কলহার মুখোপাধ্যায়, বিধাননগর: চেহারাগুলো ক’দিন আগেও বেশ হাট্টাকাট্টা ছিল। শরীরে ভীমের বল। ফুটবলের মাঠে একবার চার্জ করলে প্রতিপক্ষ খেলোয়াড় ছিটকে কার্যত পাঁচ হাত দূরে গিয়ে পড়েন। লকডাউনের এই ক’মাসে শক্তি ক্রমশ ক্ষীণ। পেল্লায় শরীর কিছুটা কৃশ হয়ে গিয়েছে।
এঁরা সবাই এসেছেন বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে। কেউ আইভরি কোস্ট, কেউ নাইজেরিয়া, কেউবা এসেছেন ঘানা থেকে। উদ্দেশ্য, কলকাতায় ফুটবল খেলা। প্রতিবারই আসেন। মরশুম শেষ হলে দেশে ফিরে যান। কিন্তু এবার ফিরে যাওয়া হয়নি। লকডাউনে নিউটাউনের গৌরাঙ্গনগরে আটকে শ’দেড়েক আফ্রিকান যুবক। একটি ঘরে চার-পাঁচজন করে সারাদিন বন্দি অবস্থায় দিন কাটছে তাঁদের।
খেলার সিজনে একটা ম্যাচ পিছু দুই থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত রোজগার করেন কেউ কেউ। দিনে অনেকে দু-তিনটে ম্যাচ খেলেন। এরপর বেশ কিছু টাকা জমিয়ে দেশে ফিরে যান। এখন জমানো পুঁজিও শেষ। এমনকী খাবারের সংস্থানও হচ্ছে না। একে খেলোয়াড় তায় ওরকম পেল্লায় শরীর। তাঁদের খেতে দেখলে একজন সাধারণ বাঙালি ভিরমি খাওয়ার জোগাড়! এক প্যাকেট পাস্তা বা ১০টা ম্যাগি দুই মিনিটে সাবাড় করে দেওয়া কোনও ব্যাপারই নয় এই যুবকদের কাছে। দু’জনের খেতে এক কেজি চিকেন লাগে রোজ। একজন দিনে ১০ থেকে ১২টা ডিম খাবেনই খাবেন। আর এখন পয়সা ফুড়িয়েছে বলে আধপেটা থাকতে হচ্ছে। তাঁদের জন্য যথাসাধ্য ত্রাণের ব্যবস্থা করেছেন নিউটাউনের তৃণমূলের যুবনেতা আফতাবউদ্দিন। তা মোটামুটিভাবে অল্পবিস্তর করে রোজই পাচ্ছেন এই আফ্রিকান ফুটবলাররা। তবে আমফানের পর কিছুটা ভাটার টান তাতে। ফলে কোনওদিন ভাত আর একটা মাত্র ডিম দিয়ে লাঞ্চ ও ডিনার। মধ্যিখানে আবার কিছুই জুটছে না।
একটি দশ ফুট বাই দশ ফুটের ঘরে পাঁচজনে একসঙ্গে গা ঘেষাঘেষি করে থাকাটাও ক্রমশ যেন অসহনীয় হয়ে পড়ছে। করোনার কারণে বাইরে বেরনোয় নিষেধাজ্ঞা। সম্বল বলতে মোবাইল। সেটিও রিচার্জ করার টাকা নেই অধিকাংশের। এমন পরিস্থিতিতে গৌরাঙ্গনগরের গোটা দশেক বাড়িতে একপ্রকার অস্বাভাবিক জীবন কাটাচ্ছেন আফ্রিকার এই যুবকরা।
আইভরি কোস্টের মোহা রিচার্ডের বাবা পেশায় গাড়িচালক তিন ভাই, বোন এবং মাকে নিয়ে তাঁদের সংসার। এখানে খেলে টাকা রোজগার করে দেশে ফিরে যান তিনি। সে টাকা সংসারের কাজে লাগে। রিচার্ড বলছেন, “অবিলম্বে দেশে ফিরে যাওয়ার ব্যবস্থা করার জন্য সরকারকে অনুরোধ জানাচ্ছি। আর পেরে উঠছি না। এরপর অসুস্থ হয়ে পড়বেন আমার মতো অনেকেই।” কিন্তু আন্তর্জাতিক বিমান পরিষেবা পুরোপুরি চালু না হওয়া পর্যন্ত আপাতত এখানেই আটকে থাকতে হচ্ছে টুরিস্ট ভিসা নিয়ে কলকাতায় খেলতে আসা এই ফুটবলারদের।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.