স্টাফ রিপের্টার: আগেরদিন যে ফুটবলাররা ইস্টবেঙ্গল ক্লাবে মিটিং করে বলেছিলেন, চুক্তি না বদলালে কোনওমতেই সই করা উচিত নয়। শুক্রবার সেই প্রাক্তন ফুটবলাররাই একত্রে মিটিং করে বললেন, “শুধু আইএসএল (ISL) কেন, সব ধরনের প্রতিযোগিতাতেই ইস্টবেঙ্গলের খেলা উচিত। আমরা খেলার পক্ষে।’’
ফুটবলাররা যখন লাল-হলুদ তাঁবুতে বসে খেলার পক্ষে মত দিচ্ছেন, ঠিক তখনই কোয়েস ইস্টবেঙ্গলের তিন ফুটবলার, পিন্টু মাহাতো, রক্ষিত দাগার এবং আভাস থাপার বকেয়া বেতন না মেটানোয় ট্রান্সফার ব্যানের কবলে পড়তে হল ইস্টবেঙ্গলকে। যতক্ষণ না এই তিন ফুটবলারের বকেয়া বেতন হিসেবে ৮ লক্ষ ৬৬ হাজার টাকা না মেটানো হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত ক্লাবের উপর ফেডারেশনের এই ট্রান্সফার ব্যান থাকবে। একে ৩১ আগস্ট শেষ হয়ে যাচ্ছে ফিফার ট্রান্সফার উইন্ডো। তার মধ্যে আবার ট্রান্সফার ব্যান। ক্লাব কর্তারা যদি শেষ পর্যন্ত সইও করে দেন, এই মরশুমে এসসি ইস্টবেঙ্গল (SC East Bengal) যে কীভাবে দল মাঠে নামাবে, কেউ জানে না।
এদিন ক্লাবের কার্যকরি কমিটির মিটিংয়ের আগেই প্রাক্তন ফুটবলাররা নিজেদের মধ্যে আলোচনায় বসে ঠিক করেন, যাই হোক ইস্টবেঙ্গলকে খেলতে হবে। যার অর্থ, সমস্যা মেটানোর কথা পাশাপাশি চলতে থাকলেও চুক্তিপত্রে সই করে খেলাটা শুরু করে দিতে হবে। এদিনের মিটিংয়ে অবশ্য সুকুমার সমাজপতি, চন্দন বন্দ্যোপাধ্যায়, সুভাষ ভৌমিক-সহ বেশ কিছু প্রাক্তন ফুটবলারকে দেখা যায়নি, যাঁরা আগের মিটিংয়ে ছিলেন। এদিনের ফুটবলারদের নিজেদের মধ্যে মিটিংয়ের পর ১১ জন ফুটবলারকে নিয়ে একটি কমিটি গঠিত হয়, যাঁরা পরে ক্লাবের কার্যকরি কমিটির সঙ্গে আলোচনায় বসেন। সেই মিটিংয়ে প্রাক্তন ফুটবলাররা বিভিন্ন মত দিলেও, মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য তাঁর ব্যক্তিগত মত হিসেবে বলেন, “আমার মনে হয়, আমাদের আগে সই করে খেলার প্রক্রিয়াটা শুরু করা উচিত। তারপর সেরকম হলে আমরা সবাই মিলে শ্রী সিমেন্টের সঙ্গে ক্লাবের সমস্যাগুলি নিয়ে আলোচনায় বসব।’’
তাঁর বক্তব্যকে মিটিংয়ে অনেকেই সমর্থন করেন। তবে শেষ পর্যন্ত প্রাক্তন ফুটবলার প্রশান্ত বন্দ্যেপাধ্যায় বলেন, “চুক্তিপত্রের দুটো ইস্যু (এক্সিট ক্লজ আর কর্তাদের ঘর) নিয়ে আমরা মুখ্যমন্ত্রী এবং হরিমোহন বাঙ্গুর অথবা তাঁর কোনও প্রতিনিধির সঙ্গে আলোচনায় বসব।”
এর আগেও প্রাক্তন ফুটবলাররা মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনায় বসার ইচ্ছে প্রকাশ করলেও তিনি সময় দেননি। প্রশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আগে প্রাক্তন ফুটবলারদের কোনও কমিটি ছিল না। এতজন ফুটবলার দেশের হয়ে খেলেছেন। মুখ্যমন্ত্রী নিশ্চয়ই তাঁদের কথা একবার শুনবেন। আমরা ক্রীড়ামন্ত্রীর সঙ্গেও একবার আলোচনায় বসতে চাইছি। তবে ইস্টবেঙ্গল খেলবে।’’
ক্লাবের কার্যকরি কমিটির সঙ্গে মিটিং শেষ করেই প্রশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায় ফোন করেন শ্রী সিমেন্ট প্রতিনিধি শ্রেণিক শেঠকে। জানান, শ্রেণিক শেঠের সঙ্গে কিছু কথা বলতে চান তাঁরা।
শ্রেণিক শেঠ সঙ্গে সঙ্গে বলেন, “ব্যক্তিগতভাবে প্রত্যকের জন্যই চায়ের আমন্ত্রণ রইল। কিন্তু ইস্টবেঙ্গল নিয়ে কোনও আলোচনা চাইলে তিনি অপারগ। কারণ, ইস্টবেঙ্গল ইস্যুতে কোনও মন্তব্য করার অধিকার তাঁর নেই।” শ্রী সিমেন্ট কর্ণধার হরিমোহন বাঙ্গুর দূর অস্ত, তাঁর প্রতিনিধিই আলোচনায় রাজি না হওয়ায়, ধরেই নেওয়া হচ্ছে, এই ইস্যুতে শ্রী সিমেন্ট ক্লাবের প্রতিনিধি হিসেবে লাল-হলুদের প্রাক্তন ফুটবলারদের সঙ্গে আর কোনও আলোচনা চাইছে না। এখন প্রাক্তন ফুটবলারদের একমাত্র ভরসার স্থল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (CM Mamata Banerjee)।
তবে ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সুরেশ চন্দ্র চৌধুরীর নাতি অমরেশ চৌধুরীকে এদিন ক্লাবে হাজির করিয়ে চমক দেন ক্লাব কর্তারা। তিনি লিখিত বিবৃতি দিয়ে বলেন, চুক্তিপত্র দেখে তাঁর মনে হয়েছে, এটা একটা ‘সেল অফ ডিড।’ তিনিও মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আবেদন করেছেন, ক্লাবের মর্যাদা, ঐতিহ্য ক্ষুণ্ণ হয়, এরকম কোনও কাজ যেন তিনি না হতে দেন। কিন্তু শেষ প্রান্তে এসে তিনি ক্লাব সমর্থকদের আহ্বান জানিয়েছেন, “চলুন সেই ১০০ বছরের আগের ইস্টবেঙ্গলে ফিরে যাই।” এখানেই সকলের বিষ্ময়। বিশ্বের সব ক্লাবের সমর্থকরা যখন আধুনিকতার হাত ধরে এগিয়ে যাওয়ার কথা বলছেন, তখন অমরেশবাবু বলছেন, ইস্টবেঙ্গল ক্লাবকে ফের ১০০ বছর পিছিয়ে যেতে!
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.