সংবাদ প্রতিদিন-এর জন্য বিশেষ আইপিএল কলম লিখছেন কেকেআর অধিনায়ক৷ গৌতম গম্ভীর-এর কাছে ভাল খবর হল, ওদের দু’জনই আজকের ম্যাচে খেলতে তৈরি৷
আজ আমরা বেঙ্গালুরুতে খেলব৷ বেঙ্গালুরু– আহ! শহরটাকে যদি আমার ব্যাগে পুরে বাড়ি নিয়ে যেতে পারতাম৷ যদিও একদিক দিয়ে শহরটা বেজায় ব্যস্ত৷ আরেকটা ক্লান্তিকর ব্যাপার হল, বেঙ্গালুরু শহর থেকে নতুন বিমানবন্দরে পৌঁছনোটা৷ মনে হয়, কঠিন জার্নিটার পর ফ্রেশ হতে আরেকবার দাড়ি কাটতে পারলে খুব ভাল হত৷ এছাড়া কিন্তু শহরটা ভীষণ মিষ্টি৷ তারুণ্যে ভরপুর৷ লোকজন দারুণ বন্ধুবৎসল৷ জিআর বিশ্বনাথ এবং রাহুল দ্রাবিড়ের শহরে প্রচুর পরিমাণে শুদ্ধতা৷ পার্কগুলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন৷ আর আমরা তো এখনও বেঙ্গালুরুতে যে কফি পাওয়া যায়, তার কথা বলিইনি৷ এখানে একটা কথা বলে রাখি– আমি মানুষটা কোল্ড কফির পোকা৷ ফিল্টারড কফির প্রতি আমার তীব্র অনাসক্তি ক্রিকেট সার্কিটে তকমা মারা৷
চিন্নাস্বামী নিয়ে ভাবলে ২০১১ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের সঙ্গে ‘টাই’ ম্যাচটা মনে পড়ে যায়৷ ওহ! কী ম্যাচ একটা৷ এর পাশে আমাদের ২০১৪ আইপিএল খেতাব এখানেই জেতা৷ কিন্তু বেঙ্গালুরুর কোন স্মৃতিটা আমি নিজের নাতি-নাতনিদের কাছে গল্প করব? তা হলে শুনুন, সেটা হল ন্যাশনাল ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে আমার কাটানো দিনগুলোর স্মৃতি৷ এনসিএ-র সেটাই প্রথম ব্যাচ৷ ২০০০ সাল৷ যুবরাজ সিং, মহম্মদ কাইফ, মুরলী কার্তিক, হরভজন সিং, জাহির খান– সেই প্রথম ব্যাচের কয়েকটা প্রতিভাবান নাম!
একদিন আমাদের সবাইকে এনসিএ-র একটা ফর্ম ভর্তি করতে বলা হল৷ ফর্ম ভরার কাজ ভালই চলছিল, যতক্ষণ না পর্যন্ত আমার এক ভবিষ্যত্ ইন্ডিয়া টিম-সতীর্থ ফর্মের একটা জায়গায় এসে থতমত খেতে শুরু করল! যা দেখে আমাদের সে কী মজা! ব্যাপারটা হল, ফর্মের ওই জায়গায় একটা সোজসাপ্টা প্রশ্ন ছিল– তোমার মাতৃভাষা কী? যার উত্তরে আমার সেই বন্ধু লিখেছিল ‘গোলাপি’! এই ভেবে যে, এনসিএ ওর কাছে ওর জিভের রং কী জানতে চেয়েছে৷ এরকম আরেকটা মজার কাণ্ড ঘটেছিল, যখন সেইসময়ের এনসিএ ডিরেক্টর মিস্টার হনুমন্ত সিং আমার অন্য এক ভবিষ্যত্ ইন্ডিয়া টিম-সতীর্থের সঙ্গে কথা বলছিলেন৷ প্রয়াত সিং সেদিন আমার সেই বন্ধুকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, “বিকাশ, (বন্ধুত্ব যাতে নষ্ট না হয়ে যায়, সেজন্য নামটা পাল্টে দিলাম) তোমার কি বাড়ির জন্য মন কেমন করছে?” আমার বন্ধু যার উত্তরে বলেছিল, “না স্যার, আমার বাড়িতে কারও শরীর খারাপ নয়৷ সবাই ভাল আছে৷”
