দুলাল দে: অনেকে বলবেন, ইস্টবেঙ্গলের থেকে একটা ম্যাচ কম খেলেছে মোহনবাগান। শুধুমাত্র এই তথ্যের উপর ভর করে আত্মতুষ্টিতে ভোগার কোনও সুযোগ নেই। আইএসএলের ইতিহাসে দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দল একই পয়েন্ট (৩) রেখে ডার্বি খেলতে নামছে, এরকমটাও তো আগে কোনওদিন হয়নি। তার মানে এই নয় যে, ভারতীয় ফুটবল ইতিহাসে এই মহাকাব্যিক ম্যাচের আগে মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গল, দু’দলই একই সমান্তরাল সীমারেখায় অবস্থান করছে। কাগজে, ধারে, ভারে ইস্টবেঙ্গলের থেকে অনেকটাই এগিয়ে মোহনবাগান। তবু ইস্টবেঙ্গল (East Bengal) কোচের চেয়ারে স্টিফেন কনস্ট্যানটাইন বলেই, শনিবার হাইভোল্টেজ ম্যাচের আগে কিছুতেই বলা সম্ভব নয়, ম্যাচটায় এগিয়ে রয়েছে মোহনবাগান।
ক্লাবকর্তাদের সঙ্গে সমর্থকদের সম্পর্কের রসায়ন ঘিরে একটা সময় মনে হয়েছিল, কলকাতার (Kolkata) বুকে আইএসএলের প্রথম ডার্বিতে শেষ পর্যন্ত সবুজ-মেরুন গ্যালারি ভরবে তো? কিন্তু দিনের শেষ দেখা যাচ্ছে, বিক্ষোভ একদিকে। বাঙালির চিরকালীন ডার্বি আরেকদিকে। যুবভারতীর গ্যালারিতে পুলিশ নিয়ন্ত্রিত বাফার অঞ্চল বাদ দিয়ে প্রায় ৬২ হাজার টিকিটই নিঃশেষিত। আর সেই কারণেই ম্যাচের আগের দিন বিকেল থেকেই ময়দানে টিকিটের হাহাকার। বিকেল ৩টে পর্যন্ত আইএফএ-তেও কোনও ডার্বির টিকিট এসে পৌঁছয়নি। ময়দানের বিভিন্ন ক্লাব প্রতিনিধি দুপুর থেকেই আইএফএ-তে এসে খোঁজ নিচ্ছিলেন, টিকিট কি শেষ পর্যন্ত এল? ডার্বির টিকিট শেষ পর্যন্ত এসে পৌঁছয় ঠিকই, কিন্তু আইএফএ-কে সাধারণত যে পরিমাণ টিকিট দেওয়া হয়, তার থেকে অনেক কম টিকিট পাঠানো হয়। তাই সেই টিকিট মোহনবাগানকে ফেরত পাঠানো হয় আইএফএ’র তরফে। ম্যাচের আয়োজক মোহনবাগান। তাই ইস্টবেঙ্গল কর্তাদের হাতেও পর্যাপ্ত টিকিট নেই। আইএসএলের ঠিক আগের ম্যাচেই নর্থ-ইস্টকে ৩-১ গোলে হারানোয় ডার্বি ঘিরে লাল-হলুদের টিকিটের চাহিদাও মারাত্মক।
The Gaffer and Cleiton addressed the media ahead of our first #HeroISL derby in Kolkata.
Watch the full Press Conference 👉 https://t.co/CzX3Xk0ntK#JoyEastBengal #ATKMBEBFC #KolkataDerby #আমাগোমশাল
— East Bengal FC (@eastbengal_fc) October 28, 2022
বাঙালির চিরকালীন প্রতিদ্বন্দ্বিতার ম্যাচের ঠিক আগের দিন টিকিট ঘিরে হাহাকার ছাড়া এই ম্যাচকে ঘরে সত্যিই কি পুরনো ডার্বির মতোই উত্তেজনা আছে? আগে ডার্বির আগের দিন প্র্যাকটিসের পর ব্যারেটো-বাইচুংদের সমর্থকদের ভালবাসার হাত থেকে উদ্ধার করতে কর্তাদের কালঘাম ছুটে যেত। আর এদিন যুবভারতীর প্র্যাকটিস মাঠ থেকে ক্লেটন, ইভানরা যখন বের হচ্ছেন, হাতে গোনা দশজন সমর্থক! সত্যিই কি ডার্বি (ISL Derby) ঘিরে আগের উত্তেজনা আছে?
