ইংল্যান্ড প্রথম ইনিংস ৩৩২ ও দ্বিতীয় ইনিংস ৪২৩-৮ ডিঃ
ভারত প্রথম ইনিংস ২৯২ ও দ্বিতীয় ইনিংস ১৮ ওভারে ৫৮-৩
দীপ দাশগুপ্ত: পরিষ্কার বলছি, মঙ্গলবার ভারত যদি গোটা দিন ব্যাট করে ওভাল টেস্ট বাঁচিয়ে দিতে পারে, একজন ভারতীয় হিসেবে দারুণ লাগবে। কিন্তু যুক্তির বিচারে, সেই সম্ভাবনা খুব ক্ষীণ।
ভারত পারে, টেস্টটা এখনও বাঁচিয়ে দিতে। কিন্তু তার জন্য পঞ্চম দিন প্রথম সেশনে কোনও উইকেট দিলে চলবে না। প্রথম সেশনে উইকেট না পড়লে জিমি অ্যান্ডারসন-স্টুয়ার্ট ব্রডকে দিয়ে আর তেমন বল না-ও করাতে পারেন জো রুট। যতই হোক, ওরাও তো পাঁচটা টেস্ট খেলে ফেলল। বেশি করে আনতে পারে মইন আলি, আদিল রশিদ, বেন স্টোকস আর স্যাম কুরানকে। তবে সে সবের প্রশ্ন তখনই আসবে যদি মঙ্গলবার প্রথম সেশনটা ইংল্যান্ডের উইকেটহীন যায়। কিন্তু এ দিন পর্যন্ত যা পরিস্থিতি, তাতে দেখে মনে হচ্ছে ভারতের ১-৪ সিরিজ হারাটা স্রেফ সময়ের অপেক্ষা মাত্র। আর যত সেটা দেখছি, যত ভাবছি, ভেতরে ভেতরে প্রচণ্ড রাগ হচ্ছে। রাগ আমাদের ব্যাটসম্যানরা রান পায়নি বলে হচ্ছে না। হচ্ছে, রান না পাওয়ার কারণের কথা ভেবে।
ইংল্যান্ডে বল সুইং করে, আমরা জানি। আর সেই সুইংকে সামলাতে গেলে ক্রিজের মধ্যে দাঁড়িয়ে থেকে ব্যাট করলে চলে না, সেটাও জানি। কিন্তু কিছুতেই বুঝতে পারছি না, পাঁচ নম্বর টেস্টে এসেও ভারত কেন বুঝতে পারছে না। শিখর ধাওয়ান এ দিন যে ভাবে আউট হল, সেটা কোনও টেস্ট ওপেনারের আউট হওয়ার ধরণ? শিখর গোটা টেস্ট সিরিজে প্রায় কিছুই করতে পারেনি। নেমেছে আর কিছুক্ষণের মধ্যে ফিরে গিয়েছে। কিন্তু তবু আমি শিখরকে দোষ দেব না। দোষ তো তাদের দেব যারা শিখরকে ইংল্যান্ডে টেস্ট ওপেনার হিসেবে ভেবেছিল। আজ পর্যন্ত বিদেশে টেস্ট সিরিজের প্রথম টেস্টে কখনও নামেনি শিখর। এতেই প্রমাণ লাল বলের ক্রিকেটে ও কেমন। সেটা দোষের নয়। শিখর সাদা বলের খুব ভাল প্লেয়ার। সীমিত ওভারে দারুণ। লাল বলের ক্রিকেটে সেটা নয়। আমার প্রশ্ন হচ্ছে, জেনেশুনে সেই লোকটাকেই আমি ইংল্যান্ডের পিচে দুম করে প্রথম টেস্ট খেলিয়ে দেব কেন?
