রাজর্ষি গঙ্গোপাধ্যায়: আন্দ্রে রাসেলের একটা চোটকে ঘিরে যে এমন ধুন্ধুমার বেঁধে যাবে, কে জানত! কে জানত, রাসেলের কাঁধের চোটের কারণ হিসেবে ইডেন পিচকে কাঠগড়ায় তুলে দেবে কেকেআর!
বুধবার ইডেনে কেকেআর নেটে ব্যাট করার সময় কাঁধে ভাল চোট পেয়েছিলেন রাসেল। নাইট নেট বোলার মিনাদ মঞ্জরেকরের ডেলিভারি অর্তকিতে লাফিয়ে রাসেলের কাঁধে আছড়ে পড়ে। ঘাড় আর কাঁধের ঠিক মাঝামাঝি জায়গাটায়, যেখানে ফিরোজ শাহ কোটলায় দিল্লি ক্যাপিটালস পেসার হর্ষল প্যাটেলের ‘বিমার’ আছড়ে পড়েছিল। অর্থাৎ, পুরনো চোটের জায়গাতেই ফের চোট পান রাসেল। মিনাদের বল ঘাড়ে লাগার সঙ্গে সঙ্গে প্র্যাকটিস পিচের উপরই শুয়ে পড়েন রাসেল। যন্ত্রণায় কাতরাতে থাকেন। কেকেআরের ক্যারিবিয়ান সতীর্থ কার্লোস ব্রেথওয়েটের কাঁধে ভর দিয়ে শেষ পর্যন্ত মাঠ ছাড়তে হয় রাসেলকে।
যারপর নাকি ইডেনের পিচ নিয়ে মাঠকর্মীদের কাছে ফেটে পড়ে কেকেআর। শোনা গেল, রাসেলকে বুধবার রাতে হাসপাতাল নিয়ে যাওয়ার তোড়জোড় যখন চলছে, তখন ইডেন মাঠকর্মীদের কারও কারও কাছে গিয়ে পিচ নিয়ে একরাশ ক্ষোভ দেখিয়ে আসেন কেকেআরের দুই কর্তা। ঘটনার সময় ইডেন কিউরেটর সুজন মুখোপাধ্যায় উপস্থিত ছিলেন না। কিন্তু তাঁর সহচরদের কাছে গিয়ে নাকি বলা হয়, টিম এত খারপ পিচ জীবনে দেখেনি। যেখানে ম্যাচে শুভমান গিলের হেলমেটে পেসারের বল লাগছে। প্র্যাকটিস পিচে নেমে আহত হতে হচ্ছে টিমের সেরা ক্রিকেটারকে। এঁরা নাকি ক্ষুব্ধ ভাবে বলতে থাকেন, রাসেলের চোটের জন্য দায়ী ইডেনের প্র্যাকটিস পিচ! তার বাউন্স!
[আরও পড়ুন: পুরুষদের জন্য বিশেষ গয়না আনল সেনকো গোল্ড, উদ্বোধনে নাইটরা]
এটা ঠিক যে, শুক্রবার বিরাট কোহলির আরসিবির বিরুদ্ধে রাসেল খেলতে পারবেন কি না, এখনও নিশ্চিত নয়। গতকাল হাসপাতালে কাঁধের একদফা এক্স রে হয়েছে ক্যারিবিয়ান অলরাউন্ডারের। কিন্তু এদিন রাতেও আরও একদফা ডাক্তারি পরীক্ষানিরীক্ষা হোটেলেই হওয়ার কথা আছে। কেকেআর অধিনায়ক দীনেশ কার্তিককে এদিন জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, রাসেলের ফিটনেস আপডেট নিয়ে। কার্তিক ম্লান হাসি হেসে বললেন, “চব্বিশ ঘণ্টাও হয়নি ওর লেগেছে। প্রাথমিক একটা এক্স রে হয়েছে। দেখা যাক। আগামিকাল আরও ভাল বুঝতে পারব। আপাতত রাসেলকে ধরেই আমরা চলছি।” ভারতীয় ক্রিকেটের ‘ডিকে’ কথাটা বললেন বটে, কিন্তু সেটা কতটা সোনালি-বেগুনি সমর্থকদের আশাবাদ জোগাবে জানা নেই। কারণ বৃহস্পতিবার প্র্যাকটিসে দু’দফায় ব্যাটিং করিয়ে রাখা হল কার্লোস ব্রেথওয়েটকে। নেট সেশনের একেবারে শুরুতেই ব্রেথওয়েটকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় ব্যাট করতে। পরিকল্পনা খুব সহজবোধ্য- রাসেল একান্ত না পারলে বদলি হিসেবে ব্রেথওয়েটকে প্রস্তুত রাখা।
