স্ক্রিনে মুখটা দেখানো হল। সঙ্গে সঙ্গে গ্যলারিতে সমর্থকদের উল্লাস। স্বাভাবিকভাবে ম্যাচ শুরুর আগে মাঠে ওয়ার্ম আপ করা মেসির নজর নিশ্চয়ই এড়িয়ে যায়নি। তাই কি পেনাল্টি নিতে যাওয়ার আগে মুখটা গ্যালারির দিকে একবার তুলেছিলেন?
মারাদোনা যেখানে, বিতর্ক সেখানে। নিয়ম মানার বালাই নেই। গ্যালারির ভিভিআইপি আসনে বসে সিগারে দিব্যি টান দিলেন। যা পুরোপুরি ফিফার নিয়মবিরুদ্ধ। মাঠে ধূমপান করা মারাত্মক অপরাধ। শুধু তাই নয়। গ্যালারি থেকে কোরীয় সমর্থকদের দিকে চোখ টেনে বর্ণবিদ্বেষমূলক ইঙ্গিতও করে বসলেন। পরে অবশ্য ধূমপানের জন্য ক্ষমাও চেয়ে নেন। নিজের ফেসবুক পেজে মারাদোনা লেখেন, “আজ আর্জেন্টাইনদের কাছে খুব কঠিন একটা দিন গেল। বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে খুব টেনশন ছিল। সবার নিজস্ব একটা অনুভূতি রয়েছে। বিশ্বাস করুন, আমি সত্যি জানতাম না্ যে স্টেডিয়ামে কেউ ধূমপান করতে পারব না। সবার কাছে এবং সংঠকদের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। কাম অন আর্জেন্টিনা। আসুন আমাদের টিমকে সাপোর্ট করুন। এখন থেকে আরও বেশি করে সমর্থন করুন।”
খারাপ একটা দিনে টিম দিয়েগোর সমর্থন পেলেন ঠিকই! কিন্তু তাতেও হতাশা কাটছে না। সত্যিই এখনও কেউ যেন বিশ্বাসই করতে পারছেন না ম্যাচটা আর্জেন্টিনা ড্র করেছে। মেসি পেনাল্টি মিস করেছেন! মেসিও ভাবতে পারছেন! পেনাল্টি মিস করে এক মুহূর্ত থমকে যাওয়ার সময় পাননি মেসি। কী করে পাবেন? তখন যে ম্যাচ চলছে। সেই মেসি ম্যাচ শেষে আকাশের দিকে তাকালেন। চোখ মুছলেন। পেনাল্টি নষ্ট করে হতাশ এলএম টেন। বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে পয়েন্ট নষ্ট। তার উপর আবার পেনাল্টি হাতছাড়া। দুইয়ের ফলায় মেসি যখন বিদ্ধ, তখনই স্টেডিয়াম ছেড়ে বেরিয়ে এলেন মারাদোনা। মাথা নিচু করে চোখের জল মুছতে মুছতে মাঠ ছেড়ে ড্রেসিংরুমের দিকে মেসি। তবে মেসি নয়, ইজরায়েলের বিরুদ্ধে ওয়ার্ম আপ ম্যাচ বাতিল হওয়াকেই দলের খারাপ পারফরম্যান্সের জন্য দায়ী করেছেন কোচ সাম্পাওলি।
মিক্সড জোনে অনেক আর্জেন্টাইন সাংবাদিক। যাঁদের সঙ্গে মেসির সম্পর্ক ভাল। তাঁরাও এদিন আশা করতে পারেননি ম্যাচের পর মিক্সড জোনে দাঁড়িয়ে যাবেন মেসি। কিন্তু তিনি সত্যিই দাঁড়ালেন। ঝাঁপিয়ে পড়ল সংবাদ মাধ্যম। আর্জেন্টাইন তারকার ঘনিষ্ট সাংবাদিকরা বলছিলেন, “লিও তখনই সাংবাদিকদের সামনে দাঁড়ায়, যখন ওর কিছু বলার থাকে। এদিন যখন এসেছে, তখন কথা বলবে। এবং প্রস্তুতি নিয়েই এসেছে।” মুখ খুললেন মেসি। শুরুতেই বললেন, “আজ তিন পয়েন্ট পাওয়া উচিত ছিল। কিন্তু এক পয়েন্ট নিয়ে মাঠ ছাড়ার সব দোষ আমার।” আর পেনাল্টি নষ্ট? মেসি বললেন, “স্বীকার করছি, পেনাল্টি ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারত। বদলে দিতে পারত ম্যাচের রেজাল্ট। আমার পেনাল্টি নষ্টর জন্যই ম্যাচটা জেতা গেল না। এর সব দায় আমার।”
তাহলে কি এই পারফরম্যান্সের পর বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার আর কোনও সুযোগ রইল না? সমর্থকদের অবশ্য আশার কথা শুনিয়ে রাখলেন বার্সা সুপারস্টার। “এই খারাপ পারফরম্যান্সে সব শেষ হয়ে যায়নি। এই রেজাল্ট পরের ম্যাচের ভাল খেলার শক্তি জোগাবে। ভরসা রাখুন আমাদের উপর। পরের ম্যাচে ক্রোয়েশিয়াকে হারাবই।” মাথা নিচু করে চলে গেলেন মিক্সড জোন থেকে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.