সুনীল ছেত্রীকে একবুক শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন তপু বর্মন।
যুবভারতীতে কুয়েতের বিরুদ্ধে ম্যাচ খেলে আন্তর্জাতিক কেরিয়ার শেষ করবেন ভারত অধিনায়ক সুনীল ছেত্রী (Sunil Chhetri)। ১৫০ ম্যাচে ৯৪ গোল তাঁর ঝুলিতে। তার মধ্যে ৬টি এসেছে প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশের বিরুদ্ধে। মাঠে নামলে বাকিদের থেকে কোথায় আলাদা সুনীল? একজন ডিফেন্ডার হিসেবে কতটা কঠিন ভারতের কিংবদন্তিকে আটকানো? আন্তর্জাতিক মঞ্চে ‘ছেত্রীভাইয়ের’ বিরুদ্ধে খেলার অভিজ্ঞতা সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটালের প্রতিনিধি অর্পণ দাসের সঙ্গে ভাগ করে নিলেন বাংলাদেশের বিখ্যাত ডিফেন্ডার তপু বর্মন (Topu Barman)।
ভারতে সুনীল ছেত্রী কিংবদন্তি। আর একটা ম্যাচ খেলেই তিনি দেশের জার্সি থেকে অবসর নেবেন। আপনি বাংলাদেশের হয়ে ওঁর বিপক্ষে খেলেছেন। আবার বসুন্ধরা কিংসের হয়ে এএফসি কাপে বেঙ্গালুরু ম্যাচে আপনার প্রতিপক্ষ ছিলেন সুনীল। মাঠে কতটা কঠিন তাঁকে আটকানো?
তপু বর্মন: ছেত্রীভাইয়ের বিরুদ্ধে খেলা খুব কঠিন। কারণ ওঁর ফুটবলের মাথা অত্যন্ত পরিষ্কার। মাঠে সবসময় ছটফট করে। হঠাৎ করে এমন কিছু করে দেবে যা আটকানো মুশকিল। ওঁর মুভমেন্ট আটকানো যে কোনও ডিফেন্ডারের কাছেই একটা চ্যালেঞ্জ।
বাংলাদেশের বিরুদ্ধে সুনীলের রেকর্ড খুবই ভালো। মাঠে নামার আগে সুনীলকে আটকানোর জন্য কি বিশেষ কোনও প্ল্যান থাকত?
তপু বর্মন: ওই যে বললাম, এত বুদ্ধিমান একজন প্লেয়ারকে আটকানো সবসময় কঠিন কাজ। আসলে ছেত্রীভাইকে গোটা ভারতীয় দলের মূল শক্তি বলা যায়। মাঠে সবকিছু ওঁর প্ল্যান অনুযায়ী চলে। কাজটা তখন আরও কঠিন হয়ে যায়। তাই আমাদের টার্গেট থাকত, ওঁকে যেভাবে হোক আটকাতে হবে। আমরা জানতাম, ছেত্রীভাই শুধু গোল করবেন না, খেলাটা পরিচালনা করবেন। চেষ্টা করতাম, যাতে ওঁর পায়ে বল কম আসে আর কোনও ভাবেই যেন ছেত্রীভাই ফ্রি না থাকেন।
তার পরেও বাংলাদেশের বিরুদ্ধে শেষ কয়েক ম্যাচে গোল রয়েছে সুনীল ছেত্রীর। অথচ ওঁর উচ্চতা সে অর্থে স্ট্রাইকারের মতো নয়। শূন্যে আপনার সুবিধা বেশি। হেডে সুনীলের প্রচুর গোল রয়েছে। ঠিক কীভাবে পার্থক্য গড়ে দেন সুনীল? একজন ডিফেন্ডার হিসেবে আপনার কী মনে হয়?
