স্টাফ রিপোর্টার: আই লিগ-আইএসএল ইস্যুতে ক্লাব জোটের চিঠিতে ফেডারেশনের কাছে কার্যত কৈফিয়ত চাইল ফিফা। কয়েকদিন আগেই মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গল-সহ ছ’টি ক্লাব একসঙ্গে জোট বেঁধে বিভিন্ন অভিযোগ জানিয়ে চিঠি পাঠিয়েছিল ফিফা এবং এএফসিকে। তারই পরিপ্রেক্ষিতে ফেডারেশনের এদিনের চিঠি।
ক্লাব জোটের প্রশ্ন ছিল, আই লিগকে সরিয়ে কেন আইএসএলকে দেশের শীর্ষ লিগ করা হবে। এতদিন ধরে নিয়ম ছিল, আই লিগ চ্যাম্পিয়ন দল খেলবে এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লিগে। কিন্তু এফএসডিএলের চাপে হঠাৎ করেই এই মরশুমে ফেডারেশন জানিয়ে দিল, আই লিগ চ্যাম্পিয়ন নয়, আইএসএল চ্যাম্পিয়ন দল খেলবে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ কোয়ালিফাইং রাউন্ডে। কেনই বা আই লিগ খেলে এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লিগে খেলা যাবে না? এরকম নানা প্রশ্ন তুলেছে আই লিগের ক্লাবগুলি।
ফিফা এবং এএফসিকে পাঠানো চিঠিতে ক্লাবগুলি জানিয়েছিল, দেশের সেরা লিগ কখনও কোনও ব্যক্তিগত মালিকানাধীন সংস্থা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। অথচ ভারতীয় ফুটবলে তাই হচ্ছে। ক্লাবগুলির চিঠি পেয়ে একই প্রশ্ন জেগেছে ফিফা কর্তাদের মনেও। তাই এই সমস্ত প্রশ্নের জবাব চেয়ে বৃহস্পতিবার ফেডারেশনকে চিঠি পাঠাল ফিফার চিফ মেম্বার অ্যাসোসিয়েশন অফিসার জয়েস কুক। যেখানে ফিফা জানতে চেয়েছে, ভারতীয় ফুটবলের উন্নতির জন্য ২০১৮-তে তাদের ও এএফসির তৈরি করে দেওয়া রিপোর্টে যে যে পরামর্শগুলো দেওয়া হয়েছিল, তা কতটুকু মেনে চলা হয়েছে? ভারতীয় ফুটবলের রোডম্যাপই বা কী? পাশাপাশি ক্লাব জোটে থাকা প্রতিটা ক্লাবকেও আবার চিঠি পাঠানো হয়েছে ফিফার তরফ থেকে। তাদেরকে আশ্বস্ত করা হয়েছে প্রতিটা অভিযোগই খুঁটিয়ে দেখছে ফিফা।
ফিফার চিঠিতে যে রিপোর্টের কথা বলা হয়েছে তা তৈরি করা হয়েছিল ২০১৮-তে। সেই সময় ফিফা এবং এএফসি কর্তারা ভারতে এসে যৌথভাবে প্রতিটা ক্লাবের মালিকদের সঙ্গে কথা বলেছিল। জানতে চেয়েছিল সমস্যাটা কোথায়? ভারতে উড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হয় ফিফার দুই প্রতিনিধি নিক ক্রফোর্ড ও অ্যালেক্স ফিলিপসকেও। যাতে তাঁরা প্রতিটা ক্লাবের প্রতিনিধির ব্যক্তিগত সাক্ষাৎকার নিতে পারেন। ভারতীয় ফেডারেশন যাতে দুটো লিগ এক করতে গিয়ে কোনও সমস্যায় না পড়ে সেই ব্যাপারেও রিপোর্টে পরামর্শ দেওয়া হয়। এমনকী ক্লাবদের সঙ্গে কথা বলার পর ফিফা এবং এএফসির কর্তারা সমস্যা সমাধানের জন্য আলোচনায় বসেন ফেডারেশন কর্তাদের সঙ্গেও। তাহলে এতদিন পরেও কেন সেই রিপোর্ট মানা হচ্ছে না, তাতেই সামান্য হলেও স্তম্ভিত ফিফা।
গত মরশুম অবধি আই লিগ ছিল শীর্ষে। ফেডারেশনের পাশাপাশি এফএসডিএলও চাইছিল ইস্টবেঙ্গল ও মোহনবাগান এসে খেলুক আইএসএলে। দুই প্রধানের তাতে কোনও আপত্তিও ছিল না। তবে জট বাঁধে অন্য জায়গায়। ফেডারেশনের ‘কমার্শিয়াল পার্টনার’ এফএসডিএলের দাবি আইএসএলের অন্যান্য দলগুলির মতোই ফ্র্যাঞ্চাইজি ফি দিয়ে আইএসএল খেলতে হবে দুই প্রধানকে। আর তাতেই শুরু হয় বিতর্ক। মোহনবাগান ও ইস্টবেঙ্গল মানেই ভারতীয় ফুটবলের দুই পীঠস্থান। ভারতের দুই ইতিহাস সমৃদ্ধ ক্লাবকে কেন ফ্র্যাঞ্চাইজি ফি দিতে হবে তা নিয়েই তোলা হয় প্রশ্ন? শেষমেশ আবার এফএসডিএলের চাপে পড়ে আইএসএলকেই দেশের শীর্ষ লিগ ঘোষণা করতে বাধ্য হয় ফেডারেশন। আই লিগকে দেশের সেকেন্ড টিয়ার লিগ বানিয়ে দেওয়া হয়েছে। আই লিগে বিজয়ী দল খেলবে এএফসি কাপে। আইএসএলকে শীর্ষ লিগ ঘোষণার পর ভারতীয় ফুটবল বাঁচাতে ফিফা প্রেসিডেন্ট জিয়ান ইনফান্টিনোকে চিঠি পাঠায় ক্লাব জোট। এমনকী সাহায্যের জন্য চিঠি পাঠানো হয় ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকেও।
ফিফার চিঠি পেয়ে ফেডারেশন থেকে সরকারিভাবে বিবৃতি দেওয়া হয়। যে কথা এতদিন ধরে বলে এসেছে সেটাই আবার বলা হয়। জানানো হয় ২০১৮-র সেই রিপোর্টে ফিফার ছকে দেওয়া প্ল্যানই মেনে চলা হচ্ছে। যে কথা নাকি প্রেসিডেন্ট প্রফুল্ল প্যাটেলও নিজের সাম্প্রতিক সমস্ত সাক্ষাৎকারে স্বীকার করেছেন। এদিনও ফেডারেশনের তরফে সরকারিভাবে বিবৃতি দিয়ে বলা হয়, সব সমস্যার সমাধান করতে আরও দু-তিনটে ফুটবল মরশুম লাগবে। যে কথা কিছুদিন আগে ক্লাব জোটকেও জানিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট প্রফুল্ল প্যাটেল। এখানেই প্রশ্ন তুলেছেন ক্লাব জোটের প্রতিনিধিরা। ২-৩ বছরের মধ্যে দুটো লিগ এক করা হবে, আজ পর্যন্ত এই ইস্যুতে কোনও চিঠি দেয়নি ফেডারেশন। তাহলে কীভাবে তিনি বিবৃতি দিচ্ছেন? যাই হোক, ফিফার এই চিঠিতে কিছুটা হলেও চাপে পড়েছে ফেডারেশন। যে কারণে আধঘণ্টার মধ্যে পালটা বিবৃতি দিতে হয়েছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.