যাক গে যাক! আইপিএলে ১১ ম্যাচের মধ্যে আমরা সাতটা জিতেছি৷ এবং আরেকটা ম্যাচ জিতে প্লে-অফ নিশ্চিত করার দিকে সাগ্রহে তাকিয়ে৷ আর সেটা যদি রবিবারই আরসিবি-কে হারিয়ে আমরা ঘটিয়ে ফেলতে পারি, তাতেও আপত্তি নেই৷ সেক্ষেত্রে, বেঙ্গালুরু আর আমার ভালবাসায় আরেকটা অধ্যায় যোগ হবে৷ শনিবার সন্ধ্যায় আমরা একদফা পুরোদমে প্র্যাকটিস করেছি৷ ক্রিস লিন এবং রবিন উথাপ্পা– আমার দুই চোট পাওয়া সতীর্থও পুরো অনুশীলন করল৷ সুতরাং ভাল খবর হল, ওদের দু’জনই আজকের ম্যাচে খেলতে তৈরি৷ আরসিবি এবারের আইপিএল থেকে ছিটকে যাওয়ার পাশাপাশি যেন চিন্নাস্বামীর পিচও কেমন মৃত হয়ে গিয়েছে! সাধারণত যে উইকেটে ব্যাটসম্যানদের জন্য সবকিছু থাকে, সেটাই এই মুহূর্তে স্লো আর লো পিচ! যার জন্য আমার মনও এখন দু’টুকরো হয়ে আছে৷ রবিবার কেকেআরের বোলিং কম্বিনেশনে স্পিন, না পেস– কোনটাকে ভারী করে নামব? দেখা যাক৷
আরও কয়েকটা প্রশ্নের উত্তর খুঁজছি৷ লিনের সঙ্গে কি আজ আমার ওপেন করতে যাওয়া উচিত? না কি ওপেনিং জুটি হওয়া উচিত ক্রিস লিন-সুনীল নারিন? একজন বাড়তি ব্যাটসম্যান, না বাড়তি বোলার– কোনটা বাছব? ব্যক্তিগতভাবে আমি আরসিবি-র মতো শক্তিশালী ব্যাটিং লাইন আপের বিরুদ্ধে একজন বাড়তি বোলার নিয়ে নামার পক্ষে৷ চিন্নাস্বামীর বাউন্ডারি ছোট৷ মাঠের সীমানার ধারে শরীর ছুড়ে অ্যাক্রোবেটিক স্টাইলে ক্যাচ লোফার প্র্যাকটিস তাই সাপোর্ট স্টাফকে বেশি দিতে হল এদিন৷ কে বলতে পারে, কখন হুট করে এই স্কিলের দরকার পড়বে!
ভাবছি আমার কয়েকজন টিমমেটকে নিয়ে বাহুবলী-টু দেখতে যাব৷ যদিও চূড়ান্ত কিছু হয়নি৷ এটাও বেঙ্গালুরুর একটা প্লাস পয়েণ্ট৷ আসলে এখানে আমার এক বন্ধুর মাল্টিপ্লেক্স আছে৷ তাই হাউসফুল থাক বা না থাক, আমার আর আমার বন্ধুদের জন্য সেখানে সিট থাকবেই৷ কী, আমি স্বার্থপর? ঠিক আছে, মেনে নিলাম৷
‘স্বার্থপর’ কথাটা ওঠায় আমি এটাও ভাবছি যে, এনসিএ কেন আমাদের মাতৃভাষা কী জানতে চেয়েছিল সেদিন?
দীনেশ চোপড়া মিডিয়া
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.