স্টাফ রিপোর্টার: সুপার কাপ খেলতে রাজি হয়নি ক্লাবের ইনভেস্টর কোয়েস। তার জন্য লাল-হলুদ সমর্থকেরা যদি মনে করেন, কাল’ই কোয়েস-ইস্টবেঙ্গল গাঁটছড়া ছিন্ন হয়ে যাবে, সেরকমটা কিন্তু নয়। দু’তরফের সম্পর্ক ছিন্নর ব্যাপারে আপাতত ধীরে চলো নীতি নিয়েছে ইস্টবেঙ্গল। এমনকী কোয়েস ইস্টবেঙ্গল এফসি বোর্ড থেকে সুপার কাপ এবং আইএসএল নিয়ে যে সিদ্ধান্ত জানানো হয়েছে, তা ক্লাবের কার্যকরী কমিটির সদস্যদের জানানোর জন্য এখনই সভা ডাকা হবে, তাও নয়। পুরো ব্যাপারটা নিয়ে ধীরে-সুস্থে ক্লাবের তরফে এগোনো হবে।
বৃহস্পতিবার বেঙ্গালুরুর মিটিংয়ে কোয়েস কর্ণধার অজিত আইজ্যাক যখন ক্লাবের তরফে বোর্ড ডিরেক্টরদের বোঝাচ্ছিলেন, এই মুহূর্তে সুপার কাপে খেললে মিনার্ভা, গোকুলাম, আইজলের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করা হবে। তখন সঙ্গে এটাও বলেন যে, ক্লাবের তরফে ডিরেক্টরদের সঙ্গে আলোচনা না করে জোটের ব্যাপারে এগোনোটাও তাঁদের ঠিক হয়নি। উচিত ছিল জোটে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্তের সঙ্গে ক্লাবকেও জড়িয়ে নেওয়া।
সুপার কাপ না খেলার জন্য কোয়েসের প্রতি ক্লাবের যাই মনোভাব হোক, কোয়েস কিন্তু এই মুহূর্তে নিজের থেকে ইস্টবেঙ্গলের সঙ্গে গোল্ডেন হ্যান্ডশেকে রাজি নয়। বরং সামনের মরশুমে কী দল গড়া হবে, তা নিয়ে বেশি আগ্রহী। যে কারণে ইস্টবেঙ্গল কর্তারা যখন বৃহস্পতিবারের বৈঠকে অভিযোগ করেন, ক্লাব চিঠি দিলেও কোয়েসের তরফে তার উত্তর দেওয়ার সৌজন্য দেখানো হয়নি। তখন কোয়েসের তরফে মেনে নেওয়া হয়, এরপর থেকে এজাতীয় সমস্যা আর হবে না। এমনকী দু’পক্ষের প্রতিনিধিরাই তাঁদের নিজেদের সমস্যা নিয়ে বোর্ড মিটিংয়ে সামনাসামনি আলোচনা করেন। ঠিক তখনই ইস্টবেঙ্গল কর্তারা প্র্যাকটিস মাঠের প্রসঙ্গ তোলেন। জানতে চান, কেন নিজেদের মাঠে দলকে প্র্যাকটিস না করিয়ে সমর্থকদের আবেগে আঘাত করা হচ্ছে? কোয়েসের তরফে বলা হয়, ইস্টবেঙ্গল মাঠে প্র্যাকটিস না করিয়ে যুবভারতীতে প্র্যাকটিস করানোর সিদ্ধান্ত ইনভেস্টরের নয়। বরং পুরো পরিকল্পনাটা কোচ আলেজান্দ্রোর। তিনি চাইলে হবে। না চাইলে হবে না।
কারণ, আলেজান্দ্রো মনে করছেন, ইস্টবেঙ্গল মাঠ প্র্যাকটিসের উপযুক্ত ভাল নয়। ইস্টবেঙ্গল কর্তারা তখন কোয়েস কর্তৃপক্ষকে বলেন, “তা হলে ইস্টবেঙ্গল মাঠকে প্র্যাকটিসের উপযোগী করে তুলতে কোয়েস সাহায্য করুক। নিজেদের মাঠ আরও উন্নত করে তুলুক ক্লাবের ইনভেস্টর।” তখন ইস্টবেঙ্গল কর্তাদের এই প্রস্তাব ভেবে দেখা হবে বলে জানান কোয়েস প্রধান।
তা হলে কি বেঙ্গালুরুর বোর্ড মিটিংয়ের পর কোয়েস-ইস্টবেঙ্গলের মধ্যে সব ভুল বোঝাবুঝির সমাধান হয়ে গেল? দু’পক্ষই ফের চলে এল কাছাকাছি? সেটা ভাবলেও ভুল হবে। ক্লাবকে টাকা দেয় কোয়েস। তাই বেঙ্গালুরুর মিটিংয়ে যাওয়ার আগেই ইস্টবেঙ্গল কর্তারা জানতেন, কোয়েসের সিদ্ধান্ত মানতেই হবে ক্লাবকে। কিন্তু, যেভাবে ইস্টবেঙ্গল ক্লাবকে অন্ধকারে রেখে এই মরশুমে আই লিগে একের পর এক সিদ্ধান্ত নিয়েছে কোয়েস, তা লাল-হলুদের পক্ষে কেউই মেনে নিতে পারছেন না। এই মুহূর্তে সবাই তাকিয়ে রয়েছেন দেবব্রত সরকারের দিকে।
কারণ, কোয়েসের সঙ্গে গাঁটছড়া ছিন্ন করলেই তো হল না। যতক্ষণ না বিকল্প ইনভেস্টরের সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে, সব কিছু চূড়ান্ত হচ্ছে, কোয়েসকে সরানোর পথে হাঁটবেন না ক্লাবের অন্যতম শীর্ষকর্তা। কোয়েস সরে গেলে ক্লাবের প্রায় পুরো আর্থিক বোঝা তাঁর ঘাড়েই যে পড়বে সেটা ময়দানের ফুটবলমহল মাত্রই জানে। তাই পুরো ব্যাপারটা বুঝে নিতে ধীরে চলো নীতি অবলম্বন করতে চাইছেন তিনি।
বেঙ্গালুরুর বোর্ড মিটিংয়ে ঠিক কী হয়েছে, তা জানতে কলকাতায় অধীর আগ্রহে বসে ছিলেন ইস্টবেঙ্গল কার্যকরী কমিটির সদস্যররা। যে কারণে এদিন বিকেলে দেবব্রত সরকার ক্লাবে এলে তাঁরা দল বেঁধে চলে আসেন তাঁর কাছে। দেবব্রতবাবু সবাইকে বুঝিয়ে বলেন, ঠিক কী হয়েছে মিটিংয়ে। সদস্যরা তখন জানতে চান, কোয়েস সরে গেলে নতুন ইনভেস্টর পেতে ক্লাবের অসুবিধে হবে কি না। তিনি যার উত্তরে বলেন, কোয়েসের বিকল্প তৈরি আছে। যদিও চুক্তি হয়নি। যদিও সেই বিকল্প ইনভেস্টরের নাম বলতে চাননি দেবব্রত সরকার।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.