দীপ দাশগুপ্ত: বিশাখাপত্তনমে শুক্রবার দিল্লি ক্যাপিটালস বনাম চেন্নাই সুপার কিংস ম্যাচটা আমার মতে, বেশ ইন্টারেস্টিং হতে চলেছে। এটা ভারতীয় ক্রিকেটের বর্তমান বনাম ভবিষ্যতের ম্যাচ। মহেন্দ্র সিং ধোনি বনাম ঋষভ পন্থ। সুরেশ রায়না বনাম শ্রেয়স আইয়ার। ধোনি বর্তমান। ঋষভ ভবিষ্যৎ। আবার রায়না অতীত। শ্রেয়স ভবিষ্যৎ। বললাম না, এটা ভারতীয় ক্রিকেটের এক প্রজন্ম থেকে আর এক প্রজন্মে এটা ব্যাটন তুলে দেওয়ার ম্যাচ।
দিল্লি যা খেলছে, তাতে খাতায়-কলমে শুক্রবারের দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে দিল্লি এগিয়ে। ফর্মের বিচারে কথাটা বলছি। পৃথ্বী শ, ঋষভ পন্থ প্রত্যেকেই তো দারুণ ফর্মে। তাছাড়া ওদের বোলিং। কাগিসো রাবাদা যে চোট পেয়ে দেশে ফিরে গিয়েছে, দিল্লির খেলা দেখে বোঝা যাচ্ছে কি? রাবাদা নেই, ট্রেন্ট বোল্ট ওর কাজ করে দিচ্ছে। ইশান্ত শর্মা দুর্দান্ত বল করছে। অমিত মিশ্র ভাল বোলিং করছে। দিল্লির সবচেয়ে বড় প্লাস পয়েন্ট হল, যেমন ওরা পাওয়ার প্লে-তে বল করছে, তেমন মাঝের ওভারগুলোয় করছে। তেমনই করছে ডেথ ওভারে। সেদিক থেকে দেখলে, সিএসকে বোলিংয়ের একটা বড় সমস্যা হল ডেথ বোলিং। সিএসকের ব্যাটিংয়ে যেমন শুধু ধোনি ছাড়া আর কেউ নেই, তেমন বোলিংয়ে ডেথ ওভার করার মতো কেউ নেই। এটা একটা বড় সমস্যা যা কি না আগামী বছর ওদের ঠিকঠাক করে ফেলতে হবে।
কিন্তু কী জানেন, খাতায়-কলমে যা-ই দেখাক, বিশাখাপত্তনমের পিচ যদি ধরেন তাহলে ধোনির সিএসকেকে এগিয়ে রাখতে হবে। বিশাখাপত্তনমে সানরাইজার্স হায়দরাবাদ বনাম দিল্লি ক্যাপটিালসের ম্যাচটা যে পিচে খেলা হল, সেটা পরিষ্কার ১৬০ রানের পিচ। এটাই যদি ১৮০ রানের উইকেট হত, বলতাম দিল্লি শুধু খাতায়-কলমে নয়, বাস্তবেও এগিয়ে। কিন্তু বিশাখাপত্তনমে ১৬০ রানের উইকেট। আর সেখানে যদি বুধবারের এলিমিনেটরের মতো বল টার্ন করে, পুরো সিএসকে-র সেট প্যাটার্নে চলে আসবে। ধোনির সিএসকে তো তাই চায়। এমন পিচ ওরা চায়, যেখানে বল ঘুরবে। ১৬০ রানের বেশি উঠবে না। আর ওরা তখন তিনটে স্পিনার নামিয়ে দেবে। ১৬০ রানের ম্যাচ মানে পুরো সেটা ধোনির নিজের কমফোর্ট জোনে ঢুকে যাওয়া।
মনে রাখতে হবে, হায়দরাবাদের রশিদ খান ভাল ঝামেলায় ফেলেছিল দিল্লির মিডল অর্ডারকে। ওদের রশিদ থাকলে সিএসকের কাছেও কিন্তু একটা ইমরান তাহির আছে। যাকে খেলাও খুব কঠিন। প্লাস রবীন্দ্র জাদেজা, হরভজন সিং। দেখুন দিল্লিকে যতই অন পেপার্স দারুণ লাগুক, এটা বুঝতে হবে যে ওরা তরুণ টিম। মানছি, ডাগআউটে দাদির (সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়) মতো একটা ক্রিকেট মগজ থাকবে দিল্লির। রিকি পন্টিংয়ের আগ্রাসী মনোভাব থাকবে। কিন্তু দাদি তো আর মাঠে নেমে খেলতে পারবে না। মাঠে নেমে কোনও সিদ্ধান্তও নিতে পারবে না। টিমের হঠাৎ হঠাৎ প্যানিক করাটা আটকাতে পারবে না। হায়দরাবাদের বিরুদ্ধে একটা সময় পর্যন্ত ভাল এগোচ্ছিল দিল্লি। মনেই হচ্ছিল না কোনওরকম চাপ আসতে পারে। কিন্তু পৃথ্বী আর শ্রেয়স আউট হতেই পরপর উইকেট পড়তে শুরু করল। দিল্লি ব্যাটিংয়ের এটা একটা বড় সমস্যা। কেউ জানে না কোন দিন কে কী করবে। তাছাড়া চাপ পড়লে টিমের মিডল অর্ডারটা একটু কেঁপে যাচ্ছে। শুক্রবার ১৬৩ টার্গেট ছিল দিল্লির। কিন্তু সেটা ওরা তুলেছে এক বল বাকি থাকতে। যার অর্থ, ১৬০ রান নিয়েও ম্যাচ ক্লোজ করে দিয়েছিল হায়দরাবাদ। যা ধরে নেওয়া যায়, সিএসকেও করবে। আর সেটা ওরা একবার করে ফেললে এমএস ধোনি নামটা বিশাল ফ্যাক্টর হয়ে যাবে।
চলতি আইপিএলে অবিশ্বাস্য ব্যাটিং করে যাচ্ছে ধোনি। দেখছিলাম, এবার ১৩-টা ম্যাচ খেলে সাতবার নট আউট থেকেছে! ব্যাটিং গড় ১৩৫! স্ট্রাইক রেট প্রায় ১৪০। আর কী চাওয়ার থাকতে পারে ধোনির কাছ থেকে। প্লাস, অধিনায়কত্ব। এমনিতেই ধোনি যে কোনও ম্যাচ শেষ ওভারে নিয়ে যেতে ভালবাসে, বিপক্ষের উপর নিজের উপস্থিতির চাপটা চাপিয়ে দেয়, নানারকম ফিল্ড প্লেসিং, বোলার চেঞ্জ করে করে বিপক্ষের প্ল্যান নষ্ট করে দেয়। বুঝতে দেয় না কী করবে। আর সেটা যদি শুক্রবার হয়, তাহলে ধোনির কাছে ফের চেনা পরিস্থিতি হয়ে গেল। সবচেয়ে বড় কথা, অধিনায়কত্ব। ঋষভ পন্থ বুধবার দুর্ধর্ষ খেলেছে। কিন্তু ধোনি জানে, কোথায় কোথায় ফিল্ডার রাখলে কোন বোলারকে আনলে ঋষভকে থামানো যাবে। এই আইপিএলে ধোনি স্রেফ ঠিক জায়গায় ফিল্ডার দাঁড় করিয়ে বেশ কয়েকটা বড় নামকে আউট করে দিয়েছে। যেমন বিরাট কোহলি, আন্দ্রে রাসেল, যেমন এবি ডে’ভিলিয়ার্স। পরিষ্কার বলছি, বুধবার ধোনি যদি হায়দরাবাদের ক্যাপ্টেন্সি করত, দিল্লি শেষ ওভারে পাঁচ রান তুলতে পারত কি না সন্দেহ। ধোনি অত সহজে রানটা তুলতে দিত না।
অতএব, শুক্রবার ঋষভের কাজ সহজ হবে না। কিন্তু একটা কথা বলতেই হবে। দিল্লি আজ জিতুক-হারুক, যা-ই হোক না কেন, যদি ওরা এই টিমটাকে ধরে রাখতে পারে, তাহলে আগামী দিনে আইপিএলে সবচেয়ে ভয়ংকর টিমের নাম হতে যাচ্ছে দিল্লি। মুম্বই ইন্ডিয়ান্স, চেন্নাই সুপার কিংসকে দেখে যেমন বাকি ফ্র্যাঞ্চাইজি ভয় পায়, তেমনই ভবিষ্যতে এই টিম থাকলে দিল্লিকে দেখেও একই ভয় পাবে!
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.