ডুরান্ডের ডার্বিতে দিমিত্রি ছিলেন না। ফলে মোহনবাগানে (Mohun Bagan) সব থেকেও যেন অনেক কিছু ছিল না। সামান্য কয়েকদিন দলটাকে হাতে পেয়েও ইস্টবেঙ্গল কোচ স্টিফেন কনস্ট্যানটাইন হেরেছিলেন আত্মঘাতী গোলে। এবার সেখানে বেশ কিছু দিন দলটাকে তৈরি করার সুযোগ পেয়েছেন স্টিফেন। মোহনবাগানের আশিক কুরিয়ন, প্রীতম কোটালদের যিনি আবার হাতের তালুর মতো চেনেন। ফলে কাগজে কলমে এগিয়ে বলে শনিবাসরীয় ডার্বিতে হাবাসের মোহনবাগানের মতো এবার ফেরান্দোর বাগানও অনেকটা এগিয়ে থেকে নামবে, এরকম সম্ভাবনা খুবই কম।
জাতীয় দলের কোচ হিসাবে তখন সদ্য এদেশে এসেছেন। ডিফেন্সিভ লাইনের বোঝাপড়া তৈরি করার জন্য সেই সময় ডিফেন্ডারদের কোমরে দড়ি বেঁধে প্র্যাকটিস করাতেন। ইস্টবেঙ্গলের কোচ হওয়ার পর স্টিফেনের কোচিংয়ে এই পুরনো ফর্মুলা অবশ্য এখনও দেখা যায়নি। কিন্তু তাঁর যে ডিফেন্সিভ সংগঠন বরাবরের ভাল, একথা আর নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। আর এই ডিফেন্সিভ সংগঠনেই বারবার করে ফাঁকফোকর তৈরি হচ্ছে মোহনবাগানে। কিন্তু দিমিত্রির অন্তর্ভুক্তিতে শেষ ম্যাচে কেরালার বিরুদ্ধে ৫-২ গোলের ঝড় তোলার পর মোহনবাগানের আক্রমণভাগকে এখন টাইফুনের সঙ্গেই তুলনা করা হচ্ছে। তাহলে কি শনিবাসরীয় ডার্বিতে আন্ডারডগ হিসাবেই শুরু করবে ইস্টবেঙ্গল? মোহনবাগান কোচ ফেরান্দো বললেন, ‘‘সত্যি বলতে নিজের দলকে নিয়ে এতটাই ব্যস্ত ছিলাম, ইস্টবেঙ্গলকে ভালভাবে দেখতে পাইনি। তবে এবারের ইস্টবেঙ্গল কিন্তু আগের বারের চেয়ে ভাল দল।’’
আর এই আশাতেই শনিবার যুবভারতী ভরাতে চাইছেন লাল-হলুদ সমর্থকরা। কারণ, তাঁদের কোচ স্টিফেন কনস্ট্যানটাইন এদিন বলে দিয়েছেন, ম্যাচটা জিতেই ফিরতে চান। সাহেব কোচের এই বক্তব্য যে শুধুই বক্তব্য রাখার জন্য নয়, এটা সবাই বুঝে গিয়েছেন। কিন্তু প্রতিপক্ষ যে মোহনবাগান। খাতায়-কলমে আইএসএলের সবচেয়ে শক্তিশালী দল। কিন্তু ম্যাচটার নাম তো ডার্বি। তাই না কেউ এগিয়ে, না কেউ পিছিয়ে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.