দীপক পাত্র: সত্যিই দুর্বোধ্য। বিষয়টা এমনই যেখানে ব্যাখ্যা করাই মুশকিল। ধরুন, সামান্য গায়ে জ্বর এসেছে। আপনি প্যারাসিটামল না খাইয়ে দুম করে শুরু করে দিলেন যাবতীয় টেস্ট। তারপর রোগীকে নিয়ে শুরু হল দৌড়ঝাঁপ। অবশেষে দেখা গেল সামান্য প্যারাসিটামল খাওয়াতেই রোগী ফিট। এটিকে মোহনবাগান (ATK Mohun Bagan) থেকে লোপেজ অ্যান্তনিও হাবাসের পদত্যাগের পিছনে এই ঘটনাই যেমন বারবার মনে আসছে।
সবে তো ছ’টা ম্যাচ খেলা হল। বাকি রয়েছে ১৪টা ম্যাচ। অর্থাৎ ৪২ পয়েন্টের খেলা এখনও বাকি। ৮ পয়েন্ট হয়েছে। একটা ম্যাচ জিতলে পৌঁছে যাবে ১১ পয়েন্টে। শুক্রবার এসসি ইস্টবেঙ্গলকে হারিয়ে নর্থইস্ট চলে এসেছে দশম থেকে সপ্তম স্থানে। লিগ টেবিলের দিকে একবার তাকান। শীর্ষে আছে মুম্বই এফসি (১৫ পয়েন্ট)। তারপরেই রয়েছে জামশেদপুর। তাদের পয়েন্ট ১১। তৃতীয় স্থানে রয়েছে হায়দরাবাদ (৯ পয়েন্ট)। সুতরাং পয়েন্টের দৌড়ে সহজেই সবুজ–মেরুন শিবির ঢুকে পড়বে দ্বিতীয় বা তৃতীয় স্থানে। হাবাস ব্যর্থ, অপারগ এমন কী টিম ম্যানেজমেন্টের চক্ষুশূল, তাও বলা যাবে না। তাহলে কী এমন ঘটল যেখানে লিগের শুরুতেই সরে যেতে হল? শোনা যাচ্ছে, তাঁকে এটিকে মোহনবাগান টিম ম্যানেজমেন্ট সরে যেতে বাধ্য করেছে। সেখানেও প্রশ্ন জাগে, এমন অনভিপ্রেত ঘটনার সাক্ষী থাকতে গেল কেন সবুজ–মেরুন শিবির?
মোহনবাগান (Mohun Bagan) অতীতে কোচ বদল করেছে। কিন্তু বিকল্পের নাম নিশ্চিত করে। এবার তাও হল না। দল সামলানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সহকারী কোচ মানুয়েল কাসকালানাকে। এখন তো আবার কোভিড পর্ব চলছে। নতুন একজনকে নিয়ে আসার অর্থ পনেরো দিনের জন্য কোয়রান্টাইনে চলে যাওয়া। তারপর যখন দলকে বুঝে উঠবেন ততদিনে আরও চার–পাঁচটা ম্যাচ চলে গিয়েছে। তাহলে এমন হটকারি সিদ্ধান্ত নিতে গেল কেন টিম ম্যানেজমেন্ট? বিশ্বাস করুন এই দুর্বোধ্য প্রশ্নের উত্তর সত্যিই হাতড়ে বেড়াতে হচ্ছে। অনেককে বলতে শুনছি, এটিকে আর এটিকে মোহনবাগান এক নয়। এটিকে জার্সিতে দু’বার তিনি দলকে চ্যাম্পিয়ন করতে পারেন। কিন্তু সবুজ–মেরুন জার্সির ওজন আলাদা। তাকে সামলানো সহজ কথা নয়। এখানেও জানতে ইচ্ছে করে, চাপটা হল কোথায়? আরে বাবা, কলকাতায় খেলা হচ্ছে না। টানা চারটে ম্যাচ জিততে না পারার জন্য ময়দানি গালিগালাজ শুনতে হয়নি। দল প্র্যাকটিসে ছিল গোয়ায়। তাছাড়া দর্শকশূন্য স্টেডিয়ামে গোয়ায় খেলা চলছে। সুতরাং চাপ অনুভব করলেন কোথায়? সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝড় উঠতেই পারে। তার মানে এই নয় যে, সরে যেতে হবে বা সরিয়ে দেওয়ার প্রয়োজন হয়ে পড়ল।
