সুলয়া সিংহ: মাঠে যাঁরা ফুটবলের জন্য গলা ফাটান, তাঁরাই এবার ময়দানে নেমে হয়ে উঠলেন ফুটবলারদের পরিত্রাতা। কেউ আবার আমফান বিধ্বস্ত মানুষগুলির জীবনের ‘মাসিহা’য় পরিণত হলেন। এককথায়, লকডাউনের মধ্যে মানুষকে সাহায্য করতে কোনও কার্পণ্য করলেন না ফুটবল পাগলরা। আর সেই সুবাদেই শিরোনামে উঠে এল বারাকপুর মোহনবাগান ফ্যানস ক্লাব, হাওড়া মেরিনার্স এবং ‘সবুজে মেরুনে স্বপ্নের উড়ান’।
আফ্রিকান মুখগুলো ময়দানের অতি পরিচিত। আফ্রিকার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এঁরা প্রতি বছরই কলকাতায় আসেন ফুটবলের টানে। সেটাই তাঁদের উপার্জনের মূল উৎস। বিভিন্ন ছোট-খাটো ক্লাবে খেলে, নানা টুর্নামেন্টে অংশ নিয়ে আয় করেন তাঁরা। মরশুম শেষে ফিরে যান পরিবারের কাছে। কিন্তু করোনার জেরে লকডাউনে বদলে গিয়েছে ছবিটা। মাঠে বলও গড়াচ্ছে না। আবার দেশে ফেরারও উপায় নেই। গচ্ছিত অর্থও প্রায় শেষ। কোনওক্রমে কাটছে দিন। এমন পরিস্থিতিতে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিল বারাকপুর মোহনবাগান ফ্যানস ক্লাব ও হাওড়া মেরিনার্স ব্রিগেড। দু’মাসেরও বেশি সময় লেকটাউন ও কেষ্টপুরে আটকে পড়া এমন ৩০ জন বিদেশি খেলোয়াড়ের কাছে খাদ্য সামগ্রী ও নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস পৌঁছে দিলের সদস্যরা।
এমন দুর্দিনে আটকে পড়া আফ্রিকান ফুটবলারদের পাশে দাঁড়াতে পারায় ভাল লাগছে মোহনবাগান ফ্যান ক্লাবের সদস্যদেরও। কর্মকর্তাদের কথায়, নেতা-মন্ত্রীরা সকলেই নানা কাজে ব্যস্ত। তাঁদেরও বহু জায়গায় ত্রাণের ব্যবস্থা করতে হচ্ছে। তাই খেলার মাঠের শুভাকাঙ্ক্ষীদেরই খেলোয়াড়দের পাশে দাঁড়ানো উচিত। সেই ভাবনা থেকেই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া। এই কাজে অন্যদেরও এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন তাঁরা। ক্লাবের এক কর্তা বলেন, “কেউ চাইলে আমাদের কাছে সাধ্যমতো খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দিতে পারেন। আমরা সেসব জিনিস ১৪ জুন আটকে পড়া ফুটবলারদের কাছে পৌঁছে দেব।”
সমাজসেবামূলক কাজে পিছিয়ে নেই মোহনবাগানের ফ্যানস ফোরাম ‘সবুজ মেরুন স্বপ্নের উড়ান’ও। গত ৯ সপ্তাহ ধরেই গরিব-দুস্থদের খাবারের ব্যবস্থা করছে তারা। মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলেও ক্লাব সদস্যরা দিয়েছেন ২০ হাজার টাকা। একই সঙ্গে গঙ্গাপারের ক্লাবের প্রাক্তন কোচ কিবু ভিকুনার আবেদনে সাড়া দিয়েও সাধারণের পাশে দাঁড়ায়। কলকাতার পাততাড়ি গুটিয়ে পোল্যান্ডে ফিরে গেলেও সুপার সাইক্লোন আমফানে বিধ্বস্ত বাংলার জন্য ব্যথিত হয়েছিলেন স্প্যানিশ কোচ। সর্বহারাদের সাহায্যের আরজি জানিয়েছিলেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। কোচের ইচ্ছাপূরণ করে বেলগাছিয়া, টিকিয়াপাড়া, জুমুরজোলা-সহ নানা প্রান্তে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দেন তাঁরা। রাজ্যের আমফান বিধ্বস্ত আরও এলাকায় ত্রাণ পৌঁছে দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে তাঁদের।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.