ছবি: মোহনবাগান সোশাল মিডিয়া।
দুলাল দে: জেসন কামিংসের মতো ফুটবলার কলকাতায় আসবেন? সত্যি মোহনবাগানের জার্সি পরতে কলকাতায় আসছেন তিনি? যে মুহূর্তে অস্ট্রেলিয়ান বিশ্বকাপারের কলকাতায় আসার খবর ছড়িয়েছিল, সবুজ-মেরুন সমর্থকরা শুরুতে বিশ্বাসই করতে পারছিলেন না, সত্যিই শেষ পর্যন্ত আসবেন তো অস্ট্রেলিয়ান স্ট্রাইকার? গত মরশুমে এলেন, দেখলেন, জয় করলেন। কিন্তু এই মরশুমে বেশিরভাগ ম্যাচেই আসতে হচ্ছে বিকল্প ফুটবলার হিসেবে। এরকম নানা বিষয নিয়ে সংবাদ প্রতিদিনের মুখোমুখি জেসন কামিংস।
প্রশ্ন : এটা কিন্তু সকলেরই প্রশ্ন। গত মরশুমের কামিংসকে এই মরশুমে বিকল্প ফুটবলার হিসেবে কেন দেখতে হচ্ছে ?
কামিংস : এই তথ্য হয়তো ব্যক্তিগত ভাবে আমার জন্য ভাল নয়। কিন্তু অন্য দিক থেকে দেখলে দলের জন্য কিন্তু ভাল।
প্রশ্ন : কীরকম ?
কামিংস : সকলের মধ্যে একটা স্বাস্থ্যকর প্রতিযোগিতা চলছে। সবাই জানে, ভাল না খেলতে পারলে জায়গা চলে যাবে। আমার তো মনে হয়, আমাদের থেকে কোচ মোলিনার জন্য প্রথম দল গঠন করাটা আরও বেশি কঠিন কাজ। কাকে বসাবেন, আর কাকে নামাবেন, ঠিক করতে গিয়ে সবচেয়ে সমস্যায় তিনি পড়েন।
প্রশ্ন : ম্যাকলারেনের সঙ্গে আপনার লড়াইটাতো দেখছি পিছু ছাড়ছে না। কে সুযোগ পাবেন প্রথম দলে, আগে ছিল জাতীয় দলে লড়াই। এখন এই লড়াইটা চলে এসেছে মোহনবাগানে।
কামিংস : (হেসে উঠলেন) আগেই তো বললাম। অত্যন্ত স্বাস্থ্যকর প্রতিযোগিতা। এটা শুধু আমার আর ম্যাকলারেনের সুবিধা নয়। উপকার পাবে পুরো দল। আর শুধু ম্যাকলারেন বা আমার লড়াই নয়। গ্রেগ, ম্যাকলারেন, দিমিত্রি সবার সঙ্গে জায়গা পাওয়ার লড়াই করতে হচ্ছে। এতেই বোঝা যায় আমাদের দলের গভীরতা।
প্রশ্ন : দু’বছরে তিনজন আইএসএল চ্যাম্পিয়ন কোচের অধীনে খেলে ফেললেন। ফেরান্দো, হাবাস আর মোলিনা। কোচিং স্টাইল বা অন্য কোনও দিক থেকে এই তিন কোচের মধ্যে কাউকে এগিয়ে পিছিয়ে রাখবেন?
কামিংস : তিনজনেই স্প্যানিশ কোচ হওয়ায়, স্টাইলের দিক থেকে কোথাও একটা সাযুজ্য থাকবে। কিন্তু তারমধ্যেই পরিকল্পনায়, স্ট্র্যাটেজিতে কিছু তো পার্থক্য থাকবেই। এবার কে এগিয়ে, কে পিছিয়ে আমার পক্ষে একজন ফুটবলার হয়ে মন্তব্য করা সত্যিই কিন্তু বেশ সমস্যার। যে কোচের অধীনেই খেলি , সব সময় আমার সেরাটা দেওয়ারই চেষ্টা করব। বর্তমান দলের ফুটবলার হয়ে কোনও কোচের স্ট্র্যাটেজি নিয়ে প্রকাশ্যে মন্তব্য করতে পারি না।
প্রশ্ন : ফেরান্দোর সময়ে গত মরশুমে দলের ড্রেসিংরুমটা কিন্তু ঘেঁটে ‘ঘ’ হয়ে গিয়েছিল।
কামিংস : ভাল পারফরম্যান্সের জন্য দলের ড্রেসিংরুমের পরিবেশ ঠিক হওয়াটা খুবই জরুরি। দলের স্পিরিটটা শুরু হয় ড্রেসিংরুম থেকেই। আমাদের এখনকার ড্রেসিংরুম নিয়ে সবাই দারুণ খুশি। সবাই মজা করছে। মন খুলে কথা বলছে। মাঠের ভিতর সবাই যে পরিমাণে পরিশ্রম করছে, তারপর ড্রেসিংরুমের পরিবেশ ফুরফুরে থাকাটা ভীষণই জরুরি।
প্রশ্ন : সমর্থকরা তো আর আপনাদের ড্রেসিংরুমে ঢুকতে পারেন না। কিন্তু সবাই জানতে চান, আপনাদের ড্রেসিংরুমের নেতা কে?
কামিংস : (হেসে উঠে) মাঠের ভিতর নেতা হচ্ছে ক্যাপ্টেন। কিন্তু মোহনবাগান ড্রেসিংরুমে একজনই লিডার, জেসন কামিংস। সবাই আমার কথা শোনে (হাসি)। সবার খোঁজ খবর আমিই নিয়ে থাকি।
প্রশ্ন : সাফল্যর ধারাবাহিকতার দিক থেকে বলতে গেলে মোহনবাগান এই মুহূর্তে দেশের এক নম্বর দল। তারপরেও এএফসি খেলতে পারছেন না। খারাপ লাগছে না?