তপু বর্মন: কথাটা ঠিক। আপনি দেখবেন শেষ দুম্যাচে একমাত্র ছেত্রীভাই আমাদের বিরুদ্ধে গোল করেছেন। আসলে মাঠে কোথায় কীভাবে পজিশন নিতে হয়, সেটা উনি খুব ভালোমতো জানেন। দেখবেন দুটো উইং আক্রমণের সময় ওঁকেই খোঁজে। কিন্তু উনি সবসময় ফাঁকা জায়গায় থাকেন। বিপক্ষের ‘নাম্বার ৯’ এতটা স্পেস নিয়ে থাকলে আপনি তাঁকে ফলো করতে পারবেন না। ছেত্রীভাই ডিফেন্ডারদের শক্তি-দুর্বলতা বুঝে ফেলেন। খুব একটা বডিতে আসবেন না। ফলে মার্কিং করাটা কঠিন।শূন্যে থাকলে আমার সুবিধা বেশি হত ঠিকই। তবে পিছন থেকে কখন যে হেড করে চলে যাবে, সেটা ধরাই যাবে না।
বাংলাদেশে আপনি ‘বাংলার র্যামোস’ বলে পরিচিত। মাঠে নামলে সবাই প্রতিদ্বন্দ্বী। কিন্তু একজন প্রতিপক্ষ ছাড়া সুনীল ছেত্রী আপনার চোখে কীরকম?
তপু বর্মন: সেভাবে কখনও ছেত্রীভাইয়ের সঙ্গে আলাদা করে কথা বলা হয়ে ওঠেনি। শেষ সাফ কাপে আমরা একই হোটেলে ছিলাম। কিন্তু প্রতিটা দলই নিজেদের পরিকল্পনায় ব্যস্ত থাকে। ফলে সে অর্থে কোনও ইন্টারেস্টিং অভিজ্ঞতা নেই। কিন্তু একজন ফুটবলারের কাছে তো মাঠের মুহূর্তগুলোই আসল। সেদিক থেকে আমি গর্বিত ছেত্রীভাইয়ের বিপক্ষে খেলেছি।
সুনীল ছেত্রী যেদিন অবসর ঘোষণা করেন, সেদিন ফিফা থেকে ওঁর জন্য পোস্ট করা হয়েছিল। মেসি-রোনাল্ডোর সঙ্গে ছেত্রীর ছবি ছিল। ভারতীয় ফুটবলপ্রেমী হিসেবে এটা আমাদের কাছে গর্বের মুহূর্ত। একই সঙ্গে এটা নিশ্চয়ই সারা উপমহাদেশীয় ফুটবলের কাছে আনন্দের।
তপু বর্মন: নিশ্চয়ই। ছেত্রীভাই ওয়ান অফ দ্য গ্রেটেস্ট। দক্ষিণ এশিয়ার কথা বললে তো অবশ্যই ওকে প্রথম সারিতে রাখতে হবে। খেলোয়াড় জীবনে উনি অনেক কিছুই পেয়েছেন। বিশ্বের টপস্কোরার লিস্টে চার নম্বরে রয়েছেন। একসময়ে মেসিকে আন্তর্জাতিক গোলের তালিকায় টপকে গিয়েছিলেন। এটা আমাদের কাছেও খুবই গর্বের ব্যাপার।
বাংলাদেশের ফুটবল প্লেয়ার আর সমর্থকরা ওঁকে কীভাবে দেখেন?
তপু বর্মন: শুধু ভারতে নয়, বাংলাদেশেও আমরা ওঁকে খুবই সম্মান করি। এদেশেও অনেক প্লেয়ার ছেত্রীভাইকে আইডল মনে করে। ফুটবলার হিসেবে পেশাদারিত্ব আর গোলের খিদে ওঁকে এগিয়ে রাখে। মানুষ হিসেবেও উনি শ্রদ্ধার পাত্র। বাংলাদেশেও ওঁর জনপ্রিয়তা অনেক। এককথায় সুনীল ছেত্রী লেজেন্ড।
৬ তারিখ বিশ্বকাপ যোগ্যতা অর্জনের ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে নামছেন আপনারা। তার জন্য শুভেচ্ছা। তার পর যুবভারতীতে সুনীল ছেত্রীর শেষ ম্যাচ। তাঁর জন্য কোনও বার্তা?
তপু বর্মন: ধন্যবাদ। কুয়েত ম্যাচের জন্য ভারতীয় দলকেও শুভেচ্ছা। চাইব জিতেই যেন ছেত্রীভাই মাঠ ছাড়েন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.