শতদ্রু দত্ত: বিশ্বকাপ শেষ হয়েছে, মাত্র কয়েক দিন হল। আর তার মধ্যেই কি না আমরা বিশ্ব ফুটবলের সেরা নক্ষত্রকে হারালাম!
পেলে (Pele), আমাদের রূপকথার মহানায়ক, তিনি আর নেই। বৃহস্পতিবার গভীর রাতে প্রথম খবরটা শুনি যখন, ভেবেছিলাম গুজব। সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে কতই না এ সমস্ত উল্টোপাল্টা খবর ছড়ায়। কিন্তু ব্রাজিলে এক পরিচিতকে ফোন করায় সে বলল, খবরটা সত্যি। ফুটবল সম্রাট আর নেই। ততক্ষণে চ্যানেলে, চ্যানেলে, ওয়েবসাইটে খবরটা দ্রুত ছড়াতেও শুরু করেছে।
পেলে নিয়ে কত স্মৃতি ভিড় করছে মনে। আমার মতো ছা’পোষা একজন কোনও দিন পেলের সঙ্গে কথা বলতে পারব, ভাবতেও পারিনি। আজও মনে পড়ে দিনটা। একটা ভিডিও শ্যুটের জন্য সাও পাওলো গিয়েছিলাম। সেখানে আমি এক ব্রাজিলীয় বন্ধু বলল, তৈরি হয়ে নাও। পেলের সঙ্গে দেখা করতে যাব আমরা! শুনে স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিলাম। কী বলছে ও? পে-এ-লে! আমি পেলের সঙ্গে দেখা করব? শেষ পর্যন্ত দেখা হল, আমার স্বপ্ন সত্যি করে কথা হল স্বপ্নের জাদুকরের সঙ্গে। তখন পেলে আর একটা শ্যুটিংয়ে ব্যস্ত। বিশাল একটা টেবলের এক দিকে বসে ইন্টারভিউ দিচ্ছেন। ইন্টারইভিউ পর্ব মেটার পর, কথা বলতে গেলাম আমরা। বললাম, কলকাতা থেকে এসেছি। দেখলাম, কলকাতা নিয়ে ওঁর স্মৃতি তখনও বেশ টাটকা। নিজেই বলতে শুরু করলেন, কলকাতার কথা, কলকাতা এয়ারপোর্টের (Kolkata Airport) কথা। বললেন যে, খেলতে এসেছিলেন যখন, এয়ারপোর্টের বাইরের ভিড় দেখে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলেন তাঁর এক সতীর্থ। হাসতে হাসতে বলেছিলেন, ‘‘কত লোক এসেছিলেন আমাদের খেলা দেখতে। ভাবতেই পারিনি কলকাতায় এসে এত ভালবাসা পাব।’’
গত রাতের পর পর স্মৃতি হয়ে গেল। তার পরেও নানা সময়ে পেলের সঙ্গে দেখা হয়েছে আমার। কখনও ব্রাজিলে গিয়ে দেখা করেছি, কখনও লন্ডনে (London)। পেলে কিন্তু অসম্ভব আমুদে মানুষ, আড্ডা দিতে বড় ভালবাসতেন। নানা বিষয়ে জ্ঞান ছিল। আমরাও কিছু বললে, মন দিতে সমস্ত শুনতেন। পেলেকে কাছ থেকে দেখার সুযোগ পাই ২০১৫ সালে। পেলেকে কলকাতায় আনার ব্যাপারে অন্যতম উদ্যোগী ছিলেন বলে আরও কাছ থেকে পেলেকে জানার, চেনার সুযোগ পেয়েছি। জোর দিতে বলতে পারি, ওঁর চেয়ে বড় পেশাদার জীবনে দেখিনি। হালফিলের যে কোনও ফুটবলারকে পেশাদারিত্বে গুণে গুণে দশ গোল দেবেন। অথচ এত বড় ফুটবলার হওয়া সত্ত্বেও কখনও মেজাজ হারাতে দেখিনি। অসম্ভব বিনয়ী ছিলেন, কোনও মহাতারকা সুলভ বায়না ছিল না। সফরে যা যা করার কথা ছিল, সবই করেছিলেন উনি। আর জানার আগ্রহ ছিল প্রচুর। বাংলা ভাষা, বাংলার সংস্কৃতি নিয়ে যে কত প্রশ্ন করতেন, কত খোঁজখবর নিতেন। বাঙালি খাবারও চেখে দেখেছেন।
পেলের বিনয়ের কথা বলছিলাম। ওঁকে সর্বকালের শ্রেষ্ঠ ফুটবলার ধরা হয়। অথচ পেলে নিজে বলতেন, সর্বকালের সেরা ফুটবলার একজনই, আলফ্রেডো ডি’স্তেফানো (Alfredo Di Stefano)। বলতেন, ফ্রাঞ্জ বেকেনবাওয়ারের কথা। জোহান ক্রুয়েফের (Johan Cruyff) কথা। তবে দিয়েগো মারাদোনাকে নিয়ে খুব একটা কিছু বলতে চাইতেন না। একবার ঘুরিয়ে প্রশ্ন করেছিলাম, আপনার মতে কে সেরা? আপনি না মারাদোনা (Maradona)? সরাসরি জবাব দেননি। শুধু বলেছিলেন, ‘‘আমার মা বলেন, ওঁর দেখা সেরা ফুটবলার আমি।’’ অর্থ এবার তুমি বুঝে নাও! ভারতীয় ফুটবলের উন্নতির জন্যও কত মন্ত্র দিয়ে গিয়েছিলেন পেলে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.