সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বাঙালির হৃদয়ে দোলা দিতে স্যান্টোস নামটাই বোধহয় যথেষ্ট। কত শত হিরেই না যুগে যুগে বেরিয়েছে ব্রাজিলের বিখ্যাত এই ক্লাব থেকে। যাঁদের কেউ কেউ পরবর্তীতে বিশ্বজয় করার পাশাপাশি চির-রোম্যান্সের প্রতিচ্ছবি হয়ে থেকে গিয়েছেন ফুটবলপ্রেমীদের মননে। সক্রেটিস। রবিনহো। হালফিলের নেইমার। এবং সর্বোপরি পেলে, স্যান্টোসের অক্ষয় ‘কোহিনুর’। সম্প্রতি ইউরোপীয় ক্লাবদের অবিরাম দাপাদাপিতে স্যান্টোসের পুরনো গরিমা খর্ব আজ। কিন্তু সময় সময় যে পেলের ক্লাব এখনও বিশ্বকে তীব্র ঝাঁকুনিতে নড়িয়ে দিতে পারে, বুধবারের স্যান্তিয়াগো বার্নাবিউ তা দেখে রাখল।
রদ্রিগো, পেপ গুয়ার্দিওলার ম্যাঞ্চেস্টার সিটি (Manchester City) বধের নায়ক একুশ বছরের রদ্রিগো। তিনিও যে স্যান্টোসের! যিনি পরিবর্ত হিসেবে নেমে দু’টো গোল করে শুধু ‘সুপার সাব’ই হয়ে গেলেন না, একই সঙ্গে রিয়াল মাদ্রিদের (Real Madrid) স্কাউটিং স্ট্র্যাটেজিতেও সাফল্যের সরকারি সিলমোহর বসিয়ে গেলেন। যে রিয়াল মাদ্রিদ আগের মতো গালাকটিকো তৈরি করতে এখন আর অত ছোটে না। বরং তারা স্কাউট টিম পাঠিয়ে দেয় ব্রাজিলের গহনে, প্রত্যন্তরে। ফুটবলার নামক সব হীরকখণ্ড তুলে আনার জন্য। ভিনিসিয়াস জুনিয়র, রদ্রিগো সেই স্কাউটিং স্ট্র্যাটেজিরই তো পরিণতি।
সিটিকে গুঁড়িয়ে দিয়ে বুধবার রাতে কিশোরসুলভ ভাবে রদ্রিগো বলছিলেন, “বাবাকে বলেছিলাম, তিন গোল করব। কিন্তু করলাম দু’টো। একটা বাকি আছে। ফাইনালে করব।” টিমকে ফাইনালে তোলার রাতে রদ্রিগোর সর্বপ্রথম বাবাকে মনে করার যথেষ্ট কারণ আছে। রদ্রিগোর বাবা এরিক নিজেও ফুটবলার ছিলেন। দীর্ঘ সময় ব্রাজিলের নানা ডিভিশনের ক্লাবে খেলে বেরিয়েছেন। ছেলের ফুটবল প্রতিভা দেখে বুঝে গিয়েছিলেন, সন্তানের পথপ্রদর্শক তাঁকেই হতে হবে। নইলে ব্রাজিলিয়ান ফুটবলে যা প্রায়শই ঘটে, তা ঘটতে পারে রদ্রিগোর সঙ্গে। ছেলে ভেসে যেতে পারে। বছর পাঁচ-সাত আগে রদ্রিগো স্যান্টোসে ঢোকার সময় এরিক এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, “রদ্রিগোর প্রতিভা আমার কখনও ছিল না। কিন্তু ওর চেয়ে অনেক বেশি আমি জীবনকে দেখেছি।”
Drama to the max! 😲
Which goal had you out of your seat? 🍿#UCLcelebrations | @Heineken | #UCL pic.twitter.com/efsl7oRUvN
— UEFA Champions League (@ChampionsLeague) May 6, 2022
ঈশ্বরসম পিতাকে ছাড়া আরও একজনকে দেবতা জ্ঞানে পুজো করতেন রদ্রিগো। শৈশব থেকে। তিনি নেইমার। অনেকবার বলেওছেন, নেইমারের মতো ড্রিবল করার স্বপ্ন দেখেন। বুধবার রাতে বছর তিন আগে পঁয়তাল্লিশ মিলিয়ন ইউরোয় রিয়ালে আসা রদ্রিগো যে দু’টো গোল করেছেন, তা করতে পারলে স্বয়ং নেইমারও খুশি হতেন। নেইমারের সঙ্গে খেলেওছেন একবার। স্যান্টোসেরই এক প্রদর্শনী ম্যাচে। যা আজও জীবনের সেরা স্মৃতি রদ্রিগোর। স্বাভাবিক। যে ছেলে ছোট থেকে দিবারাত্রি পড়ে থাকত ফুটবল নিয়ে। যার শ্বাস-প্রশ্বাসে মিশে থাকত ফুটবল। তার স্বপ্নের মুহূর্ত তো নেইমার দর্শনই হবে। আসলে প্রতিভা অনেক রকম হয়। কেউ শান্ত, কেউ বন্য। কেউ সুশৃঙ্খল, কেউ বিশৃঙ্খল। রদ্রিগো বরাবর প্রথম প্রজাতির। ব্রাজিলীয় ফুটবলে যা বিরল। স্যান্তিয়াগো বার্নাবিউতে বুধ-রাতে ঠিক তাঁরই করা দু’টো গোলের মতো!
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.