আমার মতে, পৃথ্বী শ’কে এবার দেখা হোক। ওভাল টেস্টেই ওকে সুযোগ দেওয়া যেত। বলছি না, শিখরের জন্য টেস্ট টিমের দরজা বন্ধ করে দেওয়া হোক। কিন্তু ও কী পারে না পারে, আমরা তো দেখে নিলাম। এরপর অন্তত কিছু দিন সামনে তাকানো হোক। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে ঘরের মাঠে টেস্টে না ডেকে শিখরকে বলা হোক, ঘরোয়া ক্রিকেটে রান করে দেখাতে। তার পর ফেরার মতো হলে ফিরবে। কিন্তু এই সময়টায় পৃথ্বীকে সুযোগ দেওয়া যেতে পারে। ওভালেই দেওয়া যেত। আমি নির্বাচক হলে অন্তত তাই সাজেশন দিতাম। পৃথ্বী দশটা বল খেললেও বোঝা যেত, ওকে দিয়ে হবে কি না? কিন্তু প্লিজ। যদি এরপর দেশের মাটিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজে পৃথ্বীকে ভাবা হয়, তা হলে অন্তত পাঁচটা টেস্ট যেন দেওয়া হয়। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে দু’টো। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে পাঁচটা। পৃথ্বীকে চান্স দিলে বলা হোক, তুই পাঁচটা টেস্ট পাচ্ছিস। হালকা থেকে খেল।
আসলে চলতি সিরিজে ভারতের ওপেনার নিয়ে পরীক্ষানিরিক্ষা একদম ভাল লাগেনি। মুরলী বিজয় দু’টো টেস্টে পারেনি বলে বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হল। যার মধ্যে তিনটে ইনিংসে ও দারুণ বলে আউট হয়েছে। ও থাকলে শিখরের চেয়ে আর কত খারাপ করত? তাই বলছি, সিরিজ শেষ হলে মাথা ঠান্ডা করে ভাবা হোক। নির্বাচক, টিম ম্যানেজমেন্ট বসে ঠিক করুক কাকে ভাবা হবে আর কাকে হবে না। কিন্তু যাকেই ভাবা হোক, তাকে যেন লং টার্মের জন্য ভাবা হয়। আর যেন দেখে নেওয়া হয়, সত্যি এই পর্যায়ের জন্য সে তৈরি কি না? ঋষভ পন্থ নিয়ে যেমন ঠকতে হল টিম ম্যানেজমেন্টকে। কুড়ি বছরের ঋষভকে তিনটে টেস্ট খেলানোর পর ভারত টের পেল, ওকে দিয়ে ভবিষ্যতে হবে। কিন্তু এখনই হবে না। কেএল রাহুলকে তুমুল গালাগাল করছে লোকে। ওভালের দ্বিতীয় ইনিংসের পর চেতেশ্বর পুজারাকে নিয়েও করছে। মনে রাখতে হবে, এ দিন নেমে ভারতের ২-৩ হয়ে যাওয়া আসলে সিরিজ ১—৩ পিছিয়ে থাকা, ঘাড়ে সাড়ে চারশো রানের টার্গেট, সব কিছুর মিলিত চাপ। মানসিক ক্লান্তি ও শারীরিক ক্লান্তির যৌথ চাপ। নইলে বিরাট কোহলিকে চলতি ইংল্যান্ড সফরে একবারও দেখেছেন প্রথম বলেই দাঁড়িয়ে থেকে খোঁচা দিতে? আর দেখুন, পরিবর্ত ভাবাই যায়। আমি এখনই দু’টো নাম করতে পারি টেস্ট টিমের নাম্বার থ্রি স্লটে। প্রথমত, মায়াঙ্ক আগরওয়াল। গত বছর দু’হাজার রান করেছে। এবারও ছ’শো-সাতশো করে ফেলেছে। আর দুই, বাংলার অভিমন্যু ঈশ্বরণ। অভিমন্যুর টেকনিক ভাল। রান পাচ্ছে। কিন্তু এদের নেওয়ার আগে ভাল করে ভেবে নাও যে, এই পর্যায়ের জন্য এখনও এরা তৈরি কি না।
আর যাকেই নাও, অন্তত পাঁচটা টেস্ট দাও। দু’টো টেস্ট যদি কেউ হাতে পায়, সে নিজেকে বাঁচানোর কথা আগে ভাববে। শট খেলার আগে চারবার ভাববে। আর তাতে সেই প্লেয়ারের সঙ্গে সঙ্গে ডুববে কিন্তু টিম।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.