সঞ্জয় সেন: জানি না, ১৯ বছর আগেকার ঘটনা ক’জন মনে রেখেছেন। মনে রাখার কথা হয়তো নয়। ২০০০ সালে শেষবার দিল্লি থেকে ডুরান্ড দিল্লি জিতে ফিরেছিল মোহনবাগান। এবারই প্রথম ডুরান্ড কলকাতায় হচ্ছে। সেই কাপ বাংলার ঘরে থেকে যাওয়ার স্বপ্নে সকলেই মশগুল। আমিও ব্যতিক্রম নই। শনিবার সামান্য হলেও এগিয়ে রাখব মোহনবাগানকে। কারণ, বাগানের মাঝমাঠ। সবুজ-মেরুন শিবিরের মাঝমাঠ যদি হাজার ওয়াটের আলো জ্বেলে বসে থাকে, সেখানে গোকুলাম একশো ওয়াটের বাল্ব। যে আলোতে স্নিগ্ধতা নেই। নেই ঝলমলে আলো। আর মোহনবাগানের চোখ ঝলসানো আলোর ছটাতে সবকিছু ফারাক করে দিচ্ছে। দু’দলের মধ্যে এই ব্যবধান একে অপরকে দুই মেরুতে দাঁড় করিয়েছে। তাই এগিয়ে থাকবে মোহনবাগান।
প্রশ্ন হল, মোহনবাগানের মাঝমাঠ মানেই কী বেইতিয়া? মিডিয়া যেভাবে স্প্যানিশ মিডফিল্ডারকে তুলে ধরেছে তাতে বেইতিয়া ছাড়া যেন অন্য কেউ নেই। মানছি, বেইতিয়া অসাধারণ। ছেলেটার বেশ কিছু গুণ দেখে আমি মুগ্ধ। মাঠের দুই প্রান্তকে কাজে লাগিয়ে প্রতিপক্ষ ডিফেন্সকে চাপে রাখে। চকিতে শট নেয়। সব আছে ছেলেটার মধ্যে। আমি ব্যক্তিগত পুজারী কখনও ছিলাম না। থাকবও না। তাই বেইতিয়ার জন্য বাগানের মাঝমাঠে বৈচিত্র্য রয়েছে তা মানতে রাজি নই। আমি রোমারিও, শেখ সাহিল, ফ্রান গঞ্জালেজদেরও গুরুত্ব দেব। মাঝমাঠের প্রতিটি ছেলে সমান তালে দৌঁড়াচ্ছে। সমান ভাবে জায়গা বদল করে খেলছে। এটাই তো চাই। যে কোনও কোচই চাইবেন। তাই মোহনবাগানের মাঝমাঠকে গুরুত্ব না দিয়ে উপায় নেই। কিন্তু ভয়ের কারণ ডিফেন্স। রিয়াল কাশ্মীরের কাছে শেষ মুহূর্তে যে দল গোল খায়, সেই দলের রক্ষণকে ভাল বলব না। তারচেয়েও বড় কথা, ঘরোয়া লিগে পিয়ারলেসের মতো দলের কাছে তারা কিনা তিন গোল খেয়ে বসেছে। এইসব দৃষ্টান্ত বুঝিয়ে দিচ্ছে, দলের রক্ষণভাগ কত পলকা। আর একটা নেতিবাচক, মোহনবাগানের যাবতীয় কারিকুরি বাঁদিকে। ডানদিক ততটা সচল নয়। কিন্তু আক্রমণ শানাতে গেলে দুটো উইংকে সমানভাবে ঝাঁপাতে হবে। নাহলে আক্রমণ সেভাবে দানা বাঁধে না।
গোকুলাম দলটার বৈশিষ্ট্য ফরোয়ার্ড লাইন। মার্কাস ন’টা গোল করে সাড়া ফেলেছে। একটা টুর্নামেন্টে নগোল করা সহজ নয়। সঙ্গে আবার হেনরি কিসেকা। ইস্টবেঙ্গলের মুখের গ্রাস কেড়ে নিয়েছে উবেইদ। এই গোলকিপারকে ছেড়ে দেওয়া যে ভুল হয়েছে, সেটা বুঝতে পারছে ইস্টবেঙ্গল। সেমিফাইনালে টাইব্রেকারে দলকে জিতিয়ে উবেইদ বুঝিয়েছে, শেষ প্রহরীর ভূমিকায় সে কতটা কার্যকরী। একই ভূমিকায় আজ হেনরিকে দেখব না তো? মোহনবাগান ছেড়ে যাওয়া হেনরি প্রতিশোধের আগুন একইভাবে যদি জ্বেলে দেয় তাহলে অবাক হব না। এমনিতে বড় দলের বিরুদ্ধে মাঝারি মানের দলগুলো মরিয়া মনোভাব নিয়ে ঝাঁপায়। কেউ বলে আমায় দেখ, আবার একজন বলে আমায়। তাই গোকুলামকে আজ জ্বলে উঠতে দেখলে অবাক হব না। কিন্তু একটা মার্কাস দিয়ে বড় যুদ্ধ জেতা যায় না। জানি না ভিকুনা কীভাবে মার্কাসকে থামানোর রণনীতি নেবেন। আমি হলে, জোনাল মার্কিংয়ে যেতাম। পাশের ম্যানকে বলতাম, তুই নজরে রাখবি। যদি প্রথমজনকে কাটিয়ে নেয়, তাহলে তুই আটকাবি। ভিকুনা মনে হয়না এর বাইরে যাবেন। আর সেটা হলে শহরে ট্রফি থাকবে না কেন?
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.