দীপক পাত্র: সমস্ত বিতর্কের অবসান। তিন তারা লোগো সরে গিয়ে সেখানে লেখা হল ‘চ্যাম্পিয়ন’। ১৩১ বছরের ঐতিহ্যকে গুরুত্ব দিয়ে সঞ্জীব গোয়েঙ্কা বুঝিয়ে দিলেন, সভ্য-সমর্থকদের ভালোবাসায় তিনি কোনও আঘাত দিতে নারাজ।
বিতর্ক দানা বেঁধেছিল দু’টি বিষয়কে ঘিরে। বিশেষ করে তিন তারা লোগোকে নিয়ে। সভ্য-সমর্থকরা বিষয়টাকে কোনওমতে মেনে নিতে পারেননি। তিন তারা লাগানোর পিছনে প্রধান উদ্দেশ্য ছিল, তিনবার এটিকে আইএসএল চ্যাম্পিয়ন হয়েছে, তার উল্লেখ করা। মোহনবাগান সমর্থকদের বক্তব্য ছিল পরিষ্কার, তাহলে আই লিগ সেরা হওয়ার ইতিহাসকে কেন মুছে দেওয়া হবে? কেন ভারতসেরা মোহনবাগানের ঐতিহ্যকে তুলে ধরা হবে না? ক্লাব সমর্থকরা এই ব্যাপারটা নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝড় তুলে দেন।
তাছাড়া দলের প্রোমোশন নিয়ে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের (Sourav Ganguly) নতুন বিজ্ঞাপন ঢুকে পড়ে বিতর্কে। সেই বিজ্ঞাপনে দেখানো হচ্ছিল মোহনবাগানের সঙ্গে এটিকের জার্সি ওয়াশিং মেশিনে ঢোকানোর সঙ্গে সঙ্গে এটিকে-র গত ছ’বছরের সাফল্যের কথা বলা হচ্ছে। ১৩১ বছরের মোহনবাগানের ইতিহাসকে তুলে ধরা হয়নি। তিন তারা লাগানো লোগো দেখার পর এই বিজ্ঞাপন সমর্থকদের আবেগে প্রচন্ড আঘাত করে। তড়িঘড়ি করে ক্লাবের আবেগের কথা ভেবে এটিকে-মোহনবাগানের অন্যতম ডিরেক্টর দেবাশিস দত্ত লিখিত বিবৃতি দিতে বাধ্য হন। এরপর গত সোমবার এটিকে-মোহনবাগান ডিরেক্টর বোর্ডের সদস্যরা ভারচুয়াল সভায় মিলিত হয়েছিলেন। ক্লাব সচিব সৃঞ্জয় বোস ও অর্থসচিব দেবাশিস দত্ত সেদিন স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন, কোটি কোটি মানুষের আবেগকে গুরুত্ব দিতেই হবে। এফএসডিএল ও স্টার স্পোর্টসের সঙ্গে কথা বলে একটা খসড়া তৈরি হয়। কিন্তু চূড়ান্ত রূপ পায়নি। অবশেষে মোহনবাগান সমর্থকদের আবেগকে গুরুত্ব দিয়ে ঠিক হয়েছে পুরো বিষয়টা নতুন আঙ্গিকে তুলে ধরা হবে। সঞ্জীব গোয়েঙ্কা বিদেশ থেকে ফিরেই নতুন বিষয়গুলো সর্বসমক্ষে নিয়ে আাসবেন। সম্ভবত ১২ বা ১৩ তারিখে তা প্রকাশ করবেন তিনি।
তিন তারা সরে গিয়ে কেন চ্যাম্পিয়ন লেখা হচ্ছে জার্সিতে? এর পিছনেও কারণ থাকছে। বরং বলা ভাল মোহনবাগানের আবেগকে উসকে দেওয়া হল। কীভাবে? গত আই লিগে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে মোহনবাগান। আবার এটিকে হয়েছে আইএসএল সেরা। তাই দু’দলের ‘চ্যাম্পিয়ন’ শব্দকে ব্যবহার করে কোটি কোটি মানুষের আবেগকে নতুন করে সামনে নিয়ে আসতে চাইছে ডিরেক্টর বোর্ড। ঠিক হয়েছে জার্সিতে এটিকে-মোহনবাগান (ATK-Mohun Bagan) লেখার ঠিক নিচে তুলে ধরা হবে চ্যাম্পিয়ন শব্দটা। গোয়া থেকে ফোনে টিম ম্যানেজমেন্টের এক কর্তা বলছিলেন, “আমাদের কাছে এই বিষয়টা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, চ্যাম্পিয়ন লেখা ম্যাচের জার্সি শীঘ্রই গোয়ায় পাঠিয়ে দেওয়া হবে। আসলে সঞ্জীব গোয়েঙ্কার সদিচ্ছার কারণেই পুরো বিষয়টা অনায়াসে সমাধান করা গিয়েছে। তিনিও চান ক্লাবের ঐতিহ্যর পাশাপাশি ইতিহাসকে সামনে তুলে ধরে এগোতে। মোহনবাগান সমর্থকদের আবেগ সকলে উপলব্ধি করতে পেরেছে। পুরো ব্যাপারটা বলা হয়েছে ফুটবলারদেরও। প্রত্যেকেই এই সিদ্ধান্তে খুশি। কোনও বিতর্ক থাকল না। আশা করি সভ্য-সমর্থকরা আর বিতর্কের ঝড় তুলবেন না।”
প্রোমোশনে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের বিজ্ঞাপনও খুব শীঘ্রই পরিবর্তন করা হচ্ছে। এফএসডিএল ও স্টার স্পোর্টস জানিয়ে দিয়েছে, প্রোমোশনে তারা নতুন বিজ্ঞাপন শীঘ্রই চালু করে দেবে। সব মিলিয়ে সবুজ-মেরুন কর্তারা ডিরেক্টর বোর্ডে বসে বিষয়টাকে সহজে সমাধান করে ফেললেন। সত্যি দৃষ্টান্ত হয়ে থাকল ভারতীয় ফুটবলে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.