ভারত: ৩০৭/৬ (কোহলি-৯৭, রাহানে-৮১)
ইংল্যান্ড:
প্রথম দিনের খেলা শেষ
দীপ দাশগুপ্ত: সোনির মুম্বই স্টুডিওয় বসে আমরা, ধারাভাষ্যকাররা শনিবার একটা কথা বলাবলি করছিলাম। বলছিলাম যে, কোন জাদুমন্ত্রে ভারতের ব্যাটিং এভাবে পালটে গেল? ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে সিরিজের প্রথম দু’টো টেস্টে যে ভারতীয় টিমের ব্যাটিং দাঁড়াতেই পারেনি, এদিন তারাই কিনা সিরিজে প্রথমবার সাড়ে তিনশো রান তোলার ইঙ্গিত দিচ্ছে?
আলোচনার নির্যাস থেকে তিনটে পয়েন্ট বেরিয়ে এল। এক, ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের ড্রাইভ খেলা বন্ধ করে দেওয়া। দুই, ডিফেন্সিভ ক্রিকেটের খোলস ছেড়ে বেরনো। আর তিন, ট্রেন্টব্রিজ পিচ। যা লর্ডসের মতো নয়। সত্যি বলতে, লর্ডসের মতো সুইং বা সিম ট্রেন্টব্রিজ পিচ থেকে এদিন কিছুই হয়নি। জিমি অ্যান্ডারসন-স্টুয়ার্ট ব্রডদেরও তো লেংথ পালটাতে হয়েছে। সামনে না করে, বলের লেংথ পিছনে রাখতে হয়েছে। সুইং হচ্ছে না বলে। কিন্তু সেসব বাদ দিন। আসল হল, ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের ডিসিপ্লিন। মানসিকতা। ব্যাটসম্যানরা টানা শরীরের কাছে খেলে গেল। ব্যাটকে ভেতরে রাখল। বলকে ব্যাটে আসতে দিল। ব্যাটকে বলের কাছে নিয়ে গেল না। ড্রাইভ খেলল সেট হওয়ার পর। শিখর ধাওয়ান থেকে বিরাট কোহলি। কেএল রাহুল থেকে অজিঙ্ক রাহানে। প্রত্যেকে। শিখর-রাহুল বড় রান পায়নি। কিন্তু ওরা আউট হয়েছে ভাল বলে। উইকেট ছুড়ে দিয়ে আসেনি।
তাছাড়া কোহলিরা ড্রাইভ না মারলেও ব্যাকফুটে কাট খেলেছে। পুল মারার বলে পুল মেরেছে। অর্থাৎ স্কোরবোর্ড ঘুমিয়ে থাকেনি। দেখুন, কোহলি-রাহানের ব্যাটিং নিয়ে আলাদা বলতেই হবে। কিন্তু ওদের ব্যাটিংয়ের চেয়েও আমার বেশি ভাল লেগেছে টিমের ব্যাটিং মাইন্ডসেট। আগে কোহলি-রাহানের ১৫৯ রানের পার্টনারশিপ নিয়ে বলে নিই। গত তেরো টেস্ট ইনিংসে একটাও হাফসেঞ্চুরি পায়নি রাহানে। এত দিন পর সেই রাহানে ৮১ করল। চলতি সিরিজের প্রথম দু’টেস্টে পারেনি। সেটা টিমকে চাপেও ফেলছিল। আসলে রাহানের উপর টিম যত না দেশে ভরসা করে, তার চেয়ে অনেক বেশি নির্ভর করে বিদেশে।
Stumps on Day 1 of the 3rd Test.#TeamIndia 307/6#ENGvIND pic.twitter.com/pLftIRiEVR
— BCCI (@BCCI) August 18, 2018
কোহলিও স্বস্তিতে থাকবে। ও তো বুঝে গেল যে, ওর সঙ্গে পার্টনারশিপ করার সেরা লোকটা আবার ফর্ম ফিরে পেয়েছে। বার্মিংহাম আর লর্ডস, দু’জায়গাতেই ভারতীয় ব্যাটিংয়ের পুরো চাপটা এসে পড়েছিল কোহলির উপর। কিন্তু ট্রেন্টব্রিজে তা হল না। আর ট্রেন্টব্রিজে খেললও বটে কোহলি! লর্ডসে পিঠের পুরনো যন্ত্রণা ফিরে এসেছিল। আশঙ্কা ছিল, এই টেস্টে আদৌ ও খেলতে পারবে কি না। সেখান থেকে ৯৭! পিঠে ব্যথা আছে বলে স্ট্রাইড ছোট করেছে। বিরাট এমনই। দায়িত্ব ছেড়ে কখনও পালাতে শেখেনি। এদিনও সেটা পরিষ্কার।মাত্র তিন রানের জন্য সেঞ্চুরি না পেতে পারে, কিন্তু ইনিংসটা সেঞ্চুরির চেয়ে কম দামী কিছু নয়।
অদ্ভুত বরং ওর আর রাহানের সেট হয়ে যাওয়ার পর আউট হয়ে যাওয়া। আমরা তো ভেবেছিলাম, দু’টো সেঞ্চুরি আসছে! বদলে এল ৮১ আর ৯৭। রাহানেরটা বুঝতে পারি। ঠিক আগের ওভারে ১৭ রান পেয়েছিল। যেকোনও ব্যাটসম্যান তার পরের ওভারে ভাববে আমি সব বল এরপর বাউন্ডারিতে পাঠাতে পারি। রাহানেরও সেটা হয়েছে। আর কোহলি সেঞ্চুরির মুখে দাঁড়িয়ে একেবারে আদিল রশিদের ওই লোভনীয় ডেলিভারিটা পেয়েছিল। যা দেখলেই মাথায় প্রথম শব্দটা আসবে, সেঞ্চুরি! সে যাই হোক। তাতে খুব খারাপ কিছু হয়নি। চারশো উঠলে আমি এরপর অবাক হব না। কারণ ঋষভ পন্থ। ঋষভ এখন ২২-এ ব্যাটিং। কিন্তু টেস্ট ক্রিকেটের প্রথম স্কোরিং শটটাই ছয়! টিমের মানসিকতার কথা আগে বলছিলাম না, এটা তার পরিচয়। রবিবার যদি অশ্বিনের সঙ্গে জুটি বেঁধে টিমের স্কোর চারশো তুলে দেয়, অবাক হব না। শুধু অ্যান্ডারসনদের প্রথম দশটা ওভার দেখেশুনে খেলতে হবে। দু’টো ব্যাপার দেখে ঋষভকে নিয়ে আশা রাখছি। এক, ঋষভকে আমরা টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের প্লেয়ার হিসেবে জানি। কিন্তু ও দেখিয়েছে, বল ছাড়তেও জানে। আর দুই, দক্ষভাবে দ্বিতীয় নতুন বল সামলানো। আরও একটা কথা। ইংল্যান্ড কিন্তু সিরিজে এই প্রথম ৮৭ ওভার বল করার পর দ্বিতীয় দিন বল করতে নামবে!
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.