ধীমান রায়: বর্ধমান-কাটোয়া অঞ্চলের সাঁওতা বাসস্ট্যান্ডের কাছাকাছি মুশারু আদিবাসীপাড়া। একশো পরিবারের বাস এখানে। এই পাড়াতেই এখন উৎসবের চেহারা। কারণ, মঙ্গলবার রাতে হায়দরাবাদে জিএমসি বালাযোগী অ্যাথলেটিক স্টেডিয়ামে সন্তোষ ট্রফির ফাইনালে এই পাড়ার ছেলে রবি হাঁসদার গোলেই বাংলা দীর্ঘদিন পর ট্রফি জিততে পেরেছে। সন্তোষ জয় করে বৃহস্পতিবার কলকাতায় ফিরেছেন রবিরা। আপাতত দু’দিন শ্বশুরবাড়িতে কাটিয়ে মুশারু ফিরবেন বাংলার জয়ের নায়ক রবি। সেই অপেক্ষাতেই দিন গুণছেন তাঁর মা তুলসী হাঁসদা-সহ গোটা মুশারু গ্রাম।
রবির বাবা সুলতান হাঁসদা মারা গিয়েছিলেন গত জুনে। সেই কথা মনে করেই তুলসী সজল চোখে বলছিলেন, “ওর বাবা আজকের দিনটা দেখে যেতে পারল না। মারা যাওয়ার আগে বারবার বলেছিল, রবি একদিন আমাদের গর্ব হবে।” সুলতান হাঁসদা জনমজুরি করতেন। শেষের দিকে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে আর বেশি পরিশ্রম করতে পারতেন না। তখন সংসার প্রতিপালন করার জন্য একটি টোটো কিনে ভাড়া খাটাতেন। তুলসী কোনও রকমে জনমজুরি করেই সংসারটা সামলেছেন। এত আর্থিক অনটনের মধ্যেও যাতে ফুটবল খেলায় সমস্যা না হয়, তাই কখনও কাজ করতে পাঠাননি রবিকে।
স্থানীয় মুশারু আদিবাসীপাড়া মিলন সংঘের মাঠেই ফুটবলচর্চা শুরু রবির। সেই ক্লাবের কর্তা তাম্বর মুর্মু বলছিলেন, “রবির যখন ৬-৭ বছর বয়স, তখন থেকেই আমাদের সঙ্গে এই মাঠে ফুটবল খেলতে আসত। ১২ বছর বয়সে ওকে একটি ফুটবল কোচিং ক্যাম্পে ভর্তি করে দিয়ে আসা হয়। সেখান থেকেই প্রশিক্ষণের শুরু।” ২০২২ সালে জাতীয় গেমসে চ্যাম্পিয়ন বাংলা দলেরও গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন রবি। সেবার জাতীয় গেমসে পাঁচ গোল করেছিলেন তিনি। আর এবারে ১২ গোল করে সন্তোষ ট্রফির সর্বোচ্চ গোলদাতা হয়েছেন। প্রতিবেশীরাও উৎসুক হয়ে রয়েছেন, কখন বাড়ি ফিরবে তাঁদের নায়ক রবি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.