কৃশানু মজুমদার: তিনি বাংলাদেশের ‘দুলাভাই’।পদ্মাপাড়ের ফুটবলে সুভদ্র একজন ফুটবলার হিসেবেই তাঁর পরিচিতি। অল্পস্বল্প বাংলা বলাও অভ্যেস করে ফেলেছেন। বসুন্ধরা কিংসের (Basundhara Kings) তারকা এলিটা কিংসলে (Eleta Kingsley) মোহনবাগানের (Mohun Bagan) বিরুদ্ধে আসন্ন লড়াইয়ের আগে সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটালকে বললেন, ”সমর্থকপূর্ণ স্টেডিয়ামে খেলতে আমরাও পছন্দ করি। জানি বিপুল সংখ্যক মোহনবাগান সমর্থক মাঠ ভরাবেন ২১ তারিখ। তবে সেদিন মোহনবাগান সমর্থকরা মাঠে না এলে ভাল করবেন। বাড়িতে বসেই যেন ওঁরা খেলা দেখেন। ম্যাচের রেজাল্ট দেখে সমর্থকরা হতাশ হতে পারেন। সেই কারণেই বলছি, মাঠে না এলেই ভাল।” দুই বঙ্গের দুই সেরা ক্লাবের মুখোমুখি লড়াইয়ের আগে হুংকার দিলেন বাংলাদেশের নাগরিকত্ব পাওয়া নাইজেরীয় এলিটা কিংসলে। বল গড়ানোর আগেই মোহনবাগানের উপরে মনস্তাত্বিক চাপ শুরু করে দিলেন তিনি।
এএফসি কাপের শুরুটা ভাল করেনি সবুজ-মেরুন ব্রিগেড। গোকুলামের কাছে প্রথম ম্যাচেই হার মানতে হয়েছে জুয়ান ফেরান্দোর দলকে। মোহনবাগান রক্ষণের রক্তাল্পতা প্রকট হয়ে গিয়েছে। অন্যদিকে জয় দিয়ে অভিযান শুরু করেছে বসুন্ধরা কিংস। এলিটা কিংসলে বলছেন, ”আমরা এখানে এসেছি এএফসি কাপের পরবর্তী পর্যায়ের টিকিট জোগাড় করার জন্য। আগের বার অল্পের জন্য আমরা নক আউট পর্বে যেতে পারিনি। এবার আর সেই ভুল করতে চাই না।”
গতবছর কিংসলে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব পেয়েছেন। নাগরিকত্ব পাওয়ার পর থেকে কিংসলেকে নিয়ে জোর চর্চা বাংলাদেশে। কিংসলে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব পাওয়ায় লাভবান হচ্ছে তাঁর ক্লাব বসুন্ধরাই। বিদেশি ফুটবলার হিসেবে তাঁকে গণ্য করা হচ্ছে না। দেশীয় ফুটবলার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে তাঁকে। কিংসলে অবশ্য বলছেন, ”বিষয়টা নাগরিকত্ব নিয়ে নয়। আমরা কোচের উপর নির্ভর করি, কোচের সিদ্ধান্তকে শ্রদ্ধা করি। কোচ যে স্ট্র্যাটেজি তৈরি করে দেন, সেই অনুযায়ী আমরা খেলে থাকি। যে কোনও টুর্নামেন্টে আমরা জেতার জন্যই খেলতে নামি। জেতাটাই আমাদের উদ্দেশ্য।আমাদের লক্ষ্য।”
কিন্তু নিজের দেশ নাইজেরিয়া ছেড়ে বাংলাদেশের নাগরিক কেন হলেন? বসুন্ধরা কিংসের তারকা ফুটবলার বলছেন, ”দুটো কারণ। প্রথমত আমার পরিবার আছে বাংলাদেশে। দ্বিতীয়ত বাংলাদেশকে ভালবাসি, তাই নাগরিক হয়ে যাই এই দেশের।” ২০১১ সালে আরামবাগ ক্রীড়া সংঘের হয়ে খেলার জন্য বাংলাদেশে আসেন। তার পরে প্রায় এক যুগ হতে চলল কিংসলের ফুটবল পরিক্রমা চলছে। বাংলাদেশের ফুটবলে বেশ পরিচিত মুখ তিনি।
২০১২ সালের ২০ মে বিয়ের পিঁড়িতে বসেন কিংসলে। তাঁর স্ত্রী লিজার সঙ্গে দশ বছর সংসার করা হয়ে গিয়েছে কিংসলের। লিজা ও কিংসলের সেই রূপকথা নিয়েও কম কালি খরচ হয়নি বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমে। জনশ্রুতি বলে, ঝগড়া হলে লিজা বা কিংসলে কেউই নাকি মন খুলে ঝগড়া করতে পারেন না। লিজা ইংরেজিতে খুব একটা দক্ষ নন। আবার কিংসলে খুব ভাল বাংলা বলতে পারেন না। ফলে দাম্পত্য জীবনে ঝগড়া হয় একপেশে। সেই ঝগড়ায় কি আর মজা আছে! কিংসলে অবশ্য বলছেন, ”আমার পরিবারের লোকেরা ইংরেজিতেই কথা বলে। প্রত্যেকে ভাল ইংরেজি বলতে পারে।”
এএফসি কাপে মোহনবাগানের বিরুদ্ধে কিংসলে নামবেন শনিবার। অতীতে এই বঙ্গের আরেক ক্লাব ইস্টবেঙ্গলের জালে বল জড়িয়েছিলেন তিনি। শেখ কামাল গোল্ড কাপে চট্টগ্রাম আবাহনী মাটি ধরিয়েছিল লাল-হলুদ শিবিরকে। কিংসলের জোড়া গোলেই ইস্টবেঙ্গল ১-৩ গোলে হার মানে সেই ফাইনালে। কিংসলে বলছিলেন, ”সেই সময়ে র্যান্টি মার্টিন্সের সঙ্গে কথা হয়েছিল আমার।” বিপক্ষকে গোল দিতে পারদর্শী তিনি। সবুজ গালচেতে তাঁর দৌরাত্ম্য সামলাতে হিমসিম খান প্রতিপক্ষের ফুটবলাররা। কিন্তু মাঠের বাইরে তিনি পুরোদস্তুর শান্ত মানুষ। এএফসি কাপের প্রসঙ্গ উঠলেই তাঁর রক্তের গতি বেড়ে যায়। সেটা বোঝাই যাচ্ছিল কথা বলার সময়ে। চোয়াল শক্ত করে কিংসলে বলছিলেন, ”মোহনবাগানকে আমরা আগেও দেখেছি। খুবই শক্তিশালী দল। তবে গ্রুপে বসুন্ধরাই সবচেয়ে শক্তিশালী। আমাদের থেকেই বাকিরা পয়েন্ট কাটার চেষ্টা করবে। আমরাও তৈরি।”
২০ মে কিংসলের বিবাহবার্ষিকী। তার পরের দিনই মোহনবাগানের বিরুদ্ধে নামছে বসুন্ধরা। বিবাহ বার্ষিকীতে কী উপহার দিতে চান স্ত্রী লিজাকে? কিংসলে দুষ্টু হাসি মুখে ঝুলিয়ে বলছেন, ”তিন পয়েন্ট গিফট দেব লিজাকে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.