স্টাফ রিপোর্টার: মঙ্গলবার ফেডারেশনের কার্যকরী কমিটির মিটিংয়ের ঠিক আগেই আস্তিনের তলা থেকে অমোঘ অস্ত্র প্রয়োগ করল মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গল সহ আই লিগের ছ’টি ক্লাব। আইএসএল-আই লিগ ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর হস্তক্ষেপ চেয়ে চিঠি দিল আই লিগের ক্লাবগুলি। ফলে কার্যকরী কমিটিতে আইএসএলকে দেশের শীর্ষ লিগ ঘোষণা করার ঠিক আগেই প্রবল চাপে ফেডারেশন কর্তারা। যদিও চুক্তির শর্তে আইএসএলকে শীর্ষ লিগ ঘোষণা করার রাস্তা থেকেও পিছু হঠতে পারছেন না তাঁরা।
আশা করা গিয়েছিল, ফেডারেশন সভাপতি প্রফুল্ল প্যাটেলের সঙ্গে আলোচনায় বসার দিনই জট খুলে যাবে ভারতীয় ফুটবলের উদ্ভুত সমস্যার। যে কারণে আলোচনায় যাওয়ার আগেই আই লিগ ক্লাবের প্রতিনিধিরা বারবার করে বলেছিলেন, কার সঙ্গে কি চুক্তি রয়েছে, তা মাথায় রেখে আলোচনায় বসলে হবে না। খোলা মনে আলোচনায় বসতে হবে। ক্লাব প্রতিনিধিরা এরকম বললে কী হবে, তাঁদের সঙ্গে আলোচনায় বসার আগেই প্রফুল্ল প্যাটেল স্কাইপে কথা বলেন এফএসডিএল চেয়ারম্যান সুন্দর রামনের সঙ্গে। যে আলোচনায় এফএসডিএল আধিকারিক পরিস্কার জানিয়ে দেন, ফেডারেশনের সঙ্গে তাদের চুক্তি থেকে সরছেন না তিনি। এই মরশুম থেকেই আইএসএলকে শীর্ষ লিগ ঘোষণা করতে হবে। কেন না, ফেডারেশনের সঙ্গে চুক্তির পাশাপাশি আইএসএলের ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলির সঙ্গেও তাদের চুক্তি রয়েছে। যা ভাঙতে পারেন না তারা।
এরপরেই ক্লাবদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন প্রফুল্ল প্যাটেল। যে আলোচনার শেষে ফেডারেশন সভাপতির মনে হয়েছিল, সমস্যা বোধহয় মিটে গিয়েছে। কিন্তু ক্লাবগুলি জানিয়ে দেয়, ২৪ ঘন্টা সময় নিয়ে তাদের মতামত জানাবেন। ২৪ ঘন্টা সময় পার হতেই ক্লাবগুলি প্রস্তাব দেয়, আই লিগকে ফের জাতীয় লিগের নামে ফেরাতে হবে। সঙ্গে আই লিগের ক্লাবগুলিকে খেলতে দিতে হবে এএফসি চ্যাম্পিয়নস লিগ। যা নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি ফেডারেশন কর্তারা। যদিও নিজেরা ঠিক করে ফেলেন, মঙ্গলবারের কার্যকরী কমিটির মিটিংয়ে আইএসএলকে দেশের সেরা লিগ হিসাবে ঘোষণা করে দেওয়া হবে। তারপর যদি ক্লাবগুলি আন্দোলনের পথে যায়, যাবে। কেননা, আইএসএলকে দেশের সেরা লিগ ঘোষণা না করা হলে সেই জানুয়ারি থেকে ফেডারেশনের পেমেন্ট আটকে রেখেছেন এফএসডিএল। এরকম ভাবে চললে কিছুদিনের মধ্যেই ফেডারেশনের আর্থিক সংকট চরমে উঠবে।