কামিংস : গত মরশুমে আমরা লিগ-শিল্ড চ্যাম্পিয়ন। এই মুহূর্তে আমরা লিগ টেবিলের এক নম্বর দল। স্বাভাবিক ভাবেই আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতাতেও দারুণ খেলব, এটাই ইচ্ছে ছিল। সেক্ষেত্রে এএফসি খেলতে পারছি না বলে খারাপ তো লাগবেই। কারণ, দেশের ফুটবলে আমরাই সেরা।
প্রশ্ন : নিজেদের সেরা বলছেন। তাহলে মোহনবাগানের বাইরে অন্য আর কোন দল চ্যাম্পিয়নশিপের লড়াইয়ে থাকতে পারে বলে মনে করছেন?
কামিংস : গত মরশুমের সঙ্গে এই মরশুমের আইএসএলের অনেক পার্থক্য রয়েছে। গত মরশুমে মোহনবাগানের পাশে মুম্বই, গোয়া শুরু থেকেই চ্যাম্পিয়নশিপের দাবিদার ছিল। এবার কিন্তু আইএসএলের পরিস্থিতিটা অন্যরকম। প্রত্যেকটি দলের যা মান, তাতে সব দলই চ্যাম্পিয়নশিপের দাবিদার।
প্রশ্ন : তার মানে বলছেন, এই মরশুমে ইস্টবেঙ্গলও আইএসএলে চ্যাম্পিয়ন হতে পারে?
কামিংস : (হেসে উঠে) না। না। ইস্টবেঙ্গলকে চ্যাম্পিয়নশিপের দৌড়ের বাইরে রাখুন।
প্রশ্ন : গত মরশুমেও ইস্টবেঙ্গলকে দেখেছেন। এই মরশুমেও দেখছেন। কোন দলটাকে ভাল বলে মনে হয়?
কামিংস : আমার তো এই মরশুমের ইস্টবেঙ্গলকে বেশি শক্তিশালী মনে হয়।
প্রশ্ন : তাহলে এই মুহূর্তে ইস্টবেঙ্গল লিগ টেবিলের শেষতম স্থানে কেন রয়েছে বলে মনে হয়?
কামিংস : আমি অন্য দলের ফুটবলার। প্লিজ এই ব্যপারে আমি কোনও মন্তব্য করব না।
প্রশ্ন : ভারতীয় দলের শেষ ম্যাচে গুরপ্রীতকে গোলকিপিং করতে দেখেছেন?
কামিংস : না। ম্যাচটা দেখা হয়নি। তবে টুকরো টাকরা ঘটনা শুনেছি।
প্রশ্ন : এরপরেও আপনার মনে হয় না, বিশাল কাইথের জাতীয় দলে খেলা উচিত?
কামিংস : কে কী বলছেন, জানি না। বিশাল এই মুহূর্তে ভারতের এক নম্বর গোলকিপার। মোহনবাগানের এত সাফল্যর পিছনে বিশালের অনেকটাই ভূমিকা। স্বাভাবিক নিয়মেই বিশালের জাতীয় দলের হয়ে খেলা উচিত।
প্রশ্ন : মোহনবাগান মাঠ আর যুবভারতীর বাইরে কলকাতায় আর কোথাও ঘুরে দেখেছেন?
কামিংস : কলকাতায় আমার একটা ফেভারিট জায়গা রয়েছে। নিউ মার্কেট।
প্রশ্ন : সেখানে তো মারাত্মক ভিড়।
কামিংস : মানুষের মধ্যে থাকতেই তো আমার ভালো লাগে। ফ্যানরা ঘিরে ধরে। ভালোবাসা দেখায়। পুরো ব্যাপারটাআমাকে ভীষণ চার্জ করে। এছাড়াও বান্ধবী ‘হানা’কে নিয়ে সিনেমা দেখতে যাই।
প্রশ্ন : বান্ধবীর নাম ‘হানা’ হলে, আপনার ডান হাতের ট্যাটুতে ‘ওহানা’ কেন লেখা আছে?
কামিংস : (ট্যাটুর দিকে তাকালেন) ওহানা মানে পরিবার। আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
প্রশ্ন : আপনাকে নিয়ে সমর্থকদের মনে কিন্তু একটা কৌতুহল রয়েছে।
কামিংস : কী বলুন তো?
প্রশ্ন : সামান্য ছুটি পেলেই আপনাকে কোথাও ঘুরতে চলে যেতে দেখা যায়?
কামিংস : বান্ধবী আর আমি দু’জনেই ঘুরতে যেতে ভালোবাসি। ঘুরতে গেলে মানসিকভাবে ফ্রেশ হওয়া যায়। তাতে পরের কাজের জন্য মানসিকভাবে ফের নতুন করে তৈরি হওয়া যায়।
প্রশ্ন : কাতার বিশ্বকাপে মেসির সঙ্গে যে ছবিটা দিয়েছিলেন, সেটা মেসির ফ্যান হওয়ার জন্য?
কামিংস : না, না। সেই কারণে নয়। আর্জেন্টিনার বিরুদ্ধে আমাদের ম্যাচ ছিল। মেসির সঙ্গে মাঠে ছবিটা তোলার সুযোগ হয়েছিল। তাই দিয়েছিলাম।
প্রশ্ন : কিন্তু আপনার বেশি পছন্দের কে, মেসি না ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো?
কামিংস : অবশ্যই মেসি। তবে রোনাল্ডোও আমার দারুণ ফেভারিট।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.