স্টাফ রিপোর্টার : ফেডারেশন সভাপতি কল্যাণ চৌবেকে ‘মিথ্যেবাদী’ অভিহীত করে পদত্যাগ চাইলেন ফেডারেশনের (AIFF) বরখাস্ত হওয়া সচিব সাজি প্রভাকরণ। একই সঙ্গে ফেডারেশনের কার্যকরী কমিটির সদস্যদের পাঠানো ১৮ পাতার চিঠিতে ফেডারেশন সভাপতির বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ এনেছেন সাজি (Saji Prabhakaran)। যে চিঠিকে কেন্দ্র করে এদিন তোলপাড় ভারতীয় ফুটবল মহল। যেখানে আইলিগের ম্যাচ সম্প্রচারের জন্য ভেন্ডরদের হয়ে ‘ওকালতি’ করার সঙ্গে সঙ্গে এশিয়াডে ভারতীয় দলের খারাপ ফলের জন্য কল্যাণকে অভিযুক্ত করেছেন ফেডারেশনের বরখাস্ত সচিব।
১৮ পাতার চিঠিতে সাজি প্রভাকরণ শুরুতেই কল্যাণ চৌবেকে (Kalyan Chaubey) মনে করিয়ে দিয়েছেন, তাঁর বরখাস্তর ব্যপারে আদালতের স্থগিতাদেশ রয়েছে। কিছুদিনের মধ্যেই সেই ব্যপারে শুনানিও শুরু হবে। তাঁকে যেহেতু অন্যায়ভাবে ফেডরেশন সচিবের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে, তাই বিচার পাওয়ার জন্য শেষ পর্যন্ত আইনি লড়াই তিনি লড়ে যাবেন। এরফলে ফেডারেশন আর্থিক ক্ষতির মুখেও পড়তে পারে।’ এই মুহূর্তে এসে সাজি মনে করছেন, ফেডারেশনের নির্বাচনের সময় বিশ্বাস করে কল্যাণের পাশে থাকাটা তাঁর ভুল হয়েছে। সেই সময়ের ঘটনা উল্লেখ করে এদিন চিঠিতে সাজি উল্লেখ করেছেন, নির্বাচন হওয়ার পর বাইচুং তাঁকে বলে ছিলেন, ‘কল্যাণের পাশে দাঁড়ালে তো, দেখবে, সবার আগে কল্যাণ তোমাকেই সরাবে।’ সেই কথা উল্লেখ করে সাজি বলেছেন, এখন দেখতে পাচ্ছেন, বাইচুং সেই সময় তাঁকে ঠিক কথাই বলেছিলেন। অথচ ফেডারেশন সভাপতি সাজিকে সরিয়ে দিয়েছিলেন ‘বিশ্বাসভঙ্গতা’-র অভিযোগ এনে। কিন্তু কেন তাঁর উপর ‘বিশ্বাসভঙ্গতা’ আনা হয়েছিল, সেই কারণ এখনও জানেন না তিনি। সেই কথা উল্লেখ করে সাজি বলেছেন, এশিয়ান কাপের ফাইনালে দোহাতে কল্যাণ এসে তাঁর সঙ্গে দেখা করে জানান, বিশ্বাসভঙ্গতার ছাপ দিয়ে সাজিকে বরখাস্ত করার পিছনে তাঁর কোনও হাত ছিল না। যদিও সাজি সেই কথা বিশ্বাস করেন না। সভাপতিকে না জানিয়ে অন্যরা তাঁকে বরখাস্ত করে দিলেন, এটা তিনি কিছুতেই বিশ্বাস করেননি।
সাজি লিখেছেন, ফেডারেশনের সেক্রেটারি জেনারেলের ক্ষমতা খর্ব করার জন্য ‘কোর’ কমিটি তৈরি করেছিলেন ফেডারেশন সভাপতি। তবে কোর কমিটি গঠন নিয়ে তাঁর ব্যক্তিগত স্তরে কোনও আপত্তি ছিল না। কিন্তু কল্যাণ কিছুতেই তাঁর বিস্ময়কর প্রস্তাবগুলি কার্যকরী কমিটিতে পাশ করাতে পারবেন না বলেই কোর কমিটির আশ্রয় নিয়েছিলেন তিনি।
এরপরেই ফেডারেশনের আর্থিক ক্ষতি নিয়ে কল্যাণকে দায়ী করেন তিনি। এরজন্য যেভাবে ভেন্ডরদের স্বার্থ রক্ষা করতে কল্যাণ উঠে পড়ে লেগেছেন, তাতেই বিস্মিত তিনি। চিঠিতে অভিযোগ করেছেন, ক্ষমতায় এসে কল্যাণ তাঁকে বলেন, আইলিগের সম্প্রচারের মান আইএসএলের স্তরে করতে হবে। এরজন্য টিভি সম্প্রচার নিয়ে প্রচুর খরচা করার জন্য উসাহী হয়ে পড়েন। কিন্তু ফেডারেশনের যা আর্থিক অবস্থা ছিল, সভাপতির মতে চলতে গেলে আর্থিকভাবে ভেঙে পড়তে পারত ফেডারেশন। কিন্তু কল্যাণ সেই পরামর্শে কোনওভাবেই কান দিতেন না। বরং প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, আই লিগের সম্প্রচারের জন্য ১০ কোটি টাকা তিনি এনে দেবেন। অথচ আইলিগের ম্যাচ সম্প্রচারের জন্য একটা টাকাও এনে দেননি সভাপতি। বরং বিশাল খরচ করিয়ে ভেন্ডরদের টাকা দেওয়ার জন্য উৎসাহী হয়ে পড়েন কল্যাণ চৌবে। সাজি অভিযোগ করেছেন, ভেন্ডরের টাকা ছাড়ার জন্য বারবার করে খোঁজ নেওয়ার পাশাপাশি কল্যাণ নিজে ফেডারেশন অফিসে চলে আসতেন ভেন্ডরের টাকা ছেড়ে দেওয়ার জন্য। এমনকী সাজিকে না কি তিনি পরামর্শও দিয়েছিলেন, কলকাতায় গিয়ে ভেন্ডরের স্টুডিও দেখতে যাওয়ার জন্য। ফলে সাজি বুঝতে পারছেন না, ভেন্ডরের টাকা ছাড়ার জন্য কল্যাণ চৌবে কেন এত উৎসাহ দেখাতেন।
একই সঙ্গে যেভাবে ইগর স্টিমাচকে নিজস্ব ইগোর জন্য বরখাস্ত করে ফেডারেশনকে আর্থিক সমস্যায় ফেলে দিয়েছেন তারও সমালোচনা করেছেন সাজি। বলেছেন, “ইগরের চুক্তির মেয়াদ যখন বাড়ানো হল, সেই সময় কল্যাণ চৌবে নিজে উপস্থিত ছিলেন। অথচ এখন বলছেন তিনি কিছুই জানেন না।” যেভাবে তাঁকে বরখাস্ত করা হয়েছে, ইগরকে বরখাস্ত করে একই সমস্যায় ফেডারেশন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.