হোসে ব্যারেটো: বিশ্বকাপের (Qatar World Cup) শুরু থেকেই বলছি, এবারের আর্জেন্টিনা একেবারেই মেসি-সর্বস্ব নয়। আজ অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে আর্জেন্টিনার (Argentina) আক্রমণ দেখার পর মনে হচ্ছে, খুব একটা ভুল বলিনি। এতদিন আর্জেন্টিনার খেলায় দেখতাম, আক্রমণ মানেই লিওনেল মেসি (Lionel Messi)। বল বানানো থেকে শুরু করে গোল করা-সবটাই মেসিকে করতে হত। ফলে মেসি আটকে গেলেই আর্জেন্টিনা আটকে যেত। আর বিপক্ষও সেটা জানত। তাই তারাও সেইমতো পরিকল্পনা করে নামত।
কিন্তু আর্জেন্টিনার এই দলে সেটা হওয়ার না। মেসি তো আছেই। সঙ্গে যোগ হয়েছে জুলিয়ান আলভারেজ, রড্রিগো ডি পল, এনজো ফার্নান্ডেজের মতো একঝাঁক তরুণ মুখ। যারা সব সময় প্রতিপক্ষের উপর চাপটা ধরে রাখে। আজ যেমন আর্জেন্টিনার দ্বিতীয় গোলটার কৃতিত্ব পুরোটাই ডি পল আর আলভারেজের। অস্ট্রেলিয়ার গোলকিপার বলের দখল নেওয়ার পরও ডি পল ওকে চাপ দিতে থাকে। আর বল ওর নিয়ন্ত্রণের বাইরে যেতেই আলভারেজ সুযোগটা কাজে লাগায়। ওদের এই উদ্দীপনা আর্জেন্টিনার বড় শক্তি।
দেখুন, মেসির এখন বয়স হয়েছে। ফলে আগের মতো চাপ নেওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু তারপরও বলব, এই আর্জেন্টিনা দলের হৃদয় মেসি। মেসিই দলের খেলাটা নিয়ন্ত্রণ করে। বয়সের সঙ্গে অভিজ্ঞতায় পোক্ত হয়েছে। মেসির খেলাতেও তার প্রমাণ পাওয়া যায়। বিশেষত ওর পেরিফেরাল ভিশন আর পজিশনিং সেন্স। পাস ধরার আগে দেখে নেয় সতীর্থদের কে কোথায় দাঁড়িয়ে, আর বিপক্ষের ফুটবলাররাই বা কোথায় রয়েছে। অনায়াসেই মাপা পাস পৌঁছে দেয় কোনও না কোনও সতীর্থকে। মেক্সিকো ম্যাচেও দেখেছি। আজও দেখলাম।
ওটামেন্ডির থেকে যখন বলটা মেসির পায়ে আসে, ওর সামনে তখন অস্ট্রেলিয়ার চার-চারটে ডিফেন্ডার।কাটিয়ে বের হওয়া একপ্রকার অসম্ভবই ছিল। আর মেসি যে সেই চেষ্টা না করে শট নেবে, সেটা নিয়ে নিশ্চিত ছিলাম। সেটাই হল। ডিফেন্ডারের পায়ের ফাঁকা থেকে সোজা শট ঢুকে গেল গোলে। অস্ট্রেলিয়ার গোলকিপার হদিশই পেল না বলের। মেসির থেকে এমন গোলই তো প্রত্যাশিত! সিনিয়ার কেরিয়ারে আজ হাজারতম ম্যাচটা খেললেন মেসি। নিজের মাইলস্টোন ম্যাচেও সমান উজ্জ্বল থাকল ও।
তবে এই জয়ের মধ্যেও দু’টো বিষয় চোখে লাগল। প্রথমত আর্জেন্টিনার ডিফেন্স। অস্ট্রেলিয়ার প্রতি সম্মান জানিয়েই বলছি, নেদারল্যান্ডসের বিরুদ্ধে এভাবে ডিফেন্স করলে চলবে না। অস্ট্রেলিয়ার ফরোয়ার্ডরা বারবার ওটামেন্ডি, রোমেরোদের টপকে বক্সে বিপজ্জনক পরিস্থিতি তৈরি করছিল। শেষ পর্যন্ত বড় কোনও বিপদ হয়নি। যে গোলটা হল, সেটাও এনজোর গায়ে লেগে বলটা অন্যদিকে চলে যাওয়ায়। কোয়ার্টার ফাইনালে মেম্ফিস ডিপে বা কোডি গাকপোর বিরুদ্ধে এমন ভুলের কোনও ক্ষমা হবে না। স্কালোনিকে দ্রুত ভুল শুধরে নিতে হবে।
আর বলব লটারো মার্টিনেজের কথা। ক্লাব ফুটবলে ভাল খেলে। অনেকেই ভেবেছিল এবার মেসির কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আর্জেন্টিনার আক্রমণে নেতৃত্ব দেবে। কোথায় কী! একটার পর একটা সুযোগ নষ্ট করল। আজ আলভারেজ উঠে লটারো নামার পর আর্জেন্টিনার আক্রমণের ঝাঁঝ অনেকটাই কমে যায়। বিশ্বকাপের এই পর্যায়ে এসে বিষয়টা নিশ্চিত ভাবেই চিন্তার।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.