ফেডারেশন কর্তারা যে আই লিগকে সরিয়ে আইএসএলকে দেশের সেরা লিগ করতে চলেছে বুঝে যান আই লিগের কর্তারা। তাই ফেডারেশন মিটিংয়ের ঠিক আগের দিনই, মোহনবাগান, কোয়েস ইস্টবেঙ্গল, চার্চিল ব্রাদার্স, মিনার্ভা পাঞ্জাব, আইজল এফসি এবং গোকুলাম এফসি চিঠি দিয়ে ফেডারেশনের এই কার্যকলাপের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর হস্তক্ষেপ চাইলেন। ক্লাবগুলি প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়ে লিখেছে, “আপনি দয়া করে একটি তদন্ত কমিশন গঠন করে ফেডারেশনরে এই কার্যকলাপ দেখুন। আমরা আশাবাদী, আপনি নিশ্চিত ভাবেই ভারতীয় ফুটবল এবং দেশের ইতিহাস সমৃদ্ধ ক্লাব এবং আই লিগকে রক্ষা করবেন। যদি ভবিষ্যতে আরও কোনও তথ্যর দরকার হয় আমরা দেব।”
এর আগে অবশ্য ক্লাবগুলি ২৩ দফা প্রস্তাব রেখে প্রধানমন্ত্রীর কাছে ব্যাখ্যা দিয়েছে, ফেডারেশন কী ভাবে তাদের মার্কেটিং পার্টনারকে তোল্লাই দিতে গিয়ে আই লিগের ক্লাবগুলিকে মেরে ফেলছে। জানিয়েছে, ফেডারেশন কাপ, রোভার্স-সহ ৩৫টির মতো প্রথম সারির প্রতিযোগিতা বন্ধ করে দিয়েছে ফেডারেশন। সঙ্গে মাহিন্দ্রা, জেসিটি, ডেম্পো, সালগাঁওকর, স্পোর্টিং ক্লুব দ্য গোয়া সহ একাধিক ক্লাব লিগ থেকে তাদের নাম তুলে নিয়েছে। ফিফার ক্লাব লাইসেন্সিং পদ্ধতি মেনে এতদিন দেশের সেরা লিগ আই লিগ যেখানে চ্যম্পিয়নশিপ ও অবনমন দুটোই ছিল। পাশাপাশি আইএসএল ফিফার ক্লাব লাইসেন্সিং না মেনেই হচ্ছে। যেখানে চ্যাম্পিয়নশিপ-অবনমন কিছুই হচ্ছে না। অথচ আইএসএলকে দেশের সেরা লিগ করার জন্য উদ্যত হয়েছে অল ইন্ডিয়া ফুটবল ফেডারেশন।
আইএসএল একটি সম্পূর্ণ ব্যবসায়িক কারণে গড়া ওঠা একটা লিগ। যার প্রতিনিধিত্ব করছে ধনী ব্যাক্তিরা। এরসঙ্গে ভারতীয় ফুটবলে কোনও যোগসূত্র নেই। উল্লেখযোগ্য ফুটবলাররা বেশির ভাগই ৩৫ উর্ধ্ব । আইএসএল হচ্ছে অনেকটা আইপিএলের মতো। সেই লিগ কী করে দেশের সেরা লিগ হয়? ফিফা এবং এএফসি আগেই আই লিগকে দেশের সেরা লিগ ঘোষণা করেছে। এমনকী বিভিন্ন সময় সাংবাদিক সম্মেলনেও ফেডারেশন ঘোষণা করেছে, দেশের সেরা লিগ-আই লিগ। ফেডারেশন আই লিগকে নামিয়ে আইএসএলকে দেশের লিগ ঘোষণা করার জন্য উদ্যো হয়েছে। যার জন্য ভারতীয় ফুটবল ক্ষতির সম্মুখীন হবে। তবে আই লিগের ক্লাবগুলির প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়ে চিঠি দেওয়ার পরেও ফেডারেশন নড়ে গিয়েছে সোমবার রাত পর্যন্ত এরকম কোনও খবর নেই। এটা ঠিক যে, এই চিঠি পেয়ে দফায় দফায় দিল্লিতে মিটিং করেন কর্তারা। কেননা এএফএসডিএলকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি মতো মঙ্গলবারই আইএসএলকে দেশের সেরা লিগ ঘোষণা করার কথা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.