ইডেন কিউরেটর গ্রুপের কেউ কেউ এত কিছু শুনতে চাইলেন না। গত রাতের ঘটনা নিয়ে কিউরেটর সুজন মুখোপাধ্যায় কিছু বলতে চাইছেন না। কিন্তু বাকিদের কেউ কেউ বললেন যে, রাসেলের চোটের জন্য কী করে ইডেনের উইকেটকে দায়ী করা হচ্ছে, তাঁদের বোধগম্য হচ্ছে না। কেকেআর নতুন ইডেনে এই প্রথমবার খেলছে না। তিন-চার বছর ধরেই পিচের চরিত্র পালটে গিয়েছে ইডেনে। আগে ইডেনের পিচ ছিল মন্থর। বল পড়ে থেমে আসত। কিন্তু সেই ইডেন আর নেই। পিচের মাটি পালটে, ঘাস বদলে বাইশ গজকে দ্রুতগামী করে দেওয়া হয়েছে বহু দিন। যেখানে বাউন্স আছে, গতি আছে। কেউ কেউ রুষ্ট ভাবে বললেন, যে কোনও মাঠের প্র্যাকটিস পিচের চরিত্র ম্যাচ পিচের মতোই হয়। এটা সবাই জানে। কেকেআর কী ভেবেছিল? ম্যাচ পিচে গতি থাকবে আর প্র্যাকটিস পিচ পাটা হবে?
[আরও পড়ুন: চলতি আইপিএলে হারের হ্যাটট্রিক কেকেআরের, ইডেনে মহারণ জিতল চেন্নাই]
ইডেন কিউরেটর গ্রুপের কেউ কেউ আরও বললেন, ঘরের মাঠে হারতে থাকার পর থেকেই আচমকা কেকেআর নাকি পিচে গতি-বাউন্স কমানোর কথা বলতে শুরু করেছে। মাঠকর্মীদের নাকি বলা হয়েছে, কেকেআর নির্দিষ্ট একটা ভাবনা নিয়ে রবিন উথাপ্পাকে ব্যাটিং অর্ডারে তিন নম্বরে ব্যাট করতে পাঠাচ্ছে। কিন্তু এত গতি-বাউন্সের উইকেটে তাতে কোনও লাভ হচ্ছে না। যা শুনে ইডেন মাঠকর্মীদের কেউ কেউ অবাক নন। অত্যাশ্চর্য! এঁরা বলছেন, দু’দিন আগে নাইটরা ইডেনে জেতার পর টিমের মালিক শাহরুখ খান নিজের বক্সে ডেকে উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছেন ইডেন কিউরেটর সুজনের। ইডেন পিচকে দেশের সেরা বলেছেন। আর আজ তাঁরই টিম কিনা পিচ নিয়ে আপত্তি তুলছে! এঁরা বললেন, কেকেআরের বোঝা উচিত গলদটা ইডেন পিচে নয়। গলদটা তাদের ক্রিকেটে। তাই হারছে। পিচ কেকেআরকে হারাচ্ছে না। শোনা গেল, সুজন নাকি কেকেআরকে পরিষ্কার বলে দিয়েছেন, পিচের চরিত্র পালটানো সম্ভব নয়। যা আছে, যেরকম আছে, তেমনই থাকবে। এদিন রাতের দিকে দেখা গেল, সুজনের সঙ্গে আলাদা বৈঠক করছেন কেকেআর শীর্ষকর্তা। দেখা গেল, নাইট আধিকারিক হেসে হেসে কথা বলছেন কিউরেটরের সঙ্গে। পরে কেউ কেউ বললেন, পুরোটা গুমোট আবহাওয়া হালকা করার চেষ্টা। ভাল। কিন্তু শুক্রবার রাসেল না নামতে পারলে, কেকেআর হারলে, ফের স্ফুলিঙ্গ জ্বলে উঠবে না তো?
ছবি: শংকর নাগ দাস
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.