সংবাদ প্রতিদিন-এর জন্য বিশেষ আইপিএল কলাম লিখছেন কেকেআর অধিনায়ক গৌতম গম্ভীর৷ বুধবার রাতে মাঠের মধ্যেই নাইট অধিনায়কের মনে হচ্ছিল, নাইটরা কেন প্রকৃতিকে হারাতে পারবে না?
আমার এখন ৩৫ বছর বয়স৷ কিন্তু সানরাইজার্স হায়দরাবাদ ম্যাচে যে পরিমাণ চাপ আর টেনশন ভোগ করলাম, তারপর নিজের বয়স মনে হচ্ছে, ৭০! বুধবার রাত সাড়ে ন’টা পর্যন্ত আমার অবস্থা ঠিক যেন পৃথিবীর অর্ধেকটা কিনে ফেলেছি, আর বাকি অর্ধেকটা কেনার কাগজপত্র তৈরি হচ্ছে! তারপর সেই পৃথিবীতে বৃষ্টি নেমে আমার সমস্ত স্বপ্ন প্রায় ধুয়েমুছে সাফ করে দিচ্ছিল৷ আমার বেড়ে ওঠা পশ্চিম দিল্লিতে৷ ক্রিকেট শৈশব কেটেছে পাড়ার পার্কে৷ ওই সময় এক পশলা বৃষ্টি মানেই সারাদিনের জন্য ক্রিকেট খেলার বারোটা বাজা! আমি এবং আমার কিছু কট্টর ক্রিকেট-ভাগ্যহীন বন্ধু পাড়ার ‘এমএসজি’-কে শুকিয়ে তুলতে যা কিছু করা সম্ভব, সবের চেষ্টা করতাম৷ কিন্তু শেষমেশ আমাদের ক্রিকেটটা কোনও বন্ধুর বাড়ির পাতি উঠোনে হত৷ যেটা আমার খুব বোরিং লাগত৷ বিরক্তিকর ছবিটাকে মনে হতো, নিজের ব্যক্তিগত দুর্ভাগ্য৷ কোনও ইনডোর স্পোর্টস, ভিডিও গেমস খেলা বা টিভি দেখা-টেখা আমাকে আনন্দ দিত না৷ ওই অবস্থাতেও আমি জাস্ট মাঠে ক্রিকেটটা খেলতে চাইতাম৷
বুধবার রাতে চিন্নাস্বামীতে বৃষ্টি থামার জন্য আমরা যখন অপেক্ষা করছিলাম, নাগাড়ে কত কী ভেবে যাচ্ছিলাম– ‘এই খেলা শুরু হল বলে…,’ ‘এই বুঝি ম্যাচটা ফস্কে গেল…!’ আসলে আমি এমন একজন হতভাগ্য বিজিত মানুষ যে, আমার টিমকে যদি বৃষ্টির খামখেয়ালিপনায় টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে পড়তে হতো, তাহলে আমি কষ্টে প্রায় মরে যেতাম৷কয়েকজনকে দেখলাম ফ্রেঞ্চ ক্রিকেট খেলছে৷ বুঝে উঠতে পারছিলাম না, কী করে ওরা সেটা পারছে? বাইরে মাঠে বৃষ্টি পড়ার শব্দকে আমার তখন মিসাইলের মতো লাগছিল৷ আর ড্রেসিংরুমের ভেতর তখন আমাদের আগের সানরাইজার্স এবং মুম্বই ইন্ডিয়াসের বিরুদ্ধে ম্যাচের হাইলাইটস দেখানো হচ্ছিল! যে দু’টো ম্যাচই আমরা হেরেছিলাম৷ আমি বুঝে উঠতে পারছিলাম না, কোন দিকে তাকাব– ড্রেসিংরুমের বাইরে, না ভেতরে? হয়তো আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতে পারলেই তখন সবচেয়ে ভাল হতো!
রাত ১১.২৫-এ আমাদের ম্যাচ প্রায় শুরু হয়ে যাচ্ছিল৷ কিন্তু আবার একদফা বৃষ্টি এবং সব পরিকল্পনার ফের দফারফা৷ আমি ম্যাচের যাবতীয় অঙ্ক ‘চেক’ করতে লেগে গেলাম. আর ঘড়ির দিকে বারবার-বারবার দেখতে লাগলাম৷ এত রাগ হচ্ছিল যে, শরীর খারাপ লাগছিল৷ আমার একটা অংশ বলছিল, প্রকৃতির সঙ্গে লড়া অসম্ভব৷ কিন্তু আবার অন্য অংশটা চেঁচিয়ে উঠছিল, “কেন, কেকেআর?” এখন স্বীকার করছি, কাল ওই সময় আমার মনে পড়ে যাচ্ছিল পাঞ্জাব আর মুম্বইয়ের কাছে আমাদের হারের কথা৷ ওহ! ওই দু’টো ম্যাচের যে কোনও একটা জিতে থাকলেই আজ আমরা লিগ টেবলে প্রথম দুই টিমের মধ্যে থাকতাম. আর এই অসহ্য অত্যাচারের হাত থেকে হয়তো বেঁচে যেতাম! আমি জানিনা, মানুষের চেক-ব্যালেন্স, এগুলো ভগবান কীভাবে নির্ণয় করে থাকেন! কিন্তু আমার মনে হয়, সেটা আমার জন্য ভীষণ কঠিনভাবে নিয়ে থাকেন সর্বশক্তিমান৷
মধ্যরাতের খানিকটা পর ঈশ্বর অবশেষে নরম হলেন৷ বৃষ্টি থামল এবং চিন্নাস্বামীতে ম্যাজিকের মতো আউটফিল্ড শুকিয়ে যাওয়ার কাজ শুরু হয়ে গেল৷ মাইসোর ধোসা ছাড়াও কর্নাটক আমাদের অনেক দিকে অনেক কিছু দিয়েছে৷ আমার মনে হয়, সেই তালিকায় কর্নাটক গর্বের সঙ্গে চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামের জলনিকাশি সিস্টেমকেও রাখতে পারে৷ ভারতের অন্য যে কোনও মাঠে গতকালের মতো বৃষ্টি হলে গেম, সেট অ্যান্ড ম্যাচ জাস্ট সানরাইজার্সের দিকে চলে যেত৷ ঠিক রাত ১টা বাজার একুট আগে আমরা জেতার জন্য ৪৮ রান তাড়া করতে মাঠে নামলাম৷ দু’-একটা হোঁচট খেয়ে পরের দিকে টার্গেটে পৌঁছলাম৷ সানরাইজার্সের জন্য আমি দুঃখিত৷ এধরনের হার সত্যিই হজম করা কঠিন৷ আশা করি, কেউ না কেউ আইপিএলে এধরনের বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচের কথা মনে রাখবেন এবং একটা ‘প্ল্যান বি’ বের করবেন৷
শুক্রবার সামনে মুম্বই– আমাদের কাঁটা টিম৷ আজ্ঞে হ্যাঁ, আমাদের বন্ধুরা টুইটারে অন্তত তাই বলে থাকেন৷ এই মুহূর্তে শুক্রবারের ম্যাচ নিয়ে বেশি কিছু ভাবছি না৷ শুধু এটা বাদে যে, শুক্রবার কিন্তু বেঙ্গালুরুতে বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে!
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.