আলাপন সাহা: মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গল – ময়দানের দুই প্রধানের বিরুদ্ধেই গোল করে এবার তিনি জিতিয়েছেন পিয়ারলেসকে। ময়দানে তাঁকে ‘জায়ান্ট কিলার’ হিসেবেও ডাকা শুরু হয়ে গিয়েছে। কিন্তু আনসুমানা ক্রোমার সঙ্গে কথা বলে মনে হল, জয়ের তৃপ্তি মাথায় নেই। বরং তিনি এখনও ইস্টবেঙ্গল সমর্থকদের অভব্য আচরণ ভুলতে পারছেন না।
প্রশ্ন: ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে জয়টা কীভাবে সেলিব্রেট করলেন? স্পেশ্যাল কিছু হল?
ক্রোমা: না, না তেমন কিছু না। আমার স্ত্রী খুব ভাল কষা মাংস রান্না করে। তার সঙ্গে লুচি। সেটাই খেলাম।
প্রশ্ন: আপনি লুচি-মাংস খান?
ক্রোমা: হ্যাঁ, স্ত্রী বাঙালি তো (হাসি)। অভ্যেস হয়ে গিয়েছে।
প্রশ্ন: আপনার স্ত্রী তো কাল গ্যালারিতে ছিলেন? কী বললেন আপনার গোলে পিয়ারলেস জেতার পর?
ক্রোমা: ও ভীষণ ডিপ্রেসড হয়ে পড়েছিল।
প্রশ্ন: কেন?
ক্রোমা: গ্যালারি থেকে ইস্টবেঙ্গল সমর্থকরা কীরকম নোংরা ভাষা ব্যবহার করছিল, দেখেননি? খুব খারাপ ভাষা ব্যবহার করছিল আমাকে নিয়ে। ওসব শুনে কেউ ভাল থাকতে পারে? এই প্রথম আমার স্ত্রী ইস্টবেঙ্গল মাঠে খেলা দেখতে গিয়েছিল। কী ধারণা হল ওর?
প্রশ্ন: ক’দিন আগে মোহনবাগানের বিরুদ্ধেও আপনি গোল করেছিলেন…।
ক্রোমা: (থামিয়ে দিয়ে) মোহনবাগান সমর্থকরা অন্যরকম। ম্যাচ হেরে যাওয়ার পরেও ক্রোমা ক্রোমা বলে চেঁচিয়ে গিয়েছেন। ওঁরা সবসময় আমার পাশে থেকেছেন। সম্মান করেছেন। গোল করলে ভালবেসেছেন, না করলেও ভালবাসা কখনও ঘৃণায় বদলে যায়নি। ভবিষ্যতে মোহনবাগান যদি আবার ডাকে, অবশ্যই যাব। কিন্তু ইস্টবেঙ্গলে খেলার সময় সমর্থকরা আমার সঙ্গে যা খারাপ ব্যবহার করেছে, সেটা আমি জীবনে ভুলতে পারব না। আমার মা’কে নিয়ে খারাপ খারাপ কথা বলত। আরে, আমি তো তখন ইস্টবেঙ্গল জার্সি পড়েই খেলতাম। নিজেদের ক্লাবের ফুটবলারকে ওরা ন্যূনতম সম্মানটুকু দেবে না? অথচ আমি ইস্টবেঙ্গল সমর্থকদের সঙ্গে মেসেজে কথা বলতাম। ফোনে কথা বলতাম। তার পরেও ইস্টবেঙ্গল সমর্থকরা যা নোংরামি করলেন, ভাবা যায় না। গোল করার পর আমি কিন্তু অতিরিক্ত উৎসব করিনি। তার পরেও এটা কেন হবে আমার সঙ্গে? এসব বন্ধ হওয়া দরকার। এতসব কিছুর পরও বলব, আমি ইস্টবেঙ্গল সমর্থক-ক্লাবকে শ্রদ্ধা করি।
প্রশ্ন: সবাই আপনাকে এখন ময়দানের ‘জায়ান্ট কিলার’ বলছেন, জানেন?
ক্রোমা: তাই?
প্রশ্ন: হ্যাঁ। মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে গোল। দু’টো টিমের বিরুদ্ধেই আপনার গোলে জিতেছে পিয়ারলেস।
ক্রোমা: দেখুন, বড় ক্লাবের বিরুদ্ধে গোল করলে খুব ভাল লাগে। তবে আমি ব্যাপারটা ওভাবে দেখি না। মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে গোল করে টিমকে জেতাতে পারলে তিন পয়েন্ট পাব। আবার কালীঘাট এমএসের বিরুদ্ধে জিতলেও তিন পয়েন্ট পাব। আমি একটা ভাবনা নিয়েই মাঠে নামি, গোল করতে হবে। দলকে জেতাতে হবে।
প্রশ্ন: কিন্তু বড় দলের বিরুদ্ধে নামলে আলাদা মোটিভেশন কাজ করে না?
ক্রোমা: বললাম যে, আমার একটাই লক্ষ্য, গোল করে দলকে জেতানো। সৎভাবে নিজের কাজটা করা। তা সে প্রতিপক্ষ যেই হোক না কেন।
প্রশ্ন: ৬ ম্যাচে ১৩ পয়েন্ট। লিগ শীর্ষে পিয়ারলেস। সবাই বলছে, লিগ হয়তো এবার পিয়ারলেসের।
ক্রোমা: এটাকে ফ্লুক ভাববেন না। গত দু’বছর ধরেই আমাদের টিম খুব ভাল খেলছে। গতবার আমরা রানার্স হয়েছিলাম। তবে আমাদের কাজটা এখনও খুব কঠিন। পাঁচটা ম্যাচ বাকি রয়েছে। সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। আত্মতুষ্টির কোনও জায়গা নেই। ফুটবলে যখন তখন যা কিছু হয়ে যেতে পারে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.