বাইচুং ভুটিয়া: সুনীল, বিরাট, দিল্লির ছেলেরা একটু অন্যরকম। ভীষণ দ্রুত কথা বলে। কিন্তু যা করে হৃদয় দিয়ে।
কারও নাম নিতে চাই না। কিন্তু সুনীল ছেত্রী (Sunil Chhetri) যে সময়ে মোহনবাগানে খেলা শুরু করল, বেশ কয়েকজন মারাত্মক প্রতিভাবান ফুটবলার ছিল। সেই সময় এদের সবার মধ্যে পার্থক্য ছিল বড় জোর উনিশ-বিশ। এই দলটা থেকে ছিটকে গিয়ে সুনীলের অনেক উপরে উঠে যাওযার একটাই কারণ, নিজের পেশার প্রতি মারাত্মক ফোকাসড।
সুনীলের ব্যাচের কোনও ফুটবলারের সঙ্গে কথা বলবেন, আর সুনীলের সঙ্গে কথা বলবেন। তাহলেই বুঝে যাবেন, সুনীল কেন অন্যদের থেকে এগিয়ে। জীবনের প্রতি ওর দৃষ্টিভঙ্গী, মনোভাব, পেশাদার ফুটবলার হিসেবে ওর আচরণ, সব কিছুর জন্য ও নিজেকে অন্যদের থেকে আলাদা করে ফেলেছে।
মোহনবাগানে প্রথম যখন সুনীলকে পেলাম, তখন খুবই ছোট ছিল। দলেও ঠিকভাবে সুযোগ পেত না। পরে বব হাউটনের কোচিংয়ে জাতীয় দলে এল সুনীল। এর ঠিক আগেই হতাশা থেকে আমি ঠিক করে ফেলেছিলাম, জাতীয় দল থেকে অবসর নিয়ে নেব। এরকম সময় হাউটন আসায় নতুন করে যেন অক্সিজেন পেলাম। আর সেই সময় সুনীল শিবিরে এল। এতদিন পরেও নিশ্চিত করে বলতে পারব না, স্ট্রাইকিং পার্টনার হিসেবে আমার কাকে বেশি পছন্দ আইএম বিজয়ন না সুনীল ছেত্রী?
পাড়ার ফুটবলেও ৯৪ গোল করা জাস্ট অসম্ভব। এটুকু বলতে পারি, হাউটনের সেকেন্ড ফর্মেশনে সুনীলের সঙ্গে খেলতে দারুণ লাগত। আমাদের দু’জনের বোঝাপড়ায় কত গুরুত্বপূর্ণ গোল হয়েছে। আমার ধারণা, সুনীলও নিশ্চয়ই মাঠের ভিতর আমাদের পার্টনারশিপের সেই দিনগুলি ভুলতে পারেনি। সেই সময়টায় জাতীয় শিবিরে যাওয়ার জন্য আমরা মুখিয়ে থাকতাম।
আমরা তখন পর্তুগালে। ঠিক হল, বিকেলের প্র্যাকটিসে যে ভুল করবে তাকে সন্ধ্যায় বিচের উপর কফি শপে সবাইকে কফি খাওয়াতে হবে। প্র্যাকটিসের পরও আমরা কেউ হোটেলের রুমে থাকতাম না। লবিতে নেমে আসতাম। এখনকার গম্ভীর সুনীলকে দেখলে ধারণাই করতে পারবেন না, সুনীল তখন কত কথা বলত। আমার ঠিক বন্ধু নয়। সুনীল আমার ছোট ভাইয়ের মতো। সেই ভাইটা ধীরে ধীরে এত উচ্চতায় চলে গেল যে, নিজেরই গর্ব হয়। কিন্তু পা সেই মাটিতেই আছে।
গত বছর প্লেয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের অনুষ্ঠান হল কলকাতায়। ফের দেখা হল সেই ব্যাচের ফুটবলারদের সঙ্গে। অনেকটা রিইউনিয়নের মতো। ব্যস, শুরু হয়ে গেল সেই সময়কার গল্প। মাঠের বাইরে কে কী করতাম। কে কাকে ‘লেগপুল’ করত। হাউটনকে কে বেশি ভয় পেত। প্রতিবারই আমরা প্রতিজ্ঞা করি, বছরে অন্তত আমাদের সবার একদিন করে দেখা করা উচিত। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সময় আর হয় না।
সুনীল অনেক ছোট। কিন্তু দল চালানোর সময় অনেক ক্ষেত্রে সুনীলের পরামর্শ নিয়েছি। ওর মাথাটা ভীষণই পরিষ্কার। যে বুদ্ধিটা দেবে, জানি সেটা কাজে লাগবে। আমাদের দলে সুনীল সবচেয়ে বেশি ঘনিষ্ঠ ছিল রেনেডির। আর কী আশ্চর্য, এদিন সুনীল যখন জাতীয় দল থেকে অবসর নেওয়ার কথা ঘোষণা করছে, রেনেডি তখন স্ত্রীকে নিয়ে সিকিমে আমার বাড়িতে ঘুরতে এসেছে। দু’জনেই আলোচনা করছিলাম, ৬ জুন যুবভারতীতে সুনীলের শেষ ম্যাচে আমাদের উপস্থিত থেকে ওকে সম্মান জানানো উচিত। সমস্যা অন্য জায়গায়। সেই সময় সিকিমে নির্বাচনের ফল প্রকাশ হবে। ফলে কী অবস্থায় থাকব, এই মুহূর্তে সত্যিই বলতে পারছি না। তবে যাওয়ার ভীষণ ইচ্ছে রয়েছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.