দীপঙ্কর মণ্ডল: ব্রিটিশদের হারিয়ে শিল্ড জয় আক্ষরিক অর্থে ঐতিহাসিক। যে ঘটনা ভারতবর্ষের স্বাধীনতা আন্দোলনে অনুঘটকের কাজ করেছিল। সেই ম্যাচের পুঙ্খানুপুঙ্খ ধারাবিবরণী এবার রাখা হবে রাজ্যের স্কুল পাঠ্যক্রমে। সরকারি কর্তারা জানিয়েছেন, এর উদ্দেশ্য একটাই। তা হল, বাংলার ছাত্রছাত্রীদের দেশাত্মবোধ আরও বাড়ানো।
১৯১১ সালে আইএফএ শিল্ডে (IFA Shield) ইস্ট ইয়র্কশায়ার রেজিমেন্টকে হারানোর পর প্রতি বছর ২৯ জুলাই বিশ্বজুড়ে মোহনবাগান দিবস (Mohun Bagan Day) পালিত হয়। বুধবারও নানা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দিনটি উদযাপন করেছে মোহনবাগান ক্লাব। তবে করোনা সতর্কতায় সবই হয়েছে ভার্চুয়াল। পরাধীন ভারতে বাঙালির এই গৌরবগাথা এখনও কোনও রাজ্যের স্কুলপাঠ্যে ঢোকেনি। পশ্চিমবঙ্গ সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ব্রিটিশদের হারিয়ে বাঙালির শিল্ডজয়ের কাহিনী বাংলার ছাত্রছাত্রীদের অবশ্যই জানা উচিত। স্কুলশিক্ষা দপ্তর সিদ্ধান্ত নিয়েছে, আগামী শিক্ষাবর্ষেই মোহনবাগানের শিল্ড জয়ের কাহিনি সিলেবাসে আবশ্যিক করা হবে। ১৯১১ সালে আইএফএ শিল্ডে জয়লাভ করা মোহনবাগানের ১১ জন খেলোয়াড়ের ছবিসহ নাম থাকবে অষ্টম শ্রেণির পাঠ্যে। পাশাপাশি থাকবে সেই ম্যাচের পুঙ্খানুপুঙ্খ ধারাবিবরণী।
রাজ্যের মধ্যশিক্ষা পর্ষদ ইতিমধ্যে বইয়ের খসড়া তৈরি করে ফেলেছে। পাঠ্যপুস্তকে থাকছে, “আইএফএ শিল্ডের ফাইনাল ম্যাচে সাহেবদের টিটকিরি হজম করতে না পেরে জ্বলে উঠেছিল গোটা মোহনবাগান(Mohun Bagan)। হাফ টাইমের পরে শুরু হল মোহনবাগানের মুহুর্মুহু আক্রমণ। শিবদাস ভাদুড়ী বিপক্ষ দলের গোলের সামনে একটা বল পেয়ে সজোরে গলিয়ে দিলেন গোলপোস্টের মধ্যে। গোল শোধ করল মোহনবাগান। খেলা শেষের আর মাত্র কয়েক মিনিট বাকি। মোহনবাগানের অভিলাষ ঘোষ বল ঠেলে দিলেন বিপক্ষের গোলে। তখন অসম্ভব সম্ভব হওয়ার আনন্দে উদ্বেলিত বাঙালি। আকাশে-বাতাসে শুধুই মোহনবাগানের জয়ধ্বনি। আর আকাশভরা ঘুড়িতে লেখা হল মোহনবাগানের জয়ের বার্তা। মোহনবাগানের বিজয় উৎসবে মুখরিত সমগ্র বাংলাদেশে এসেছিল অকাল দীপাবলি। চারিদিকে শুধুই হিপ হিপ হুররে। মোহনবাগানের খেলার মাঠে সাহেবদের হারানোর আনন্দে মশগুল সকলে। মোহনবাগানের খেলোয়াড়রা সকলেই হয়ে উঠেছেন এক একজন হিরো। খেলার মাঠে জাতীয়তাবোধ ছড়িয়ে দিতে সফল হয়েছিলেন মোহনবাগানের খেলোয়াড়রা। দেশের মানুষের মনে দেশাত্মবোধ চেতনা জাগিয়ে তুলতে সমর্থ হয়েছিল মোহনবাগান। মোহনবাগানের শিল্ড জয় ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে অনুঘটকের কাজ করেছিল। স্বাধীনতা সংগ্রামের রাজনৈতিক আন্দোলনকে এগিয়ে দিয়েছিল আরো বেশ কয়েক ধাপ।”
রাজ্যের স্কুলশিক্ষা বিশেষজ্ঞ কমিটি পাঠ্যপুস্তকে নতুন বিষয়টি সংযোজনের প্রস্তাব দেয় সরকারকে। নবান্ন থেকে তা অনুমোদিত হয়। ইংরেজদের হারিয়ে মোহনবাগানের সেই শিল্ড জয়ের ম্যাচে কারা কোন পজিশনে খেলেছিলেন তাও থাকছে পাঠ্যপুস্তকে। ছাত্র-ছাত্রীদের জানানো হবে, গোলে ছিলেন হীরালাল মুখোপাধ্যায়। ব্যাকে এস সুকুল ও সুধীর চট্টোপাধ্যায়। হাফ ব্যাকে মনমোহন মুখোপাধ্যায়, রাজেন সেনগুপ্ত ও নীলমাধব ভট্টাচার্য। ফরোয়ার্ডে যতীন রায়, হাবুল সরকার, অভিলাষ ঘোষ, বিজয়দাস ভাদুড়ী ও শিবদাস ভাদুড়ী। স্কুলশিক্ষা বিশেষজ্ঞ কমিটির সদস্য দীপেন বসু জানিয়েছেন, “রাজ্যের ছাত্র-ছাত্রীদের দেশাত্মবোধ আরও বাড়াতে আমরা অষ্টম শ্রেণির স্বাস্থ্য ও শারীরশিক্ষা বইয়ে মোহনবাগানের আইএফএ শিল্ড জয়ের কথা বিস্তারিতভাবে রেখেছি। রাজ্য সরকার অনুমোদন দিয়েছে। আগামী বছর থেকে মোহনবাগানের বিজয়গাঁথা ছাত্র-ছাত্রীদের পড়ানো হবে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.