সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: সাক্ষী মালিক (Sakshi Malik), ভিনেশ ফোগাটদের (Vinesh Phogat) তীব্র আন্দোলনে কি অস্বস্তি বাড়ছে হরিয়ানার গেরুয়া শিবিরে? আগামী বছরের লোকসভা এবং হরিয়ানা বিধানসভা নির্বাচনে কি প্রভাব ফেলতে পারে কুস্তিগিরদের প্রতিবাদের ঢেউ? এমনই সব প্রশ্ন উঠতে শুরু করে গিয়েছে হরিয়ানার গেরুয়া শিবিরের অন্দরমহলে।
সাক্ষী-ভিনেশদের প্রতিবাদ নিয়ে হরিয়ানার গেরুয়া শিবির মৌন নিয়েছে। আর তাতেই দলের ভিতরে বাড়ছে আশঙ্কা।
কুস্তিগিরদের আন্দোলনের পুরোভাগে রয়েছেন, সাক্ষী মালিক, ভিনেশ ফোগাট এবং বজরং পুনিয়া। এই তিন নামী কুস্তিগির হরিয়ানার। সাক্ষী মালিক রোহতকের মোখরা গ্রামের মেয়ে। ভিনেশ আবার চরখি দাদরির এবং বজরং পুনিয়া ঝাজ্জরের খুদান গ্রামের ছেলে।
কুস্তিগিরদের এই প্রতিবাদ প্রভাব ফেলেছে হরিয়ানায়, প্রভাব পড়েছে সেই রাজ্যের জনমানসেও। হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী মনোহর লাল খাট্টার জন সংযোগের সময়ে প্রবল বিরোধিতার সম্মুখীন হয়েছেন। কিছু ক্ষেত্রে মেজাজ হারাতেও দেখা গিয়েছে তাঁকে।
এদিকে কুস্তিগিরদের সমর্থনে এগিয়ে এসেছেন কৃষক আন্দোলনের নেতারা। কুস্তি ফেডারেশনের সভাপতি ব্রিজ ভূষণের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলার ডাক দিচ্ছেন।
বিরোধী কংগ্রেসও ঘটনা থেকে ফায়দা তোলার চেষ্টা করছে। কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধী কুস্তিগিরদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন, তাঁদের আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়েছেন।
এরকম আবহে হরিয়ানার বিজেপি নেতৃত্বের মুখে কুলুপ। তবে ব্যতিক্রমও রয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অনিল ভিজের কাছে অনুরোধ করা হয়, তিনি যেন কুস্তিগিরদের দাবি পার্টির সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে দেন।
হিসারের সাংসদ ব্রিজেন্দ্র সিং কুস্তিগিরদের যন্ত্রণা এবং অসহায়তা উপলব্ধি করতে সক্ষম হয়েছেন। ব্রিজেন্দ্রর বাবা এবং প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বীরেন্দর সিং আবার যন্ত্ররমন্তরে গিয়ে কুস্তিগিরদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এসেছেন।
গত মাসের গোড়ার দিকে, খাট্টারের সমর্থন চেয়েছিলেন কুস্তিগিররা। ভেবেছিলেন, খাট্টার হস্তক্ষেপ করবেন। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী সেই সময়ে বলেছিলেন, ”এই ঘটনা কেবলমাত্র হরিয়ানার নয়…।”
প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বীরেন্দর সিং জানান, তিনি বিজেপি সভাপতি জেপি নাড্ডার কাছে বিষয়টি উত্থাপ্পন করেন। তাঁকে জানান, এই নিষ্পৃহ আচরণ পার্টির বিশ্বাসযোগ্যতায় চিড় ধরাতে পারে। বীরেন্দর সিং আরও জানান, ”আমাদের পার্টি প্রধানের সঙ্গে দু’ বার সাক্ষাৎ করেছি। জানিয়েছি, কেবল মাত্র একটি রাজ্যের ঘটনা যেন একে মনে করা না হয়। এটা অত্যন্ত উদ্বেগের কারণ এবং পার্টির বিশ্বাসযোগ্যতা ধাক্কা খেতে পারে। নাড্ডাকে এই বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে অনুরোধ করেছি। ক্রীড়ামন্ত্রীকে অনুরোধ করে বন্ধুত্বপূর্ণ উপায়ে বিষয়টির সমাধানের অনুরোধ জানিয়েছি। আমি বলেছি, আমরা মহিলাদের ক্ষমতায়নের কথা বলি ফলে আমাদেরও সেভাবেই আচরণ করা উচিত।”
হরিয়ানার বিজেপি প্রেসিডেন্ট ওম প্রকাশ ধনকর জানিয়েছেন, তিনি ক্রীড়ামন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুরের সামনে বিষয়টি উত্থাপ্পন করেছেন। জোর দিয়ে তিনি বলেছেন, ”যন্তরমন্তরে আমাদের মেয়েরাই ধরনায় বসেছে। ওরা যেন সুবিচার পায়। মন্ত্রীও জানিয়েছেন, তাঁরা নিশ্চয়ই সুবিচার পাবেন।” উল্লেখ্য, দেশের ক্রীড়ামন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর গতকালই জানিয়েছেন, তদন্ত প্রক্রিয়া শেষ হওয়া পর্যন্ত যেন অপেক্ষা করেন ভিনেশ-সাক্ষীরা।
বিজেপি-র আর এক বর্ষীয়ান বিজেপি নেতা বলেন, ”এটা ঠিক যে বিষয়টি কেবল হরিয়ানার নয়। কিন্তু এটা নিঃসন্দেহে বড় একটা ঘটনা। বিজেপি ক্যাডার ভিত্তিক একটি দল এবং মুখ্যমন্ত্রী এব্যাপারে বিশেষ কিছু বলছেন না।” আর এক বিজেপি নেতা স্বীকার করেছেন, পার্টির নীরবতা বুমেরাং হয়ে ফিরতে পারে। তবে নির্বাচনের জন্য হাতে এখনও সময় আছে। কী হবে, তার উত্তর দেবে সময়।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.