সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: নামে অনেক কিছুই আসে যায়। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমি ফাইনালে ইংল্যান্ডকে পাকিস্তানের উড়িয়ে দেওয়া টুর্নামেন্টের অন্যতম বড় অঘটন। সেমিতে পাকিস্তানের পরিত্রাতা ছিলেন ফাখার জামান। উর্দুতে ফাখারের অর্থ পরিত্রাতা। অচেনা এই ওপেনার এখন পাকিস্তানের সত্যিকারের ত্রাতা। নতুন নায়ক। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে অভিষেক। তিন ম্যাচেই ফাখারের ব্যাটিং বুঝিয়েছে লম্বা রেসের ঘোড়া হতে চলেছেন। ১০ বছর আগেও এই ক্রিকেটারের জীবন ছিল অন্যরকম। নৌবাহিনীতে নাবিকের কাজ করতেন। পাক ক্রিকেট দলের জার্সি চাপিয়েও দায়িত্বটা এক। দলকে নিশ্চিন্তের ঠিকানায় পৌঁছে দেওয়া। গুরু দায়িত্বে অনেকটাই সফল এই নতুন নক্ষত্র।
সইদ আনোয়ার, আমির সোহেল, সলমান বাটদের পর বিশ্বমানের কোনও বাঁ হাতি ওপেনার পায়নি পাকিস্তান। গত কয়েক বছরে অনেকে এলেও ছাপ ফেলতে ব্যর্থ। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে কার্যত নতুন দল নিয়ে এসেছিল পাকিস্তান। গুরুত্বপূর্ণ এই টুর্নামেন্টে তিন পাক ক্রিকেটারের অভিষেক হয়েছে। তাদের মধ্যে সবথেকে সফল ওপেনার ফাখার জামান। বাঁ হাতি এই ক্রিকেটার তিনটি ম্যাচের মধ্যে দুটোতে হাফ সেঞ্চুরি করেছেন। একটিতে ম্যাচ জেতানো ইনিংস। অথচ এই ফাখার পরিবারের পড়াশোনার চাপে এক সময় ক্রিকেটটাই ভুলতে বসেছিলেন। ছেলেবেলায় তাঁর ক্রিকেটের নেশা পছন্দ হয়নি অভিভাবকদের। পড়াশোনাতেই ছেলে মন দিক। চাইতেন বাবা ফাকির গুল। তাঁর মনে হয়েছিল, খেলা নিয়ে মেতে থাকলে ছেলের পড়াশোনার বারোটা বাজবে। চাকরিও জুটবে না। মারদান থেকে স্কুলের গণ্ডী পেরোনোর পর নৌবাহিনীতে নাবিকের চাকরিতে যোগ দেন ফাকহার। সময়টা ছিল ২০০৭। চাকরির মধ্যেও ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন ছাড়েননি ফাখার। সুযোগ পেলেই অফিসের ম্যাচে নেমে পড়তেন। এই সময় ফাখার নৌবাহিনীর ক্রিকেট অ্যাকাডেমির কোচ আজম খানের নজরে পড়ে যান। তাঁর পরামর্শেই মন দিয়ে ক্রিকেট। ২০১৩ তে চাকরি থেকে ইস্তফা। পাক তারকা ইউনিস খানের সঙ্গে দেখা করে ফাখার জানিয়ে দেন ক্রিকেটই তাঁর সব। তারপরই জীবনের মোড় ঘুরে যায়।
ইউনিসের নির্দেশে ফাখার জন্মভূমি মারদানে ফিরে যান। ২০১৬ থেকে চুটিয়ে খাইবার পাখতুনখোয়ার হয়ে ক্রিকেট খেলতে থাকেন। দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ের জন্য পাকিস্তান সুপার লিগেও জায়গা পেয়ে যান। যা নির্বাচকদের নজরে এড়ায়নি। ২০১৭-র শুরুতে জাতীয় দলে ডাক পান। আর চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির প্রথম ম্যাচ থেকে ওপেনিংয়ে। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে অনবদ্য ব্যাটিং। গত কয়েক বছরে জীবন বদলে গেলেও অতীতকে ভোলেননি ফাখার। নৌবাহিনীতে একদা তাঁর কোচ আজম খানের নামে রামদানে ক্রিকেট অ্যাকাডেমি তৈরি করেছেন। ছেলের এই চমকপ্রদ উত্থানে ফাখারের পরিবার বাকহারা। ফাখারের বাবা বলছেন, ছেলে আরও এগোবে। ভারতের বিরুদ্ধে ফাইনালে তাঁকে যে অনেক কিছু জানাতে হবে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.