স্টাফ রিপোর্টার, নয়াদিল্লি: ‘ফুটবলার হিসাবে দেশের সেবা করেছি। এবার প্রশাসক হিসাবে করতে চাই।’ গায়ে ভারতীয় দলের নীল জার্সি। পিঠে জ্বলজ্বল করছে ১৫ নম্বর জার্সি। দীর্ঘ ১৬ বছর জাতীয় দলের হয়ে খেলেছেন শতাধিক ম্যাচ। ১২ বছর তাঁর হাতেই ছিল ভারতীয় দলের আর্মব্যান্ড। দেশের হয়ে জিতেছেন সাফ কাপ, এএফসি চ্যালেঞ্জ কাপ। স্বীকৃতি হিসাবে সম্মানিত হয়েছেন অর্জুন, পদ্মশ্রী পুরস্কারে। সেই বাইচুং ভুটিয়াই নেমে পড়েছেন দেশের ফুটবল প্রশাসকের সর্বোচ্চ পদের লড়াইয়ে।
ঠিক যেভাবে বিসিসিআই সভাপতি হিসাবে ভারতীয় ক্রিকেটকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন, সেভাবেই তিনিও নিজের অভিজ্ঞতা থেকে ভারতীয় ফুটবলকে বিশ্ব মানচিত্রে আরও সম্মানজনক অবস্থায় নিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখছেন পাহাড়ি বিছে। সেই স্বপ্নপূরণে মানব প্রাচীরের মতো দাঁড়িয়ে কেন্দ্র সরকার সমর্থিত আরেক প্রাক্তন ফুটবলার ‘বন্ধু’ কল্যাণ চৌবে। ‘ফুটবলার’ কল্যাণকে সম্মান দিলেও অভিজ্ঞতা, যোগ্যতার দিক থেকে নিজেকেই সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশন সভাপতি পদে যোগ্যতম ব্যক্তি হিসাবে দাবী করলেন পাহাড়ি বিছে। বললেন, “তেমন হলে একটা বিতর্কসভার আয়োজন করা হোক। কল্যাণ, আমি – দু’জনই নিজেদের বক্তব্য, পরিকল্পনা রাখব বিভিন্ন রাজ্য সংস্থার প্রতিনিধিদের কাছে। সংবাদমাধ্যমও থাকুক সেখানে। তারপরই না হয় সবাই বিবেচনা করুন কে যোগ্যতম?”
শুধু স্বপ্নের জাল বোনাই নয়। সভাপতি হলে কোন পথে ভারতীয় ফুটবলের উন্নতি করবেন, সেই ব্লু প্রিন্টও মোটামুটি ছকে রেখেছেন বাইচুং। শুরুতেই জোর দিতে চান তৃণমূল স্তরে। প্রত্যেক রাজ্যে স্পোর্টস এক্সেলেন্স সেন্টার খোলা, গ্রাসরুট ফুটবল টুর্নামেন্ট, অ্যাকাডেমি, প্রতি রাজ্যে লিগ চালু করা, ভালো মানের কোচ, রেফারিদের মান উন্নয়ন, স্থানীয় ভাষায় কোচিং লাইসেন্স-সহ একাধিক প্রাথমিক পরিকল্পনা কথাও শুনিয়ে রাখলেন। যেহেতু নিজে কোনও জাতীয় রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত নন, তাই তিনি সভাপতি হলে কোনও রাজ্যই পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তুলতে পারবে না, সেই কথাও শুনিয়ে রাখলেন বাইচুং।
যে যুদ্ধে নেমেছেন বাইচুং, তা কার্যত অসম লড়াই। তবে বরাবর তিনি শেষ বাঁশি বাজার আগে হারার পাত্র নন। বলছিলেন, “অর্জুন, পদ্মশ্রী থেকে শুরু করে জীবনে যা পেয়েছি, সব ফুটবলের জন্য। আমাদের দেশের ফুটবলে প্রচুর সংশোধন প্রয়োজন। শুধু সঠিক পদে সঠিক লোককে দরকার। আমার মতে, সেই কাজে যোগ্যতম ব্যক্তি আমি।” ফুটবল ছাড়ার পর লাগাতার কাজ করে গিয়েছেন প্রশাসনের নানা কাজে। তাঁর দল ইউনাইটেড সিকিম খেলেছে আই লিগে। সেই দলের সন্দেশ ঝিঙ্ঘান এখন জাতীয় দলের নির্ভরযোগ্য ফুটবলার। এক সময় ১৬০-এর নিচে ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে থাকা ভারত, তিনি ফেডারেশনের টেকনিকাল কমিটির চেয়ারম্যান থাকার সময় উঠে এসেছিল প্রথম একশোয়। বর্তমানে কাজ করছেন কেন্দ্রীয় ক্রীড়ামন্ত্রকের সঙ্গেও। মিশন অলিম্পিক কমিটির অন্যতম সদস্য বাইচুং। সেই অভিজ্ঞতা থেকেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ক্রীড়ামোদি আখ্যা দিয়ে তাঁর বিশ্বাস, দায়িত্বে এলে আরও ভালভাবে ভারতীয় ফুটবলকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবেন। একইসঙ্গে প্রতিপক্ষ কল্যাণ চৌবেকে বন্ধু বলে উল্লেখ করেও তাঁর পরিকল্পনার সমালোচনা করতেও ছাড়লেন না বাইচুং। বলছিলেন, “ও বলেছে দায়িত্বে এসে প্রতি রাজ্যে অত্যাধুনিক ফুটবল হাউস তৈরি করবে। হয়তো ওঁকে কেউ কেউ ভুলপথে পরিচালনা করছে। এটা দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা হতে পারে। প্রাথমিক লক্ষ্য হওয়া উচিত গ্রাসরুট ফুটবলের উন্নতি। তাহলেই শুধু আয়োজন করে নয়, নিজেদের যোগ্যতায় আমরা বিশ্বকাপ খেলতে পারব।”
রাজস্থান ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের সমর্থনে অন্ধ্রপ্রদেশ থেকে সভাপতি নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন বাইচুং। সাংবাদিক সম্মেলনে তাঁর সঙ্গে ছিলেন দুই সংস্থার সভাপতি মানবেন্দ্র সিং ও গোপালকৃষ্ণ কোষারাজু। বারবার তাঁরা ফুটবলে রাজনীতি, প্রভাব খাটিয়ে নির্বাচন ভন্ডুল করার অভিযোগ আনলেন। ফুটবলমহলের ধারণা বিজেপির সমর্থন থাকায় কল্যাণ চৌবে দৌড়ে অনেকটাই এগিয়ে। তবে ভারতীয় ফুটবলের আইকন বাইচুং ব্যক্তিগত ক্যারিশমা কাজে লাগিয়ে অসাধ্যসাধন করতে পারেন কিনা, সেদিকেই তাকিয়ে দেশের ফুটবলমহল।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.