দুলাল দে: মঙ্গলবার হাই ভোল্টেজ ম্যাচ। তাই সোমবার শ্বশুরবাড়ির দিকে পা বাড়ালেন না ভারতীয় দলের অধিনায়ক সুনীল ছেত্রী। ঠিক করেছেন, বাংলাদেশকে হারিয়ে তবেই যাবেন গল্ফগ্রিনে শ্বশুরবাড়িতে।
এমনিতে শুধু দেশের মধ্যে নয়, দেশের বাইরেও সুনীল যেখানেই দেশের জার্সিতে খেলেন, পরিবার থাকবেই। মানে, বাবা-মা আর স্ত্রী। কলকাতায় তার অন্যথা হবে কেন? বাবা-মা দিল্লি থেকে চলে এসেছেন। এবার আর শুধু বাবা-মা, স্ত্রী নন। শ্যালক, শাশুড়ি, পারিবারিক বন্ধু-বান্ধব সবাই মিলে ভারতের সমর্থনে থাকবেন যুবভারতীর গ্যালারিতে। তবে জামাইয়ের সমর্থনে সুব্রত ভট্টাচার্যর আজ যুবভারতীতে থাকার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।
শেষ কয়েক বছরে দেশের হয়ে খেলার সময় বোধহয় এতটা ফুরফুরে দেখা যায়নি সুনীলকে। সাংবাদিক সম্মেলনেও কোচ স্টিফেন কনস্ট্যানটাইনের পাশে বসে কথা বলতেন। কিন্তু যেন যন্ত্রর মতো। ইগর স্টিমাচের জমানায় এ যেন সেই পুরনো সুনীল। দায়িত্ব নিয়েই টিম হোটেলে মোবাইলে কথা বলা যাবে না, স্টিফেনের সময় তৈরি হওয়া এই ফতোয়া উড়িয়ে দিয়েছেন স্টিমাচ।
একটা সময় দক্ষিণ এশিয়ার দলগুলোর সামনে ত্রাসের মতো ছিলেন বাইচুং ভুটিয়া। এখন সেই জায়গায় সুনীল। খেলার স্টাইলে বেশ কিছু পার্থক্য ছাড়া বাকি অনেক কিছুতেই যে ভীষণ মিল। প্রতিপক্ষ নিয়ে ভেবে রাতের ঘুম নষ্ট করার দলে নেই দু’জনেই। “ইগর কোচ হয়ে আসার পর আমাদের মানসিকতাই পরিবর্তন করে দিয়েছেন। সব সময় পজিটিভ ভাবতে বলেন। চিনের বিরুদ্ধে যে মানসিকতা নিয়ে খেলতে নামি, বাংলাদেশের বিরুদ্ধে সেই মানসিকতাই থাকবে। আমার জন্য প্রতিপক্ষর নামটা বড় নয়। প্রতিপক্ষ সব সময়ই প্রতিপক্ষ।” বলেন ক্যাপ্টেন।
এখনও পর্যন্ত বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ৩টে ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েছেন। গোল করেছেন তিনটে ম্যাচেই। এমনকী আট বছর আগে এই যুবভারতীতেই জাতীয় দলের হয়ে শেষ ম্যাচেও গোল করেছেন দু’টি। “ওসব পুরনো কথা ছাড়ুন। আগে কী করেছি, তা নিয়ে ভেবে লাভ নেই। মঙ্গলবার গোল করছি কি না, সেটাই বড় ব্যাপার। জানেন তো, কাতার ম্যাচ জেতার পর কোচ বলছিলেন, বাংলাদেশ ম্যাচটা না জিততে পারলে, কাতার ম্যাচ থেকে পাওয়া ‘এক’ পয়েন্ট গুরুত্বহীন হয়ে যাবে। পরের রাউন্ডে যাওয়ার জন্য আমাদের এই ম্যাচটা জেতা ভীষণই জরুরি।”
কতদিন পরে ফের জাতীয় দলের জার্সি গায়ে যুবভারতীতে খেলতে নামবেন। কিছুটা যেন নস্ট্যালজিক হয়ে পড়লেন ভারতীয় ক্যাপ্টেন। “দেখুন কলকাতার ফুটবল ফ্যানরা সত্যিই পাগল সমর্থক। কিন্তু মনোভাবটা সত্যিই বদলে যাচ্ছে। আগে যাবতীয় আবেগ ছিল শুধুই ক্লাব দলকে নিয়ে। এখন জাতীয় দলকে নিয়েও আবেগটা বদলে যাচ্ছে। আমরা যখন বিমানবন্দরে নামলাম, শুনলাম, ৪২ হাজার টিকিট বিক্রি শেষ। জাতীয় দলের ক্যাপ্টেন হিসাবে খবরটা শোনার পর নিজের অনুভূতিটা বলে বোঝাতে পারব না। মঙ্গলবার ভরতি যুবভারতী আমাদের সমর্থনে গলা ফাটাবে। মাঠে নামার আগেই মানসিকভাবে আমরা এগিয়ে যাব।”
বিলক্ষণ জানেন, বাংলাদেশের কোচ তাঁকে মার্ক করবেন। তা নিয়ে কোথায় ভাববেন, বদলে বেশ ফুরফুরে। “করুক না মার্কিং। সমস্যাটা কোথায়? একজন, দু’জন, তিনজন, চারজন যতজন খুশি মিলে মার্কিং করুক আমাকে। তাতে তো আমাদের দলেরই ভাল। অন্য ফুটবলাররা ফ্রি খেলতে পারবে। এগুলো নিয়ে চিন্তা করি না। নিজের খেলাটা নিয়েই শুধু ভাবি। দেখুন, কোচ একটা নির্দিষ্ট পরিকল্পনা করেছেন। আমরা সেই পরিকল্পনামতো মাঠে নামব।’’ কিছুদিন আগেই অনলাইন স্ট্রিমিংয়ে দেখেছেন বাংলাদেশ-কাতার ম্যাচ। সেই প্রসঙ্গে বললেন, “দেখুন, টেকনিক্যাল ব্যাপারটা কোচ বললেই ভাল। তবে দেখে যা মনে হল, ওরা কাউন্টার অ্যাটাক নির্ভর খেলে। আমরাও সেভাবে তৈরি আছি। বাকিটা মাঠের ভেতর। গ্যালারি ভরতি যুবভারতীতে দর্শকদের হতাশ করতে চাইছি না।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.