Advertisement
Advertisement

হারের নজিরবিহীন শাস্তি, কোচের নির্দেশে ন্যাড়া হলেন হকি খেলোয়াড়রা

বিতর্ক তুঙ্গে ক্রীড়ামহলে।

Hockey players head tonsured
Published by: Tanumoy Ghosal
  • Posted:January 21, 2019 10:37 am
  • Updated:January 21, 2019 10:37 am  

দীপক পাত্র: খেলার মাঠে খারাপ পারফরম্যান্সের জন্য খেলোয়াড়দের কী কী শাস্তি দেওয়া হতে পারে? পরের বার দল থেকে বাদ। হয়তো একেবারে কেরিয়ারই শেষ!  কিন্তু বাংলা হকি দলের খেলোয়াড়দের মাথা ন্যাড়া করতে বাধ্য করল রাজ্য হকি সংস্থা। এমন ন্যক্কারজনক ঘটনা বাংলা বা জাতীয় পর্যায় তো বটেই, বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনে কোথাও ঘটেছে কি না সন্দেহ!
স্তম্ভিত বাংলা ক্রীড়ামহল। প্রত্যকেই এই ঘটনাকে ধিক্কার জানিয়েছেন। কোচকে চরম শাস্তির দাবিতে সকলে মুখর। অনেকে মনে করছেন, এরকম ‘শাস্তি’ ভোগের পর ভাগ্যিস কোনও খেলোয়াড় নিজেদের জীবন নিয়ে চরম কিছু ঘটিয়ে ফেলতে পারে কিংবা গভীর হতাশায় হকি খেলাটা থেকেই চিরতরে দূরে সরতে যেতে!

[ কলঙ্কিত SAI, দুর্নীতির অভিযোগে ছ’জনকে গ্রেপ্তার করল সিবিআই]

Advertisement

এমনিতেই বাংলার হকিতে এখন দৈন্যদশা চরমে। এ রাজ্যে হকির তেমন চল নেই বললেই চলে। তবু জাতীয় অনূর্ধ্ব-১৯ হকিতে বাংলা থেকে দল পাঠানো হয়েছিল জবলপুরে। বাংলা পরপর দু’টো ম্যাচ জেতেও। প্রথমে হারায় ৪-০ গোলে গুজরাতকে। অন্ধ্রপ্রদেশকে আরও সহজে, ৯-১ গোলে। এরপর কোয়ার্টার ফাইনালে বাংলা মুখোমুখি হয় পাঞ্জাবের নামধারী অ্যাকাডেমি দলের। যারা বছরভর আধুনিক হকিতে শিক্ষিত হওয়ার সমস্ত সুযোগ-সুবিধা পায়। সেই ম্যাচে বাংলা হেরে যায় ১-৫ গোলে। ব্যস, প্লেয়ারদের উপর শুরু হয়ে যায় জুনিয়র বাংলা হকি দলের কোচ পঙ্কজ আনন্দের অকথ্য গালিগালাজ। এমনিতেই তিনি নাকি প্রত্যেক ম্যাচের আগে প্লেয়ারদের বলতেন, “তোমরা মোটেই ভাল খেলো না। এখানে হারলেই প্রত্যেকে ন্যাড়া হতে হবে।” অভিযোগ, কোচ নাকি ম্যাচের আগে ব্লেড সমেত টিম মিটিংয়ে হাজির থাকতেন। যাতে তাঁর ‘হুমকি’কে প্লেয়াররা আরও বিশ্বাস করে। 

