দুই বন্ধু একই ফ্রেমে। বিরাট কোহলি ও সুনীল ছেত্রী।
শিলাজিৎ সরকার: বৃহস্পতিবার গোটা দেশকে চমকে দিয়ে অবসরের সিদ্ধান্ত জানান সুনীল ছেত্রী। তার পরই আবেগের বিস্ফোরণ গোটা দেশে। ৬ জুন যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে ভারত-কুয়েত ম্যাচই হয়ে যাচ্ছে সুনীল ছেত্রীর শেষ ম্যাচ। সেই ম্যাচের জন্য এখন থেকেই পারদ চড়তে শুরু করে দিয়েছে।
শুক্রবার ভারতের ফুটবল দলের অধিনায়ক জানালেন, বিরাট কোহলির (Virat Kohli) সঙ্গে আলোচনা করেই তিনি অবসরের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। বিরাট কোহলি আর সুনীল ছেত্রী দুজনেই দিল্লির ছেলে। দুজনেই একে অপরের খুব ভালো বন্ধু। দুজনেই ভেগান। সেই সুনীল ছেত্রী শুক্রবার বলেন, ”অবসরের সিদ্ধান্ত নিয়ে বিরাট কোহলির সঙ্গে কথা বলেছি। কারণ আমরা ভালো বন্ধু। একে অপরকে ভালো বুঝি। তাই ওর সঙ্গে কথা বলি। আর বিরাটকে ১৮ তারিখের জন্য শুভেচ্ছাও জানিয়েছি।”
১৮ তারিখ আইপিএলের প্লে অফে পৌঁছনোর লড়াইয়ে নামছেন বিরাট কোহলি। রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর প্রতিপক্ষ আবার চেন্নাই সুপার কিংস। দুই মহাতারকার লড়াই দেখবে চিন্নাস্বামী। বিরাট কোহলি বনাম মহেন্দ্র সিং ধোনি। এই লড়াই ঘিরে ফুটছে দেশ। এই আবহেই বন্ধু কোহলিকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন সুনীল ছেত্রী।
উল্লেখ্য, সুনীল ছেত্রীর (Sunil Chhetri) অবসরের ঘোষণায় আবেগঘন প্রতিক্রিয়া দিয়েছিলেন কোহলি। ইনস্টাগ্রামে কোহলি লেখেন, “তুমি আমার ভাই। তোমার জন্য আমি গর্বিত সুনীল।”
কোহলিও এক সাক্ষাৎকারে সুনীলের অবসর নিয়ে মুখ খুলেছেন। বিরাট বলেছেন, ”সুনীল আমার খুব ভালো বন্ধু। ও আমাকে মেসেজ করেছিল। জানিয়েছিল, অবসর নিতে চলেছে। আমি বলতে চাই, অবসরের সিদ্ধান্ত নেওয়ায় ও শান্তিতেই রয়েছে। বহুবছর ধরে ওর সঙ্গে আমার বন্ধুত্ব। সুনীল ছেত্রী দারুণ এক মানুষ।”
৬ জুন যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে বহু প্রতীক্ষিত সেই ফুটবল যুদ্ধ। এর আগে যুবভারতীর সবুজ ঘাসে অনেকেই ‘শেষের কবিতা’ লিখে গিয়েছেন। এবার পালা সুনীল ছেত্রীর। দেশের জার্সিতে শেষবার খেলতে নামছেন ভারতের ১১ নম্বর জার্সিধারী। বিশ্বকাপের যোগ্যতাপর্বের ম্যাচটির ভেন্যু সম্পর্কে সুনীল বলছেন, ”কুয়েত ম্যাচটা আয়োজনের জন্য কলকাতাই সেরা ভেন্য়ু। কারণ ম্যাচটা জিতলে আমাদের ২০২৬ বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জন পর্বের তৃতীয় রাউন্ডে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। কলকাতার থেকে বেশি সমর্থন আমরা এদেশে কি আর পাব? তাই এই ম্যাচের জন্য কলকাতার থেকে ভালো জায়গা পেতাম না।” যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গন যেন সুনীল ছেত্রীর কাছে যৌবনের উপবন আর বার্ধক্যের বারাণসী।
প্রতিটি মাইলস্টোন ম্যাচে গোল রয়েছে সুনীল ছেত্রীর। অভিষেক ম্যাচে গোল করেছিলেন। দেশের জার্সি প্রথমবার হাতে নিয়ে তাতে পারফিউম ছড়িয়েছিলেন। দেড়শো নম্বর ম্যাচে তাঁর প্রতিপক্ষ ছিল আফগানিস্তান। সেই আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে পেনাল্টি থেকে গোল করেছিলেন ভারত অধিনায়ক। তাঁর গোল সংখ্যা ৯৪। কিন্তু আন্তর্জাতিক ফুটবল কেরিয়ারে পূর্ণছেদ টেনে দেওয়ায় সেঞ্চুরি গোল আর হবে না সুনীলের। গোলসংখ্যার নিরিখে রোনাল্ডো-মেসির পরেই সুনীল। ফিফাও কুর্নিশ জানিয়েছে ভারতের কিংবদন্তি ফুটবলরাকে। সুনীল নিজে কী বলছেন একশো গোল নিয়ে? তাঁর কথায়, ” ১০০ গোলের কথা কখনও ভাবিনি। তাই সেটা না করতে পারা নিয়ে কোনও আক্ষেপ নেই। বরং জাতীয় দলের হয়ে ১৯ বছরে ১৫০ ম্যাচ খেলার খুশি আছে। সেটা ইউনিক কাজ। কিন্তু ১০০ গোল না করতে পারার হতাশা কখনও ছিল না।”
কেন অবসরের সিদ্ধান্ত নিলেন? তিনি নিজে বলেছেন, আমার ভিতরের শিশুটা এখনও খেলে যেতে চায়। কিন্তু পরিণত আমার মনে হয়েছে, এটাই সরে দাঁড়ানোর সেরা সময়। ঠিক কবে, কখন অবসরের চিন্তা মাথায় আসে সুনীলের? তিনি বলছেন, ”আফগানিস্তান ম্যাচের দিন দশেক পর জাতীয় দল থেকে অবসরের ভাবনা প্রথম মাথায় আসে। তবে শারীরিক কারণে অবসর নিচ্ছি না। শারীরিকভাবে এখনও আমি চূড়ান্ত ফিট। তবে ফুটবলে শরীরটাই সব নয়। বয়স হলে অনেক প্রায়োরিটি বদলে যায়। মনে হয়, এবার থামতে হবে। জাতীয় দলের হয়ে খেলাটা মিস করব। জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া। রেনেডি, বাইচুং থেকে ছাংতেদের সঙ্গে খেলা মিস করব। তবে এবার থামতে হবে।” তিনি বলছেন এখনই শেষ। এখনই থামতে হবে। দেশের ফুটবলপ্রেমীরা বলছেন, ”এখনই শেষের গান গেয়ো না।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.