Advertisement
Advertisement

Breaking News

Lionel Messi

লিওর হাত ধরে ভিনগ্রহে যাবে কাপ! মেসি-ধ্যানে মগ্ন ফুটবল পাগলের প্রলাপ

১৯৮৬-তে দিয়েগোর খেলা দেখার পর মাথাটা বিগড়ে যায়!

Qatar World Cup 2022: A fictitious story about Lionel Messi | Sangbad Pratidin
Published by: Kishore Ghosh
  • Posted:December 17, 2022 8:30 pm
  • Updated:December 18, 2022 5:24 pm  

কিশোর ঘোষ: ভাঙা মালসা, আমি আর শ্মশান। পুকুর পাড়ে বসে আছি। ধ্যানস্থ ভঙ্গিতে। নিভু বিকেল। রোজকার মতো কেউ সুইচ টিপে দিয়েছে, এক্ষুনি ঠান্ডা হবে সূর্যের ফিলামেন্ট। যাক গে মানে, এখন ধ্যানটাই হল আসল। ‘মেসি ধ্যান’ করছি। মেসির (Lionel Messi) জন্য ধ্যান। ও ফাইনাল জিতলে আমার ফুটবল সাধনা সার্থক হবে। এই জন্যই কঠিন জায়গায় গভীর ধ্যানে মগ্ন আমি। গ্রহ-নক্ষত্রের সঙ্গে যোগাযোগ কি চাট্টিখানি কথা! না হলে দিয়েগোর (Diego Maradona) সঙ্গে যোগাযোগ হবে কী করে! ওর সঙ্গে কথা আছে। জরুরি কথা। 

পাড়ার লোকের বক্তব্য, তীব্র শান্ত এই শ্মশানে ভূত, সাপ আর আমি থাকি। সত্যি বলতে মরা পোড়ানো ছাড়া কেউ এদিক আসেই না। লোকের ধারণা শ্মশানে একা থাকা ঠিক না। আমার মতো পাগলের অভিজ্ঞতা সম্পূর্ণ আলাদা। রাতের পর রাত ভাঙা মন্দির লাগোয়া স্যাঁতস্যাঁতে ঘরটায় থাকতে থাকতে বুঝেছি, শ্মশানে ভূত থাকে না। তবে যা থাকে সে জিনিসে বিরাট ভয় খায় গড় মানুষ। কী থাকে? শান্তি থাকে। এমনি শান্তি না, শ্মশানের শান্তি। এ জিনিস সহ্য হয় না গড় মানুষের। ফলে ঝামেলা-হই হট্টগোলের মধ্যে জীবনটা কাটিয়ে দিতে চায় তারা। শান্ত হলেই যে মগজের ফাঁকফোকরে পা হড়কে প্রবল আছাড় খাওয়ার সম্ভাবনা। আমিও হড়কেছি।

Advertisement

[আরও পড়ুন: ‘আমি তৈরি’, বিশ্বকাপ ফাইনালে নামার আগে রণহুঙ্কার লিও মেসির]

হড়কেই পাগল হয়েছি। ফুটবল পাগল। ভাল খেলতাম। পাড়া লেভেলে। প্রচুর পুরস্কার। টিফিন বক্স, জামা-প্যান্টের পিস, জার্সি, হাফপ্যান্ট, ট্যুর ব্যাগ, মেডেল, ট্রফি। কলার তুলে চলতাম। মেয়েরা ইয়ে করত। তারপর ১৯৮৬। দিয়েগো। ড্রিবল ড্রিবল ড্রিবল। বেটে লোকের ঢ্যাঙামো! শতব্দীর সেরা গোল। ঈশ্বরের হাত ও পা নিয়ে প্রশংসা ও বিতর্ক। ঘাসের মাঠে শক্তি চ্যাটুজ্যের মাতাল পদ্য দেখলাম মাইরি! ফাইনাল অবধি কোনওরকমে দাঁত চেপে সহ্য করলাম ওই জিনিস। ওই ভয়ংকর সুন্দর আর সহ্য করতে পারিনি। সোজা পাগল হয়ে গেছি।

