ফাইল ছবি
দুলাল দে, মারগাঁও: করোনার প্রকোপ কাটিয়ে গত মরশুমেও গোয়ার মাটিতে ফাইনাল হয়েছে ইন্ডিয়ান সুপার লিগের। কিন্তু সেই জাঁকজমক ব্যাপারটাই ছিল না, যা এবারের ফাইনালে ‘মোহনবাগান’ নামের উপস্থিতিতে শুরু হয়েছে। করোনা আবহে দর্শকহীন আইএসএল ফাইনালের (ISL Final) কথা ছেড়ে দিন। স্বাভাবিক ভাবেই ফাইনালে উপস্থিত ছিলেন না, এফএসডিএলের চেয়ারপার্সন নীতা আম্বানি। গতবার করোনা আবহ না থাকলেও আইএসএল ফাইনালে পুরস্কার দিতে এসেছিলেন শুধুই এফএসডিএল সিইও মার্টিন। এবার মাণ্ডবীর তীরে মোহনবাগান আর বেঙ্গালুরু নামক দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর দ্বৈরথ ঘিরে গোয়া এতটাই উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে যে ফাইনালে উপস্থিত থাকবেন নীতা আম্বানি। সঙ্গে মার্টিন তো অবশ্যই। এখানেই উপস্থিতির তালিকা সম্পূর্ণ নয়। অন্যতম অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন গোয়ার মুখ্যমন্ত্রী প্রমোদ সাওয়ান্ত। সঙ্গে আমাদের রাজ্যের ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস থাকছেনই।
শনিবার গোয়ায় আইএসএল ফাইনালে অরূপ বিশ্বাসের উপস্থিতি থাকাটা অবশ্য প্রোটোকল মেনে নয়। তিনি আসছেন বাংলার ক্রীড়ামন্ত্রী হিসেবে বাংলার একটি ক্লাবকে সমর্থন জানানোর জন্য। যেমনটা বাংলার ক্লাবকে সমর্থন জানানোর জন্য আসছেন আইএফএর সচিব অনির্বাণ দত্তও। আসলে রনজি, সন্তোষে পর পর ব্যর্থতার পর মোহনবাগানের (Mohun Bagan) আইএসএল ফাইনালে উত্তরণকে সবাই বাংলার ক্রীড়াক্ষেত্রের উত্তরণ হিসেবে দেখতে চাইছেন। আর তাই শনিবার বেঙ্গালুরুর বিরুদ্ধে লড়াইটা শুধুই আর মোহনবাগানের মধ্যে আটকে নেই। তা ছাপিয়ে বৃহৎ অর্থে বাংলার হয়ে গিয়েছে।
মোহনবাগান দলকে নিয়ে দুপুর আড়াইটার দিকে কলকাতা থেকে ইন্ডিগোর বিমানটি যখন গোয়া বিমানবন্দরের মাটি ছুঁলো, লাগেজ বেল্টের দিকে যাওয়ার সময় চোখে পড়ল একপাশে বসে আছেন বেঙ্গালুরু অধিনায়ক সুনীল ছেত্রীর (Sunil Chhetri) স্ত্রী সোনম। সুনীলের বাবা খর্গ ছেত্রী এবং মা সুশীলা ছেত্রী। সামনে দিয়ে হুগো বুমোস, দিমিত্রিরা এক এক করে এগিয়ে যাচ্ছিলেন লাগেজ বেল্টের দিকে। সেদিকে তাকিয়ে ছিলেন সোনম। হুগো বুমোসরা বুঝতেও পারলেন না, সোনমের স্বামীই শনিবার মহারণে মোহনবাগানের সামনে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেন। দূর থেকে দেখে সোনমের সঙ্গে কথা বলার জন্য অবশ্য ছুটে এলেন প্রীতমের বান্ধবী সোনেলা।
বৃহস্পতিবার সকালে যুবভারতীতে ঘন্টাখানেকের হালকা প্র্যাকটিস করেই পুরো দলটা সরাসরি চলে আসে বিমানবন্দরে। দিমিত্রিরা যখন বিমানবন্দরে পৌঁছলেন, তখনও বিমান ছাড়তে প্রায় দেড় ঘণ্টা বাকি। ফলে কোচ জুয়ান ফেরান্দো-সহ ফুটবলাররা যে যাঁর মতো কফিশপে বসলেন। এর আগেও হয়তো হুগো বুমোসরা আইএসএলের অনেক ম্যাচ খেলার জন্য কলকাতা বিমানবন্দর থেকে এদিক ওদিক উড়ে গিয়েছেন। কিন্তু এদিনটায় মোহনবাগান ফুটবলাররা ছিলেন কলকাতা বিমানবন্দরের ভিভিআইপি অতিথি। সামনে যে ভদ্রলোকই আসছেন, ফুটবলারদের হাতটা চেপে ধরে বলছেন, “বেঙ্গালুরুকে হারিয়ে ট্রফিটা কিন্তু কলকাতায় নিয়ে আসতে হবে।”
আই লিগ চলাকালীন সমর্থকদের দাবিটাই ভীষণভাবে চার্জ করে দিত ফুটবলারদের। আইএসএলের আবহে সমর্থক আর ফুটবলারদের মধ্যে গ্যাপটা এতটাই বেড়ে গিয়েছে যে, ফুটবলারদের হাত ধরে এই আকুতি জানানোর সুযোগটাই হারিয়ে গিয়েছে সমর্থকদের। কিন্তু গোয়া আসার পথে কলকাতা বিমানবন্দরে, কখনও আবার মাঝআকাশে সহযাত্রীরাও ফুটবলারদের সঙ্গে সেলফি তোলার পাশাপাশি করলেন সেই এক অনুরোধ- ‘ট্রফিটা কিন্তু জিতে কলকাতায় ফিরতে হবে।’
রয় কৃষ্ণর বিদায়ের পর যে ভাবে পুরো দলটা স্ট্রাইকারহীনতায় ভুগছিল, দিমিত্রির যোগদানের পর সেই কৃষ্ণনির্ভরতা উধাও। মাঝপথে যোগ দিয়ে আপাতত দিমিত্রির নামের পাশে গোল সংখ্যা রয়েছে ১০টি। কলকাতা বিমানবন্দরে কফিতে চুমুক দিতে দিতে দিমিত্রি বলছিলেন, মোহনবাগানে এসেই এই প্রথম স্ট্রাইকারে খেলছেন। এর আগে স্ট্রাইকার পজিশনে কোনওদিন খেলেননি। রাশিয়া বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়া দলে থাকা ফুটবলার দিমিত্রি বলছিলেন, “আমি সেকেন্ড স্ট্রাইকার হিসেবে খেলতে অভ্যস্ত। মোহনবাগানে আসার পর কোচ বললেন, স্ট্রাইকারে খেলতে। ঠিক আছে, ১০টা গোল তো হয়ে গিয়েছে। খেলতে কোনও অসুবিধা হচ্ছে। বরং এনজয় করছি।”
মারাদোনা আর মেসির অন্ধ সমর্থক দিমিত্রির পরই সমর্থকদের ভালবাসার বাড়ানো হাত সবচেয়ে বেশি স্পর্শ করেছেন সেমিফাইনালের হিরো, দলের গোলকিপার বিশাল কাইথকে। তবে মোহনবাগান গোয়ায় পা দেওয়ার পর স্থানীয়দের বেশি আগ্রহ গ্লেন মার্টিন্সকে নিয়ে। বলছিলেন, “আমি যেহেতু গোয়ার ছেলে, বন্ধুরা সবাই টিকিট কেটে আসবে। এখানেই সবুজ-মেরুন জার্সিতে চ্যাম্পিয়ন হতে পারলে তা হবে জীবনের অন্যতম সেরা ঘটনা।” আর এবারের আইএসএল ফাইনাল ঘিরে ভারতীয় ফুটবলের অন্যতম সেরা মুহূর্ত তৈরি করার জন্য চেষ্টার ত্রুটি রাখছে না এফএসডিএল। হাই ফাই অতিথিদের উপস্থিত করানোর পাশাপাশি নজর রাখা হচ্ছে সমর্থকদের দিকেও। তৈরি করা হচ্ছে ফ্যান জোন। যা খোলা থাকবে বিকেল সাড়ে চারটে থেকে সাড়ে ছ’টা পর্যন্ত। যেখানে ফুটবলকে কেন্দ্র করে বিনোদনের ভরপুর ব্যবস্থা থাকবে। উপস্থিত থাকবেন বলিউডের বিখ্যাত ডিজে ‘চেতাস।’ বলিউডের সুরের সঙ্গে গোয়ার স্থানীয় সুরের মেলবন্ধনের জন্য ম্যাচের আগে থাকবে গোয়ার বিখ্যাত ব্যান্ড ‘এ২৬’। এরপরই সেই চির প্রতীক্ষার ফাইনাল। কিন্তু ১৯ হাজার দর্শকের স্টেডিয়ামে টিকিটের চাহিদা কীভাবে মেটানো সম্ভব হবে, সেটাই শুধু জানা যাচ্ছে না।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.