দুলাল দে: সরকারিভাবে তিনি ছেড়ে দেওয়ার আগে ইস্টবেঙ্গল (East Bengal FC) ক্লাব নিজের নামে অথবা নতুন কোনও নামের সঙ্গে জুড়ে AFC অথবা AIFF-এর ক্লাব লাইসেন্সিং নিয়ে কোনও প্রতিযোগিতায় খেলতে পারবে না। শুক্রবার রাতে ফেডারেশনকে মেল করে জানিয়ে দিলেন কোয়েস (Quess) চেয়ারম্যান অজিত আইজ্যাক (Ajit Isaac)। ফলে ১৫ জুলাই থেকে এএফসি এবং ফেডারেশনের যে ক্লাব লাইসেন্সিং প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার কথা, তা নিয়ে বিস্তর সমস্যায় পড়ে গেল শতাব্দী প্রাচীন ইস্টবেঙ্গল ক্লাব।
৩১ মে’র পর কোয়েস আর থাকবে না। কোয়েসের পূর্বতন সিইও সুব্রত নাগের চিঠি ধরে ইস্টবেঙ্গল কর্তারা যখন আগাম ঘোষণা করে দিয়েছিলেন, ১ জুন থেকে যাবতীয় স্পোর্টিং স্বত্ব তাদের নিয়ন্ত্রণে, ঠিক তখনই ‘কাহানি মে ট্যুইস্ট।’ এবং তা এমন জায়গায় পৌঁছেছে যে, আই লিগ এবং আইএসএলের অন্যান্য ক্লাবগুলি যখন লাইসেন্সিং প্রক্রিয়ার জন্য কাগজপত্র তৈরি করছে, ইস্টবেঙ্গল ক্লাব তখন হাত গুটিয়ে বসে আছে।
বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়, ১ জুন থেকে যাবতীয় স্পোর্টিং রাইটস কোয়েসের থেকে চলে আসবে ইস্টবেঙ্গলের কাছে। ফলে ফেডারেশনের পক্ষে থেকে বিভিন্ন মিডিয়ার খবর উল্লেখ করে ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের কাছে ঘটনার ব্যখ্যা চাওয়া হয়।
তারপর থেকে লাল-হলুদ কর্তারা নানা ভাবে ফেডারেশন কর্তাদের কাছে কোয়েসের চলে যাওয়া নিয়ে বিভিন্ন ব্যাখ্যা দিয়ে আসছেন। অবশেষে ২৯ জুন ইস্টবেঙ্গল ক্লাব নিজেদের স্বপক্ষে ফেডারেশনকে একটি বিশাল চিঠি পাঠায়, যেখানে গত এক বছর ধরে কোয়েসের সঙ্গে তাদের বিচ্ছেদ নিয়ে যে সব চিঠি চালাচালি হয়েছে, তার সম্পূর্ণ তথ্য দেওয়া হয়েছে। ইস্টবেঙ্গলের চিঠির প্রথম পরিচ্ছেদেই কোয়েসের ছেড়ে দেওয়া নিয়ে প্রাক্তন সিইও সুব্রত নাগের চিঠির কথা উল্লেখ থাকলেও, তৃতীয় পরিচ্ছেদে লেখা রয়েছে, ‘কোয়েসের সঙ্গে বিচ্ছেদ হয়ে যাবে।’ ইস্টবেঙ্গল কর্তারা দাবি জানান, কিছুদিনের মধ্যেই কোয়েসের সঙ্গে যেহেতু তাদের বিচ্ছেদ হয়ে যাবে, তাই ফেডারেশন এখনই লাইসেন্সিং প্রক্রিয়া শুরু করার অনুমতি দিতে পারে।
ইস্টবেঙ্গলের তরফে এই চিঠি পাওয়ার পরেই ফেডারেশনের লাইসেন্সিং ম্যানেজার অক্ষয় রোহতগি কোয়েস ইস্টবেঙ্গল এফসির সব ডিরেক্টরকে একট বিশাল চিঠি মেল করে জানান, “আইন অনুযায়ী ফেডারেশন এবং এএফসিতে কোয়েস ইস্টবেঙ্গল এফসি প্রাইভেট লিমিটেড নামেই লাইসেন্সিং নথিভুক্ত রয়েছে। তাই যতক্ষণ না বিচ্ছেদের কাগজ পত্র জমা দেওয়া হবে, ততক্ষণ নতুন নাম নথিভুক্ত হবে না।” এরই সঙ্গে ইস্টবেঙ্গলকে তাদের পুরনো চুক্তির কথা মনে করিয়ে লিখেছেন, “এর আগে যখন কিংফিশার ইস্টবেঙ্গল ছিল, তখনও তাদের থেকে নো অবজেকশন সার্টিফিকেট পাওয়ার পরেই সব শেয়ার ক্লাবের কাছে ফিরে এসেছিল। তার পরেই কোয়েসের সঙ্গে চুক্তি করে ইস্টবেঙ্গল। তাই এবারও সেরকম করতে হবে।”
শুক্রবার রাতে লাইসেন্সিং ম্যানেজারের এই চিঠি পেয়েই সঙ্গে সঙ্গে ফেডারেশনকে মেল করে অজিত আইজ্যাক জানিয়ে দেন, “কোয়েস ইস্টবেঙ্গল এফসির বাইরে নতুন করে কোনও নাম যেন লাইসেন্সিংয়ের জন্য ফেডারেশন নথিভুক্ত না করে। কারণ, ইস্টবেঙ্গলের স্পোর্টং রাইটস তাদের কাছেই আছে।” এতদিন ধরে চুক্তি বিচ্ছেদ নিয়ে ফেডারেশন কর্তারা যা শুনছিলেন সবই ইস্টবেঙ্গলের তরফে। কিন্তু শুক্রবার বেশি রাতে অজিত আইজ্যাকের এই চিঠি পাওয়ার পরেই ফেডারেশন কর্তারা বুঝে যান, এখনও পর্যন্ত স্পোর্টং রাইটস ক্লাবের কাছে ফিরিয়ে দেয়নি কোয়েস। আর কিছুদিনের মধ্যে ফিরিয়ে দেবেন কি না, তাও জানাননি। ফলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যতক্ষণ না সরকারি ভাবে বিচ্ছেদের কোনও কাগজপত্র হাতে পাচ্ছেন, তাঁরা ইস্টবেঙ্গলকে লাইসেন্সিং প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে দেবেন না। ফলে ইস্টবেঙ্গলের এখন কোয়েসের দিকে তাকিয়ে থাকা ছাড়া অন্য কোনও উপায় নেই।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.