পাড়ার লোকেদের বক্তব্য, ১৯৮৬-র ফাইনালের পর খাওয়া-ঘুম-স্নান বন্ধ করে দিই। নার্ভের ডাক্তার দেখানো হয়। হাসপাতালে ভরতি হই। কিন্তু সবার সব ষড়যন্ত্র ছাপিয়ে ‘ফুটবল পাগল’ খেতাব পাই আমি। অনেকে ‘দিয়েগো’ বলেও ডাকে। হেব্বি লাগে! এর বেশি বলব না। স্মৃতিতে বেশি চাপ মারলে মগজ ফেটে ঘিলু বেরিয়ে পড়বে। তারপর চুল আচড়াতে পারব না। আয়নায় ভাঙা মুখ দেখতে পারব না। অতএব, পুরনো কথা বাদ দিন ভাই। কথা হল, গত এক মাস ধরে ক্লাবের দক্ষিণের জানলা ধর ঝুলতে ঝুলতে খেলা দেখছি। এবং নিশ্চিত হয়েছি, আমার মতো, দিয়েগোর মতো লিও ছেলেটাও ভিনগ্রহের প্রাণী। যে স্কিল ও খেলনাবাটি স্টাইলে দেখাচ্ছে, তা পৃথিবীর কারও পক্ষে দেখানো সম্ভব না।

[আরও পড়ুন: সিদ্ধান্ত যেতে পারে আর্জেন্টিনার বিপক্ষে, ইংল্যান্ডের রেফারিকে বাতিল করল ফিফা

যেমন দৌড় দেখা গেল ক্রোয়েশিয়ার সঙ্গে সেমিফাইনালে। দ্বিতীয় গোলের সময়। আকাশ থেকে পাতাল অবধি দৌড়! বক্সের বাইরে ও ভিতরে, সামনে এগিয়ে, কখনও পিছিয়ে, দৌড় দৌড় দৌড়। পায়ে প্রেমিকার মতো বল। মহাকাশে আপন খেয়ালে ঘুরে বেড়াচ্ছেন মেসি। আর কেউ নেই। ক্রোয়েশিয়া নেই, পোল্যান্ড নেই। লিওই লিওর  আত্মপক্ষ ও প্রতিপক্ষ। ফলে ওঁর বাঁ পা আর বলের প্রেম ততক্ষণ চলল, যতক্ষণে আলভারেজ পৌঁছলেন গোল করার মতো জায়গায়। বাকিটা সবার জানা। পোল্যান্ডের বিরুদ্ধেও ওয়ানটাচ খেলে যে গোলটা করল, সেক্ষেত্রেও নিজেই নিজেকে পাস বাড়ায় লিও। এই কাজ অবশ্য সে গত এক দশকের বেশি সময় ধরে করে আসছে। আরও কিছুদিন করবে। তারপর যেখান থেকে এসেছিল সেখানে ফিরে যাবে। এই জন্যই ধ্যান।

এই জন্যই শ্মশানে বসে ভিনগ্রহের টাওয়ার খোঁজা। ধ্যানে দিয়েগোকে ধরার চেষ্টা । দিয়েগোর পরমার্শ পেলে ট্রফিটা ভিনগ্রহে যাবেই। পরামর্শ পেলেই ধ্যানের টানেল দিয়ে তা পৌঁছে দেব লিওর কাছে। লিওকে ট্রফিটা এবার পেতেই হবে। দিয়েগো আর আমার জন্য পেতে হবে। তারপর নক্ষত্রের মতো শান্ত ছেলেটা বুট তুলে রাখবে মহাকাশের কার্নিশে। ১৯৮৬ সালে দিয়েগোর খেলার দেখার পর ওই ছোট বয়সেই আমি যেমন নিজেকে তুলে রেখেছিলাম! কমান লিও, কমান। শীতের রাতে ঠক ঠক করে কাঁপতে কাঁপতে আমি তোমার জন্য ক্লাবের দক্ষিণের জানলা ধরে ঝুলব। সেদিন খেতে পেলে ঝুলব, না পেলেও ঝুলব। মরে গেলে, বেঁচে থাকলেও…। তুমি শুধু খেলে দিও প্লিজ। যে খেলাটা আমি ছোটবেলার পাড়ার ঘাসে ফেলে এসেছি।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement