দুলাল দে: দায়িত্বে আসার পর থেকে কল্যাণ চৌবে, সাজি প্রভাকরণ জুটি নিজেদের মতো করে নতুন ভাবে সাজাতে চাইছেন ভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনকে। শুরুতে সন্তোষ ট্রফির সেমিফাইনাল-ফাইনাল বিদেশের মাটিতে আয়োজন করার পর, এবার নতুন একটি পরিকল্পনা করা হয়েছে ভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনের পক্ষ থেকে। ঠিক হয়েছে, প্রতিটি রাজ্যে ফুটবলের জনপ্রিয়তা বাড়ানোর জন্য, একজন করে ফুটবলারকে ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর হিসেবে নির্বাচিত করা হবে। মূলত তাঁদের মুখকে সামনে রেখেই রাজ্যগুলিতে ফুটবলের প্রচার চালাবে সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশন। কিন্তু কারা কারা হবেন সেই রাজ্যের ফুটবলের মুখ, তা নির্বাচন করার দায়িত্ব অবশ্য নিজেদের কাঁধে রাখতে চাননি ভারতীয় ফুটবল সংস্থার কর্তারা। ছেড়ে দিয়েছিলেন রাজ্য ফুটবল সংস্থাগুলির উপরে। এই মুহূর্তে ৩৬টি ফুটবল সংস্থারই ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডরের নাম এসে পৌঁছেছে সর্বভারতীয় ফুটবল সংস্থার কর্তাদের হাতে। যা কিছুদিনের মধ্যেই ঘোষণা করে দেবে এআইএফএফ।
কোন কোন গুণের অধিকারী হলে সেই ফুটবলারকে ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর হিসেবে বেছে নেওয়া হবে, তা নিয়ে নির্দিষ্ট করে কোনও নিয়ম-নীতি রাজ্য ফুটবল সংস্থাগুলিকে বলে দেয়নি ফেডারেশন। নিজেদের রাজ্যর ফুটবলের প্রসার বাড়ানোর জন্য ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর ঠিক করতে রাজ্য সংস্থাগুলিকেই পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছেন ফেডারেশন কর্তারা। তবে নির্বাচিত প্রতিনিধিকে ফুটবলার হতেই হবে। সে বর্তমান কিংবা প্রাক্তন যা-ই হোন না কেন। রাজ্য সংস্থাগুলি তাঁদের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডরের নাম ঠিক করে সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনে পাঠাবে। আর তাঁদের কাজে লাগাবে ফেডারেশন। এই নিয়মেই এআইএফএফের হাতে ৩৬টি ফুটবল সংস্থার ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডরের নাম এসে পৌঁছেছে। যা দেখা যাচ্ছে, তাতে মোটামুটি ভাবে প্রাক্তন ফুটবলারদেরই নাম ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর হিসেবে নির্বাচিত করেছে রাজ্য সংস্থাগুলি।
বাংলা থেকে এই মুহূর্তে অর্জুন ফুটবলার রয়েছেন পাঁচজন। সুধীর কর্মকার, সুব্রত ভট্টাচার্য, প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়, দীপক মণ্ডল এবং সুব্রত পাল। এঁদের মধ্যে সুধীর কর্মকার কোনওরকম ফুটবলের সঙ্গে যুক্ত থাকেন না। বয়সজনিত কারণে সুব্রত ভট্টাচার্যও এখন বেশিরভাগ সময় বাড়িতেই থাকেন। প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় ব্যস্ত রাজনীতিতে। বাকি রইলেন দীপক মণ্ডল এবং সুব্রত পাল। এর মধ্যে সুব্রত পাল শুধু অর্জুন নন। এঁদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি জাতীয় দলের হয়ে খেলেছেন। ২০১১-এশিয়ান কাপে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে তাঁর খেলা দেখে বিখ্যাত ফুটবল বিশেষজ্ঞরা তাঁকে ভারতের ‘স্পাইডারম্যান’ আখ্যা দিয়েছিলেন। তারমধ্যে এই কিছুদিন আগে পর্যন্ত আইএসএলে নিয়মিত খেলেছেন তিনি। কিন্তু ভারতীয় ফুটবল ফেডারেশন কর্তারা যে ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডরদের যে তালিকা পেয়েছেন, তাতে দেখা যাচ্ছে, বাংলা থেকে তাদের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর হিসেবে নাম গিয়েছে রহিম নবির। ফেডারেশন কর্তারা বলছেন, আইএফএ যাঁর নাম পাঠিয়েছে, তাঁর নামই তাঁরা ঘোষণা করবেন।
কেরলের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর হিসেবে যাঁর নাম পাঠানো হয়েছে, তাঁকে নিয়ে কোনও বিতর্ক ওঠারই সুযোগ নেই। কারণ, কেরল নাম পাঠিয়েছে আইএম বিজয়নের। যেমন গোয়া তাদের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর ঠিক করেছে ব্রুনো কুটিনহোকে। কাশ্মীর থেকে বড় ফুটবলার বলতে তিনজনের নাম উঠে আসে। আব্দুল মজিদ, মেহরাজউদ্দিন এবং ইসফাক আহমেদ। কাশ্মীর ঠিক করেছে আব্দুল মজিদকে। তবে সিকিম এবং মণিপুর দুটো রাজ্যই তাদের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর হিসেবে মহিলা ফুটবলারের নাম পাঠিয়েছে। পুরুষ ফুটবলারের নাম ঠিক করলে সিকিম থেকে বাইচুং আর মণিপুর থেকে রেনেডির নাম নিশ্চিত ছিল। কিন্তু সিকিম পাঠিয়েছে পুষ্পা ছেত্রীর নাম। আর মণিপুর প্রাক্তন ভারতীয় অধিনায়ক, মহিলা অর্জুন ফুটবলার বেম বেম দেবীর নাম। এক্ষেত্রে বাইচুং বললেন, ‘‘আমি সিকিমের ফুটবল সংস্থায় রয়েছি। এই অবস্থায় আমার নাম দেওয়া ঠিক নয়। মহিলা ফুটবলার নির্বাচিত করে ভালই হয়েছে।’’
সুনীল ছেত্রী এখন দিল্লিতে থাকেন না বলে তাঁর নামও ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর হিসেবে পাঠায়নি দিল্লি ফুটবল সংস্থা। পাঠানো হয়েছে প্রাক্তন ফুটবলার তরুণ রায়ের নাম। এবার নির্বাচিত ফুটবলারদের কীভাবে রাজ্যের ফুটবল প্রসারে কাজে লাগানো হবে, তার রূপরেখা ঠিক করে দেবে সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশন।
ঠিক হয়েছে, জুনিয়র ফুটবলারদের সঙ্গে কথা বলে উদ্বুদ্ধ করা ছাড়াও, ফুটবলের প্রসারে তাঁদের রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চলে পাঠানো হবে। ফুটবলের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর নির্বাচন করার আগে তাই রাজ্য সংস্থাগুলি দেখেছে, জুনিয়র ফুটবলারদের মধ্যে সংশ্লিষ্ট ফুটবলারদের প্রভাব কতটা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.