স্টাফ রিপোর্টার: একজন ১৪ বছর। আরেকজন ১৫। একজনের নাম ভাস্কর গঙ্গোপাধ্যায়। অপরজন মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য। যাঁদের নাম আর ইস্টবেঙ্গল, একে অপরের সমার্থক হয়ে গিয়েছে অনেক আগেই। ইস্টবেঙ্গলের ঘরের ছেলে হয়তো অনেকেই আছেন। কিন্তু এই দুই প্রাক্তন ফুটবলার খেলা ছাড়ার পরেও যেভাবে ইস্টবেঙ্গলের সুখে-দুঃখে, ভাল-মন্দের সঙ্গে ওতপ্রতভাবে জড়িয়ে থেকেছেন, তারপর ক্লাবের শতবার্ষিকীতে জীবনকৃতি সম্মান পুরস্কারের নামের তালিকায় তাঁরা ছাড়া অন্য কোনও ফুটবলারের নাম ভাবতেই পারছেন না ইস্টবেঙ্গল কর্তারা।
লাল-হলুদ কার্যকরী কমিটির সদস্যদের চাহিদায় ইস্টবেঙ্গলের শতবার্ষিকী অনুষ্ঠানের অঙ্গ হিসেবেও জীবনকৃতি সম্মান পেতে চলেছেন মনোরঞ্জন ভটাচার্য এবং ভাস্কর গঙ্গোপাধ্যায়। যা নিয়ে ক্লাবের অন্যতম শীর্ষকর্তা দেবব্রত সরকার বললেন, “এখনও সরকারিভাবে কিছু পাকা হয়নি। তবে ক্লাবের প্রায় সবাই চাইছেন, মনোরঞ্জন আর ভাস্করের হাতেই ইস্টবেঙ্গলের শতবার্ষিকীতে জীবনকৃতি সম্মান তুলে দিতে।”
প্রতিবছরই ক্লাবের দু’জন প্রাক্তন ফুটবলারকে জীবনকৃতি সম্মান দেয় ইস্টবেঙ্গল। গত বছর এই সম্মান পেয়েছেন সুরজিৎ সেনগুপ্ত এবং সুনীল ভট্টাচার্য। এ বছর জুলাই থেকে যেহেতু ক্লাবের শতবর্ষ পালন শুরু হচ্ছে, তাই শতবার্ষিকীতে কোন দুই প্রাক্তন ফুটবলারের হাতে জীবনকৃতি সম্মান উঠছে, তা নিয়ে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে রয়েছেন ইস্টবেঙ্গল সমর্থকরা। যে কারণে অনেক আগেই নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে মনোরঞ্জন-ভাস্করের নাম পুরস্কারপ্রাপক হিসেবে প্রায় ঠিক করে ফেলেছেন লাল-হলুদের কার্যকরী কমিটির সদস্যরা।
শুধু ঘরের ছেলে বলেই কি শতবর্ষে দু’জনের হাতে এই বিরল সম্মান তুলে দেবে ইস্টবেঙ্গল? দেবব্রতবাবু বললেন, “মনোরঞ্জন আর ভাস্কর ছাড়াও আরও বহু ফুটবলারকে আমাদের ঘরের ছেলে বলা যায়। রামবাহাদুর, প্রশান্ত সিনহা থেকে শুরু করে অ্যালভিটো, সৌমিক দে’কেও ইস্টবেঙ্গল সমর্থকরা ঘরের ছেলে বলে মনে করে। কিন্তু মনোরঞ্জন আর ভাস্করের ইস্টবেঙ্গল ক্লাবে জায়গাটা অন্যরকম। ওঁরা দু’জন খেলা ছাড়ার পরেও ক্লাবের দুঃসময়ে পাশে থেকেছেন বরাবর। বিভিন্ন সময়ে ক্লাবের যখন আর্থিক সমস্যা হয়েছে, তখন বিভিন্ন ভাবে ক্লাবকে আর্থিক সাহায্য করেছেন ভাস্কর। অনেক কঠিন পরিস্থিতিতে ভাস্কর ক্লাবের পাশে থেকেছেন। সেরকমই খেলা ছাড়ার পরেও ক্লাবের অসময়ে মনোরঞ্জনকে যখনই অনুরোধ করা হয়েছে, তখনই পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। যখন যেভাবে পেরেছেন ক্লাবকে সাহায্য করেছেন। মাঠের মতো মাঠের বাইরেও ইস্টবেঙ্গলের জন্য দু’জনের অবদান অনস্বীকার্য।”
দুই কিংবদন্তির খেলোয়াড়জীবনের কথা বলতে গিয়েও দেবব্রতবাবু বলছিলেন, “ভাস্কর ইস্টবেঙ্গলের জার্সি পরা একমাত্র বাঙালি ফুটবলার যে এশিয়ান গেমসে ভারতীয় ফুটবল দলের অধিনায়ক ছিলেন। আবার ৮০-তে যখন সব ফুটবলার দল ছেড়ে দিল, একা মনোরঞ্জন স্তম্ভের মতো দাঁড়িয়েছিলেন। বাকিটা ইতিহাস। সমর্থকরা মাঠের ভেতর মনোরঞ্জন-ভাস্করের পরাক্রম দেখেছে। আর আমরা কর্তারা খেলা ছাড়ার পরেও ক্লাবের জন্য ওঁদের দু’জনের আত্মত্যাগ দেখেছি। তাই ক্লাবের শতবর্ষে জীবনকৃতি পুরস্কার প্রাপক হিসেবে ওঁদের ভাবা হচ্ছে।” মনোরঞ্জন-ভাস্কর দু’জনই অবশ্য এই মুহূর্তে এই সম্ভাব্য সম্মান পাওয়া নিয়ে মন্তব্য করতে চাইছেন না।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.