টুটু বোস: ময়দানের শীত-গ্রীষ্ম হোক, কী জীবনের শরৎ-হেমন্ত, সুব্রতর সঙ্গে সংযোগ ও বন্ধুত্ব বরাবর অটুট থেকেছে। এত বড় মোহনবাগান ভক্ত দেখিনি! তেমনই দরাজ দিলের এহেন সুহৃদই বা ক’জনের ভাগ্যে জোটে? দীপ জ্বলে ওঠার রাতে সুব্রতর অকস্মাৎ বিদায় বুকের ভিতরটাকে তাই কুরে কুরে খাচ্ছে।
আমার স্ত্রী শম্পা যেদিন চলে গেল, খবর পেয়ে সুব্রত (Subrata Mukherjee) ছুটে এসেছিল। ড্রয়িং রুমে বসে আমার সঙ্গে দেড়-দু’ ঘণ্টা কথা বলে গেল টানা। তীব্র জলছাঁটের মতো সেদিন ফিরে-ফিরে এসেছিল অতীতের কত স্মৃতি ও সঙ্গসুখের অভিজ্ঞতা।
মোহনবাগানের (Mohun Bagan) নতুন ক্যান্টিন হয়েছে। ফোন করে বলল, এত যে সাজিয়ে গুছিয়ে ক্যান্টিন করলে, খাওয়াবে না? আমি বললাম, ও কী কথা! চলে, এসো। তোমার জন্য তো অবারিত দ্বার। সন্ধেয় চলে এল। টোস্ট, চিকেন স্টু, ডেভিল সাপটে খেল।
আমার স্ত্রী ও সুব্রতর স্ত্রী সম্পর্কে আত্মীয়া। মনে পড়ে যাচ্ছে যৌবনের সেই রঙিন আয়না-মাখা দিনগুলো। আমরা রেস্তরাঁয় বসে প্রেম করতাম, আর আমাদের ‘কমন’ ফ্রেন্ড সুশোভন রেস্তরাঁর নিচের তলায় বসে পাহারা দিত। ওর দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবন অগণিত ঘাত-প্রত্যাঘাতের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। বহু বাঁকবদলের সাক্ষী আমি। বন্ধুত্বের শর্ত রক্ষা করে সব কথা প্রকাশ্যে কখনও বলতে পারব না। মন্ত্রগুপ্তি না ভেঙে এটুকু শুধু বলতে পারি, বিশ্বাস করে নানা কথা ‘শেয়ার’ করত অক্লেশে। পরামর্শ চাইত।
লম্বা শোকগাথা লেখার প্রক্রিয়ায় আমি বিশ্বাস করি না। প্রিয় মানুষটিকে স্মরণ করার আন্তরিকতা তাতে ব্যাহত হয়। সশব্দ বাহুল্য এসে গ্রাস করে হাহাকারের কান্না। ইতিকথায় তাই বলব, তুমি যেখানেই থাকো, তৃপ্ত থাকো।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.