ট্যাকটিক্স নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন? সেখানেও একবার ভাবুন। এতদিন হাবাসের (Antonio López Habas) কোচিংয়ে খেলা দলকে সহজে গোল দেওয়া যেত না। গোল পেলেই নিজেদের দরজা বন্ধ করে দিতেন। এবার হচ্ছে না। এর জন্য কি স্প্যানিশ কোচ দায়ী? গত ম্যাচে বেঙ্গালুরুর (Bengaluru FC) সঙ্গে খেলায় এটিকে মোহনবাগান গোলগুলো খেয়েছে সেটপিস থেকে। সেটপিসে ডিফেন্ডারদের সবসময় বলা হয় প্রতিপক্ষের উপর কড়া নজর রাখো। কাউকে এক ইঞ্চি সুযোগ দিও না। হাবাসও নিশ্চয় কথাগুলো সকলকে বুঝিয়েছেন। ডিফেন্ডাররা যদি ভুল করে তাহলে একজন কোচের কিছু করার থাকে? সন্দেশ জিঙ্গান না থাকার জন্য অনেকে ডিফেন্সের ব্যর্থতার প্রধান কারণ মনে করছেন। সত্যিই কী তাই? গতবার সন্দেশ থাকাকালীন কিন্তু মুম্বই দলের কাছে তিনবার হেরেছিল এটিকে মোহনবাগান। সন্দেশকে বাদ দিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে এই দল। প্রীতম কোটাল, প্রবীর দাস, সুমিত রাঠীরাই খেলে দলকে চ্যাম্পিয়ন করেছিল। তাহলে সন্দেশকে নিয়ে কথা হচ্ছে কেন?
হাবাস সম্পর্কে শোনা যায়, হেরে গেলে পুরো দায়িত্ব নিজের কাঁধে নিয়ে নেন। কখনও কাউকে আসামীর কাঠগড়ায় তোলেন না। যতই তাঁর কোচিংয়ে খেলা দল টানা চারটে ম্যাচে ব্যর্থ হয়নি, বা কখনও কথা না শুনলে কাউকে নেক নজরে দেখেছেন, তাও নয়। নিশ্চয় সেই স্বভাবের জলাঞ্জলি এবার দিয়েছেন তাও বলা যাবেনা। তাঁর ব্যক্তিত্বই আলাদা। একটা দূরত্ব সবসময় বজায় রেখে চলেন। সাময়িক ব্যর্থতা অনেক সময় যে কোনও দলে আসে। ইপিএল থেকে শুরু করে লা লিগা, যেদিকে তাকান দেখবেন প্রতিটি দল ঠোক্কর খেয়েছে। আবার তারা ঘুরে দাঁড়িয়েছে। সেকেন্ড উইন্ডো খুলবে জানুয়ারিতে। একজন সেন্ট্রাল ডিফেন্ডার পজিশনে কাউকে নিয়ে এলেই চলতো। এই দল যথেষ্ট ভাল। অযথা চাপ বাড়াবার কোনও প্রয়োজন ছিল না। জানিনা পেশাদারিত্বের জাত্যাভিমানে কেউ কোনও ধাক্কা খেলেন কিনা। তবে অঙ্ক বলছে, বড্ড ভুল হয়ে গেল। হাবাস সরুন কিংবা সরিয়ে দেওয়া হোক, যাইহোক না কেন, সময়োপযোগী এই ঘটনা মানা যাচ্ছে না।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.