দুলাল দে: তিনি ফুটবলার। আর চিরকাল ‘ফুটবলার’ পরিচয় নিয়েই বাঁচতে চান। আইএম বিজয়ন এই নামটার উপর ফুটবলার ছাড়া অন্য আর কোনও তকমা লাগাতে চান না তিনি। যে কারণে, কেরলের লোকসভা নির্বাচনে একসঙ্গে কংগ্রেস-সিপিএম দুটি দলের হয়ে নির্বাচনে দাঁড়ানোর প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলেন। দুটো পার্টিরই হেভিওয়েট নেতাদের পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি ফুটবলার। কেরলে এই পরিচয়েই মানুষের মনে থাকতে চান। রাজনীতিবিদ হিসেবে নন।
তিনি বরাবরই এরকম। ফুটবল খেলেছেন মনের আনন্দে। সেরকম আনন্দে মাতিয়েছেন আপামর ফুটবলপ্রেমীদের। ব্যস তাতেই, তিনি সন্তুষ্ট। ফুটবল বিশেষজ্ঞরা বলেন, ফুটবল কেরিয়ারে আর একটু যদি নিজের সম্পর্কে সিরিয়াস হতেন, তাহলে হয়তো ভারতীয় ফুটবলের সর্বকালের সেরা স্ট্রাইকার হয়ে যেতেন। কিন্তু এখনও তো শুধু ফুটবল নিয়েই ভাবেন তিনি। নাহলে আসমুদ্রহিমাচল লোকসভা ভোটে দাঁড়ানোর একটা টিকিটের জন্য পাগলের মতো করছে, আর তিনি সেই টিকিট পেয়েও হেলায় হারালেন। তাও একটা দলের থেকে নয়। প্রস্তাব এসেছিল, কেরলের দু’দুটো রাজনৈতিক দলের হেভিওয়েট রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বর থেকে।
[মাঠে অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি, শাস্তির মুখে পড়তে চলেছেন রোনাল্ডো]
ফুটবল খেলে বিজয়ন কেরলে যে পরিমাণ জনপ্রিয়, চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা যাবে না। এখনও রাজ্যের যে প্রান্তে যান, তাঁকে দেখার জন্য পাগল হয়ে যায় মানুষ। বিজয়নের এই জনপ্রিয়তাকেই এবার কাজে লাগাতে চেয়েছিল কেরলের কংগ্রেস, সিপিএম দু’দলই। কেন না, এবার বিভিন্ন রাজ্যেই দেখা যাচ্ছে ভোটারদের সহজে কাছে পাওয়ার জন্য সেলিব্রিটি প্রার্থী দাঁড় করাতে। আর সেই সূত্রেই লোকসভায় নিজেদের দলের প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করানোর জন্য বিজয়নের কাছে দৌড়েছিল কংগ্রেস, সিপিএম দু’দলই। এই মুহূর্তে কেরলে ক্ষমতায় থাকা সিপিএমের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ বিজয়নের। আবার কংগ্রেস জমানার মুখ্যমন্ত্রী ওমেন চান্ডিও বিজয়নের খুব কাছের। দু’জনেই তাই ভাবেন, লোকসভায় দাঁড়ানোর প্রস্তাব দিলে বিজয়ন তাঁদের না করতে পারবেন না। সেভাবেই কংগ্রেসের তরফে ওমেন চান্ডি বিজয়নকে প্রস্তাব দেন, তাঁর বাড়ি ত্রিচূর থেকে ঘন্টা খানেক দূরত্বে ‘পালাক্কাড’ লোকসভা কেন্দ্রে দাঁড়ানোর জন্য। আবার পিনারাই বিজয়ন সিপিএমের পক্ষে প্রস্তাব দেন, কালিকটের কাছাকাছি মালাপ্পুরম লোকসভা কেন্দ্রে দাঁড়ানোর জন্য।
দুই প্রিয় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বর থেকে লোকসভা ভোটে দাঁড়ানোর প্রস্তাব পেয়ে সতি্যই মুশকিলে পড়ে যান তিনি। পরে স্ত্রী রাজির সঙ্গে আলোচনা করে ঠিক করেন, আর যাই করুণ রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করবেন না। ফলে দুই পার্টির নেতাকেই জানিয়ে দেন, তিনি রাজনীতিতে আসতে চান না। ফুটবল নিয়েই থাকতে চান। বিজয়নের মতামত জানার পরেই লোকসভা ভোটে নিজেদের প্রার্থীদের নাম জানিয়ে দেয় সিপিএম। লোকসভা ভোটে যেখানে একটা টিকিটের জন্য দল ছেডে় নেতারা অন্য দলে চলে যাচ্ছেন, সেখানে দুটো দলের থেকেও টিকিট পেয়ে কেন দাঁড়ালেন না? তিরুবনন্তপুরম থেকে একটা ফুটবল ম্যাচ খেলে ফেরার পথে ফোনে বিজয়ন বলছিলেন, “কে কী করছে জানি না। আমি রাজনীতিতে আসতে চাই না। ফুটবল খেলে কেরলের মানুষের মনে আমার একটা সম্মানের জায়গা আছে। রাজনীতিতে ঢুকে সেই জায়গা আমি হারাতে চাই না।”
[রোনাল্ডো ম্যাজিক, সিআর সেভেনের হ্যাটট্রিকে অবিশ্বাস্য কামব্যাক জুভেন্তাসের]
কিন্তু নির্বাচনে জিতে লোকসভায় গিয়ে রাজ্যের জন্য অনেক কিছু করতে পারতেন। বিজয়ন হেসে বললেন, “সবার জন্য সব কিছু নয়। আমি এই বয়সে এখনও ফুটবল খেলে দিতে পারি। আর যতদিন পারব, খেলেও যাব। রাজনীতি আমাকে কোনওদিনও আকর্ষণ করে না। হয়তো মাঝে মধ্যে সিনেমা করব। কিন্তু রাজনীতি নয়। তাই ভোটেও দাঁড়ানো হল না। বলেই ফোনে হাসতে শুরু করে দিলেন আইএম বিজয়ন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.