শোনা যাচ্ছে, জাতীয় পর্যায়ের টুর্নামেন্টে কোয়ার্টার ফাইনালে বাংলা দল উঠলেও কোচ নাকি সন্তুষ্ট ছিলেন না। এবং যাবতীয় ক্ষোভ উগরে দেন নামধারী-র কাছে হারতেই। প্লেয়ারদের শাসান, তোমাদের শাস্তির কথা আগেই বলে রেখেছিলাম। এবার তোমরা ঠিক করো কী করবে। সূত্রের খবর, ঠিক ছিল নাকি জবলপুরেই মাথা ন্যাড়া করানো হবে যুব বাংলা হকি প্লেয়ারদের। কিন্তু একসঙ্গে জনা কুড়ি ছেলেকে ন্যাড়া করানো মানেও তো প্রায় হাজার তিনেক টাকার ধাক্কা। তখন কোচ তাঁদের বলেন, তোমরা বাড়ি গিয়ে ন্যাড়া হবে। আর সেই ছবি মোবাইলে পাঠাবে। নইলে তোমাদের ভবিষ্যতে বাংলার হয়ে খেলা শেষ। বাধ্য হয়ে প্লেয়াররা বাড়ি ফিরে ন্যাড়া হয়ে সেই ছবি কোচের কাছে পাঠিয়েছেন। যা দেখেটেখে নাকি আপাতত ‘শান্ত’ হয়েছেন কোচ। তবে দু’জন খেলোয়াড় কোচের তুঘলকি সিদ্ধান্তে সাড়া দেননি। তাঁদের মধ্যে একজন জানিয়েছেন, পরিবারের কেউ মারা না গেলে তাঁর পক্ষে ন্যাড়া হওয়া অসম্ভব। অন্যজন কোচের ভয়ে এখনও পালিয়ে বেড়াচ্ছেন! নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক এক হকি খেলোয়াড় জানিয়েছেন, আমরা কোচের নির্দেশেই ন্যাড়া হয়েছি। কোচ জবলপুরে হারার পর স্পষ্ট জানিয়ে দেন, আমাদের বাড়ি ফিরে ন্যাড়া হতে হবে। যে প্লেয়ার ন্যাড়া হওয়ার ছবি না পাঠাবে তাকে আর বাংলা দলে নেওয়া হবে না। তাই বাধ্য হয়ে আমরা ন্যাড়া হওয়ার ছবি কোচের কাছে পাঠিয়েছি।  এমনকী রবিবার বিএইচএ-র মাঠে সরেজমিনে দেখবেন বলে খেলোয়াড়দের প্রতে্যককে মাঠে আসতে বলেছিলেন ওই কোচ। কিন্তু খবরটা জানাজানি হয়ে যাওয়ায় ছেলেদের আসতে বারণ করে দেন।

যথারীতি খেলোয়াড়দের ন্যাড়া হওয়ার ফতোয়ার জারি অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বাংলার অনূর্ধ্ব-১৯ হকি দলের কোচ পংকজ আনন্দ। তাঁর সাফাই, “খেলার পর ছেলেদের বকাঝকা করেছি। কিন্তু কোনও ছেলেকে আমি ন্যাড়া হতে প্ররোচিত করিনি। ওরা বাড়ি গিয়ে যদি ন্যাড়া হয় তার জন্য আমি দায়ী হব কেন? আমি এই বিষয় ঘুণাক্ষরে জানি না।” স্বভাবতই প্রশ্ন উঠছে, তা হলে প্লেয়াররা কোচের বিরুদ্ধে এরকম গুরুতর অভিযোগ আনছেন কেন? কেনই বা দলের প্রত্যেক প্লেয়ার ন্যাড়া হলেন? উত্তর যথারীতি এড়িয়ে যান উত্তরপ্রদেশের ছেলে পঙ্কজ।  বাংলার হকি সংস্থার সচিব স্বপন বন্দে্যাপাধ্যায় আবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাই। ফলে তাঁকে কেউ চট করে দোষী সাব্যস্ত করার সাহস দেখাতে পারবে না। তাছাড়া বিষয়টা খতিয়ে দেখলে স্বপনবাবুকে পুরোপুরি দায়ী করাও যায় না। যেহেতু তিনি হকির এই বিষয়গুলো ঠিক দেখেন না। যা করার করেন ইস্তিয়াক আলি। যিনি রাজ্য হকি সংস্থা থেকে পদত্যাগ করলেও এখনও ছড়ি ঘুরিয়ে চলেছেন। তাঁকে ফোনে পাওয়া যায়নি। তবে তিনি নাকি ঘনিষ্ঠ মহলে জানিয়েছেন, তিনি এসবের মধ্যে নেই। সচিব পুরো বিষয়টা জানেন।

[ ফের কাঠগড়ায় টেবিল টেনিস তারকা, বিকৃত যৌনাচারের অভিযোগ স্ত্রীর]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement